ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

রুংরাং কির্সতং অভিযান-৪

রুংরাং মানে ধনেশ পাখির পাহাড়ে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
রুংরাং মানে ধনেশ পাখির পাহাড়ে ছবি: জুয়েল থিওটোনিয়াস/ঠাকুর বিলাস

[পূর্ব প্রকাশের পর]
মোটামুটি বিভীষিকার এক রাত পার করেছি। পাহাড়ে এসে এর আগে কখনো শরীর খারাপ লাগেনি।

কিন্তু এ রাতে বমি হয়েছে। ঠিকমতো ভাতও খেতে পারিনি। এর প্রভাবে রাতে ভালো ঘুমও হয়নি। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে গেছি মাত্র। তার উপর এই ১৮০০-২০০০ ফিট উপরে ভালো বাতাসও ছিলো। বেশ ঠান্ডাও পড়েছিলো। সব মিলিয়ে রাতটা ভালো যায়নি।

অবশ্য নির্ঘুম রাত দারুণ এক জিনিস উপহার দিয়ে গেছে। ঘুম না আসায় ঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছিলাম একবার। আকাশের দিকে তাকিয়ে মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়। নক্ষত্রখচিত এক অপার্থিব আকাশ ভুলিয়ে দিলো নির্ঘুম রাতের যন্ত্রণা। কে নেই সেখানে। নক্ষত্র ছায়াপথ মণ্ডলীর সব সদস্য রীতিমতো সভা বসিয়েছে। তাদের পায়ের কাছে এ মর্তের ছোট্ট পাহাড়ি পাড়ায় বসে আমি যেন তাদের ভৃত্য মাত্র।

রাতটা কোনোমতে কাটিয়ে সকালে আবার বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। কিছু খেতে ইচ্ছে করছিলো না। দুটি বিস্কুট আর এক ঢোক পানি খেয়ে বের হলাম সারাদিনের জন্য। লক্ষ্য রুংরাং আর কির্সতং পাহাড় চূড়া। সামিট করে কোন দিক দিয়ে বের হবো তাও ঠিক করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে যাবে খনরুই।

অনেক কষ্টে তাকে রাজি করানো গেছে। বিদায় নিলো লিউ ল আর মাঙিয়াঙ্গ। জুমের কাজ ফেলে সে আমাদের সঙ্গে চলেছে পথ দেখাতে। মেনিয়াঙ্ক পাড়া থেকে একেবারে খাঁড়া একটি রাস্তা চলে গেছে রুংরাং পাহাড়ের চূড়ায়। এই রাস্তা আসলেই খাঁড়া। দিনের প্রথম ঘণ্টার ট্রেকিং একটু কঠিন হয়, শরীর মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার থাকে। তার উপর আবার একটানা খাঁড়া রাস্তা।

সকালের ঠান্ডা আবহাওয়া, রোদ মাথার উপরে ওঠেনি। চল্লিশ মিনিটের মধ্যেই রুংরাংয়ের কাছাকাছি একটি জায়গায় বসে জিরিয়ে নিলাম। এখান থেকে একটি রাস্তা গেছে চূড়ার দিকে অন্য একটি রাস্তা সোজা গেছে নীচের কাঞ্চন পাড়ার দিকে। ওই রাস্তা ধরে আমরা কির্সতংয়ের দিকেও যাবো।

পানি পানের ফাঁকে নজরে এলো নীচে চারপাশের বার্ডস আই ভিউ। এখন আমরা অনেকটা উপরে। চারপাশের প্রকৃতি সকালের নির্জনতায় ডুবে আছে। দ‍ূরের পাহাড়ে মাত্র লাগলো প্রথম সূর্যের আলোর ছটা। ফুরফুরে হাওয়াও ছেড়েছে। চারপাশে গাছগুলোয় লাল ফুল ফুটে আছে। এ পাহাড়ের নাম রুংরাং মানে ধনেশ পাখির পাহাড়। অথচ এ অবধি একটি পাখিও নজরে আসেনি। পাহাড়ি মানুষের শিকার অভ্যাস এর জন্য অনেকাংশে দায়ী হলেও তারা যাতে শিকার না করে তার ব্যবস্থা করাটাও জরুরি।

বাঁশবনের ভেতরে দিয়ে উপরে রাস্তা ধরে এগোতে এগোতে পথ হারানোর উপক্রম। এ সময়টা পাহাড় খটখটে থাকে, মরে যেতে থাকে ছোট আগাছা। কিন্তু এ যাত্রায় ব্যাটারা ভালোই জ্বালালো। ২০, ২৫ মিনিট হাঁটার পর উঠে এলাম রুংরাংয়ের চূড়ায়। কিন্তু চূড়া থেকে চারপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারপাশের গাছপালা এমনভাবে চেপে ধরেছে যে তার ফাঁক গলে ছবি নেওয়াও সম্ভব না।

এর আগে এখানে আসা ট্রেকারদের জিপিএসে এ চূড়ার উচ্চতা পাওয়া গেছে ২৭৯৮ ফুট এবং ৮৬৩ মিটার। এ উচ্চতা পাহাড়ের নিরিখে খুব বেশি না। কিন্তু মেনকিউ পাড়া থেকে পুরো খাড়া ট্রেইল ধরে এ চূড়ায় পৌঁছাতে হয়, এই যা। পাহাড় চূড়ায় উঠে যা করি এবারও তাই করলাম। ছবি নেওয়া, সামিট নোট লিখে রাখা। একটি বোতলে আগের দলগুলোর ছয়টি সামিট নোট পাওয়া গেলো। এখান থেকে গাছের ফাঁক গলে কির্সতং চূড়া দেখা যাচ্ছিলো।

এখানে একটি বড় গর্ত আছে। এটি কিসের বোঝা না গেলেও এর আগে বেশ কয়েকটি পাহাড় চূড়ায় এ ধরনের গর্ত পেয়েছি। প্রায় আধ ঘণ্টা অবস্থান করে আবার নামতে শুরু করলাম। যাবো চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ বিন্দু কির্সতংয়ে।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
এএ

** রুংরাং কির্সতং অভিযান-১

** চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া কির্সতং-রংরাংয়ের পথে

** ভীতিকর পথ, তবু টানে সৌন্দর্য

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।