এথেন্স (গ্রিস) থেকে: গ্রিসের বর্তমান আর্থিক সংকট প্রভাব ফেলেছে গোটা দুনিয়ায়। এ সংকটের কারণে বড় ঝুঁকিতে পড়েছেন এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
যারা রয়েছেন, তারাও অনেকটা দাঁতে কামড় দিয়ে পড়ে আছেন। রয়েছেন প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মাঝে। সংগ্রাম করছেন পরিস্থিতির সঙ্গে।
অর্থনৈতিক মন্দার শুরুটা ১৯৯৯ সালে। ইউরোপজুড়ে অভিন্ন মুদ্রা ‘ইউরো’ চালু হলো। কমতে শুরু করলো ব্যবসার ব্যয়। বিপরীতে বাড়তে থাকলো ব্যবসার বিস্তৃতি।
ইউরোজোন থেকে অর্থ পেলো গ্রিস। সেটা বিনিয়োগ করা হলো মূলত শিল্প। বিশেষ করে ভারী শিল্প এবং সেবা খাতে। যার প্রভাবে ইউরোজোনের কেন্দ্রে থাকা দেশগুলো, যেমন জার্মানির তুলনায় গ্রিসে বাড়তে শুরু করলো মজুরি। যার ফলে রফতানি প্রতিযোগিতার তুলনায় পিছিয়ে পড়তে লাগলো গ্রিস। যে কারণে ঘাটতি বাড়তে শুরু করলো দেশটিতে। বাণিজ্যে ঘাটতির মুখে পড়তে থাকলো দেশটির অর্থনীতি। বেড়ে গেলো উপাদনের চেয়ে ভোগ। ফলে দেশটিকে ঋণ নিতে হয়।
১৯৯৯ সালের শেষের দিকের ৫ শতাংশ থেকে গ্রিসের বাণিজ্যিক ঘাটতি লাফিয়ে লাফিয়ে ২০০৮-০৯ এর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। ঋণ সুবিধা পেতে সরকারিভাবেই আর্থিক রিপোর্টে কারচুপির আশ্রয় নেয় দেশটি। যে কারণে গ্রিসের প্রকৃত অবস্থা আড়ালেই থাকে ঋণদাতা দেশগুলোর কাছে।
এছাড়াও বিনিয়োগের উৎস ছিল ইউরোজোনের দেশগুলো। কিন্তু ক্রমাগত ঋণ গ্রহণ আর ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি বিনিয়োগকারীদের ঠেলে দেয় বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে।
এ চাপের মধ্যেই ২০০৭-০৯ সালে আমেরিকার বাণিজ্য মন্দার ঝড় বয়ে যায় গোটা ইউরোপজুড়ে। যার জেরে গ্রিসে বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি বিনিয়োগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে বিনিয়োগের ব্যর্থ চেষ্টাও চালানো হয়। যার খেসারত দিতে মুদ্রাস্ফীতির আঘাতে জর্জরিত হয় দেশটির অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামলাতে উদ্যোগ নেওয়া হয় ইউরোজোন থেকে বের হয়ে আসার।
মুদ্রা হিসেবে ইউরোর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে না থাকায় মজুরি কমে যায় ২০ শতাংশের মতো। আয় এবং জিডিপি কমার অনিবার্য ফল হিসেবে মন্দায় আক্রান্ত হয় দেশটি। বাড়তে থাকে বেকারত্ব। যে হার এখন ২৫ শতাংশ আর যুবকদের মধ্যে ৫০ শতাংশ। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গ্রিস।
বিশেষ করে ভাগ্য অন্বেষণে দেশটিতে আসা অভিবাসীরা পড়ে যান মারাত্মক সংকটে। অনেকেই ব্যয় কুলিয়ে উঠতে না পেরে বিক্রি করে দেন নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য। সে প্রবণতার চিত্র চোখে পড়ে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে।
অমনিয়া এলাকায় কথা হয় বাংলাদেশের তরুণ ব্যবসায়ী কুমিল্লার কামরুল হোসেনের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি জানান, গ্রোসারি সপ, ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বৈচিত্র্যময় নানা ব্যবসা পেতেছিলেন এ দেশে। সফলও হয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে বেড়েছে ব্যবসার ভলিউম, যা এখন তার জন্য গলার কাঁটা!
কামরুল বলেন, ‘বাংলাদেশি অভিবাসীদের অর্ধেকের বেশি এ দেশ ছেড়ে গেছেন। তারা চাকরি-বাকরি করতেন। কিন্তু আমরা তো করি ব্যবসা। বললেই তো পাততাড়ি গুটিয়ে নেওয়া সম্ভব না। আর আমরা যাবোই বা কোথায়? কার কাছে ফেলে রেখে যাবো এসব ব্যবসা-বাণিজ্য?’
‘এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, ব্যাংকে সঞ্চিত থাকা অর্থও কাউকে ভরসা দিতে পারছে না। কারণ, লেনদেন সীমিত করা হয়েছে। বসানো হয়েছে সার্কিট ব্রেকার! যার ফলে ব্যাংক হিসেব থেকে সপ্তাহে ৪শ’ ৪০ ইউরোর বেশি একটি সেন্টও উত্তোলনের সুযোগ নেই’।
তিনি বলেন, ‘এখন আর লাভ নয়। কেবল বিক্রি করি। মানেটা খুবই সোজা। এখন ব্যবসা করে লাভ দূরের কথা, টিকে থাকাই মুশকিল’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
জেডআর/এএসআর
** গ্রিসে প্রবাসীদের স্বজন প্রকৌশলী জয়নুল আবেদীন
**মন্দার বিপরীতে স্বপ্নে বিভোর জহিরুল
**রোদ চশমায় ভাগ্যবদল আনোয়ারের
** গ্রিক নারীর বাংলাদেশ প্রেম
** উত্তরগুলো কেবল অসহায় চাহনিতেই!
** বিদেশি সতীনেও কষ্ট নেই, আছে সুখ!
** ডিশ ওয়াশার থেকে ২ রেস্টুরেন্টের মালিক আকুল মিয়া
**জার্মানিতে বিয়ে বা দত্তক- এতে যায় কষ্টের বহু অর্থ
**পেট্রোলপাম্পেও নিজের কাজ নিজে করো নীতি
**সততা-একাগ্রতাই এগিয়ে নিয়েছে কাজী সুরুজকে
**‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’
** আস্থার সংকটে বাংলাদেশ–জার্মানি সম্পর্ক!
** বিমানবন্দরে বাংলাদেশের হাসি
** নিজেই মুমূর্ষু জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস