রাঢ়িখাল থেকে ফিরে: রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি উপলক্ষে তার লেখা চিঠি, হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, তাকে লেখা রবি ঠাকুরের চিঠি, ক্রেসমোগ্রাফের ছবি, রয়্যাল সোসাইটিতে দেওয়া বক্তৃতার কপি, তার পোট্রেটসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো ছোট একটি রুম।
এসব জিনিসপত্র যার স্মৃতি তুলে ধরছে, সেই বিখ্যাত ব্যক্তিকে চিনতে অনেকেরই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তিনি শুধু উদ্ভিদের প্রাণই নয়, আবিষ্কার করেছিলেন প্রথম বেতার যন্ত্রও। তবে তিনি নিজের নামে তা পেটেন্ট করাতে পারেননি। এ প্রসঙ্গ আজ থাক, আমরা বরং এ মনীষীর পৈতৃক নিবাস থেকে ঘুরে আসি।
জগদীশ চন্দ্রের পৈতৃক নিবাস ছিলো ঢাকার অদূরে তৎকালীন বিক্রমপুরের রাঢ়িখালে, যা বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার অন্তর্গত। বিজ্ঞানীর পৈতৃক নিবাসের ত্রিশ একর জায়গায় তার নামে নির্মাণ করা হয়েছে কলেজ ও কমপ্লেক্স। ‘জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্স’-এ বিজ্ঞানীর নানা স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে মিনি জাদুঘর, নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম পাহাড়-ঝরনা, পশু-পাখির ম্যুরাল, সিঁড়ি বাধানো পুকুর ঘাট।
কমপ্লেক্সের আকর্ষণীয় দিক হলো, এর প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রবেশ করতেই শান্ত-শীতল পরিবেশে মনটা জুড়িয়ে আসে। ছোট পরিসরের এ কমপ্লেক্সে রয়েছে একশোজনের জন্য পিকনিকের ব্যবস্থা। নাগরিক কায়ক্লেশ থেকে মুক্তি খুঁজে পেতে ঢাকা থেকে ৩৫ কিমি দূরের এ স্থানটি হতে পারে বেড়ানোর জন্য ভালো একটি জায়গা।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিখ্যাত এ বিজ্ঞানীর বাড়িতে আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বেড়াতে এসেছেন। বিজ্ঞানীর নানা অর্জনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন তারা।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেড়াতে আসা মুন্সীগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহরিয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখছি। আমাদের এলাকার বিশ্ববিখ্যাত যে কয়েকজন মনীষী রয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বোস, তাই এখানে এসেছি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষের উদ্যোগে ২০১১ সালে নির্মিত কমপ্লেক্সটি চলছে জে. সি. বোস ইনস্টিটিউশনের নিজস্ব উদ্যোগে। কমপ্লেক্সের দুইশো বছরের প্রাচীন বাড়ির ছোট্ট একটি কক্ষেই গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে বিজ্ঞানী বোসের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন। সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়েছে মিউজিয়াম ঘরটি।
রাঢ়িখাল স্যার জে. সি. বোস ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র কর্মকার জানান, প্রায় শত বছর আগে জে. সি. বোস ও তার স্ত্রীর ইচ্ছায় এখানে চালু করা হয়েছিলো মন্দিরভিত্তিক পাঠশালা। পরবর্তীতে সেটি কলেজ হয়েছে কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় পুরনো ভবনগুলো ভেঙে পড়ার দশা।
তবে সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঢাকা থেকে স্যার জে. সি. বোসের বাড়ি দেখে ফিরে আসা যাবে দিনের মধ্যেই। সকালে ঢাকার গুলিস্তান কিংবা যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়াগামী বাসে উঠে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। বাসস্ট্যান্ডে নেমে অটোরিকশা, ভ্যান কিংবা অন্য যেকোনো পরিবহনে করে চলে যাওয়া যাবে রাঢ়িখালে স্যার জগদীশ চন্দ্রের পৈতৃক বাড়ি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এইচআর/এসএস