ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাউলা কে বানাইলো রে...

আবু আফজাল মো. সালেহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
বাউলা কে বানাইলো রে...

‘বাউলা কে বানাইলো রে,’ ‘কান্দে হাছন রাজার মন মনিয়ারে’, ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা না আমার’ অথবা ‘সোনা বন্ধে আমারে দেওয়ানা বানাইলো’, ‘নিশা লাগিলো রে’ এমন কালজয়ী ও জনপ্রিয় গানের রচিয়তা লোককবি হাছন রাজা।
 
দেশবিখ্যাত মরমী সাধক হাছন রাজার জন্ম ভিটা সিলেট বিভাগের জেলা হাওরাঞ্চলের সুনামগঞ্জে।

যার গান শুনে আমাদের বেড়ে ওঠা সেই হাছন রাজার জন্মভূমি দেখার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন ধরেই।

তাই সম্প্রতি সিলেটে বদলি হওয়ার সুবাদে পরিকল্পনা করলাম হাছন রাজার বাড়িতে যাওয়ার। যেই ভাবনা সেই কাজ...কোনো এক ছুটির দিনে চলে গেলাম সুনামগঞ্জে।

বাংলাপিডিয়া অনুসারে, হাসন রাজার জন্ম ১৮৫৪ সালের ২৫ জানুয়ারি (৭ পৌষ ১২৬১) সেকালের সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে।

তার বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। মায়ের নাম হুরমত বিবি। জন্মের পর হাছনের বাবা দেওয়ান আলী রাজা তার নাম রাখন অহিদুর রাজা। পরবর্তীতে হাছন রাজা নামেই পরিচিতি লাভ করেন সুদর্শন এই মরমি কবি।

আর ১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন নিজেকে গানের ভণিতায় ‘পাগলা হাছন রাজা’, ‘উদাসী’, ‘দেওয়ানা’,  ‘বাউলা’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করা সৌখিন এই বাউলশিল্পী।

সম্প্রতি স্বশিক্ষিত হাছন রাজার বাড়িটি ‘হাছন রাজা জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

জাদুঘরে গেলেই হাছন রাজার সৌখিনতার পরিচয় পাওয়া যাবে। সেখানে সংরক্ষিত আছে-জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ।

হাছন রাজার ব্যবহৃত আলখাল্লা, গ্রামোফোন, লাঠি, কলম, আলমারি, টেবিল, চেয়ার, গেঞ্জি, ডুগি, তবলা, বাক্স, পশুরিপাগড়ি, খড়ম, কোর্তা, পাঞ্জাবি, ঢাল, তরবারি, বাসন দেখা মেলবে।

এছাড়া তার হাতের লেখা বিভিন্ন গান ও কবিতার পাণ্ডুলিপি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ ও বিমোহিত করবে। আর ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে নিজেকে ধন্যও মনে হবে।

সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়ার সুরমা নদীর সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মনকে আরও রাঙিয়ে দেবে। অনেকেই সেখানে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে যান। যা না দেখলে হয়তো কল্পনা করা যাবে না।

সুনামগঞ্জ পৌরশহরের গাজীর দরগা নামে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের পাশে শায়িত আছেন লোককবি হাছন রাজা।

হাছন রাজা জাদুঘরে প্রবেশ ফি মাত্র ১০ টাকা।  

কীভাবে যাবেন:
হাছন রাজার বাড়িতে যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে সিলেটে। এরপর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে সুনামগঞ্জ নতুন বাস টার্মিনাল। এরপর তিনচাকার অটো রিকশায় ট্রাফিক পয়েন্ট। সেখান থেকে রিকশা বা পায়ে হেঁটে তেঘরিয়া।

সুনামগঞ্জ শহরে থাকা-খাওয়ার অনেক হোটেল রয়েছে। বাজেট অনুসারে পছন্দমতো জায়গা থাকতে পারেন সুনামগঞ্জে।

সুনামগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় জায়গা:
সুনামগঞ্জের আরেক মরমী কবি শাহ আব্দুল করিমের জন্মভিটা জেলার দিরাই উপজেলায়। কালনী নদীর তীরে উজান ধল গ্রামেই জন্মেছিলেন ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’র স্রষ্টা আবদুল করিম।

আছে দেশের বৃহত্তম হাওর ‘টাঙ্গুয়ার হাওর’। বর্ষায় দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি সবাইকে বিমুগ্ধ করে।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক।

আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-bntravellers.botebook@gmail.com.

 বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
আরএইচএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।