জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) থেকে: শ্যামল আর বাংলা শব্দ দুটোই যেন পরিপূরক এখানে। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় হঠাৎ থমকে যায় চোখ।
জ্বলজ্বলে লেখাগুলো যেন গোটা জেনেভায় প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাদেশ আর বাংলা ভাষাকে।
প্রবাসে বাংলাদেশ মিশনের পরিচিতিটি মূলত ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও দেখা যায়। তবে জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে তেমনটি নেই।
আছে মিশনের ঠিক নিচেই ডিপার্টমেন্ট স্টোর ‘মনসুন’- এ।
স্টোরটির কাচের সাটারে বাংলায় মনসুন লেখা দিয়ে প্রবাসে বাংলা ভাষাকে তুলে ধরে দেশপ্রেমের আলো ছড়িয়েছেন টাঙ্গাইলের শ্যামল খান (৪৭)।
জেনেভায় বাংলাদেশি মালিকানায় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট থাকলেও পরিচিতিটা হয় মূলত ভারতীয় নামে। সেখানে ব্যতিক্রম কেবল ‘মনসুন’। বাংলা ভাষায় পরিচিত একমাত্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এটি।
দূর প্রবাসে অপরিচিত প্রায় বাংলায় পরিচিতি তুলে ধরার কারণ হিসেবে শ্যামল খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বলতে পারেন দেশপ্রেম থেকে। দেশকে ভালোবাসি। তাই মাতৃভাষায় পরিচয়টা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি’।
‘এই প্রবাসে এখন পর্যন্ত প্রথম ও সর্বশেষ হিসেবে আমিই প্রচলন করছি বাংলা ভাষায় দোকানের পরিচিতি। জেনেভায় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। বাংলা ভাষাভাষি মানুষ ছাড়াও ভিনদেশি মানুষদের চোখে পড়ে বাংলা লেখা। তারা পরিচিত হন বাংলার সঙ্গে’।
‘অনেক ক্রেতা কৌতুহল থেকে জিজ্ঞেস করেন, এটা কি ভাষায় লেখা? বলি, বাংলা। আর বলি, বিশ্বে ভাষার জন্যে কেউ প্রাণ দিলে তা আমরাই। তখন গর্বে ভরে ওঠে বুক। এভাবে আমার কাছ থেকেও অনেকে জানতে পারেন বাংলা ভাষার অহংকার’- বলছিলেন শ্যামল খান।
টাঙ্গাইলের পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়ার শাহাদত আলী খানের ছেলে শ্যামল খান। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে চতুর্থ। ভাগ্য পরিবর্তনে ১৯৯১ সালে পাড়ি দেন দেশটিতে।
প্রবাসে শ্যামলের শুরুটা ছিলো বেশ পরিশ্রম আর কষ্টের। একটি রেস্টুরেন্টে যোগ দেন সহকারী বাবুর্চি হিসেবে। দশ মাস কাজ করে সেখান থেকে চলে যান একটি গ্যারেজে। কাজ করে টেকনিশিয়ানের। সেখান থেকে একটি ফাস্টফুডের দোকান হয়ে কাজ নেন এয়ারপোর্টে। প্রথমে লাগেজ ট্রেসিং বিভাগে। পরে কাজ করেন কার্গো ট্রান্সপোর্ট বিভাগে।
২০০৫ সালে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন এই প্রবাসী। রুদালুজানে জেনেভায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনের নিচে বাংলায় পরিচিতি লিখে শুরু করেন ‘মনসুন’ নামের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটির। তারপর থেকে কেবলই এগিয়ে চলা।
দুই বছর পরে চালু করেন তাজ নামের রেস্টুরেন্ট, এয়ারপোর্টে চালু করেন মনসুন নামের দ্বিতীয় ডিপোর্টমেন্টাল স্টোর ও ক্যাফে।
২০০২ সালে শ্যামল বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের শশী খানকে। ইশান (১৪), সুপ্ত (১২) ও অশি (৫) নামের তিন ছেলে নিয়েই এখন প্রবাসে সুখের সংসার তার।
কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ আর কষ্টের বিনিময়ে আজ প্রতিষ্ঠিত শ্যামল। এখন চড়েন বিএমডব্লিও ডি মডেলের গাড়িতে। পাশাপাশি মেলে ধরছেন বাংলাকে। ভিন্নভাবে ভিনদেশে প্রতিষ্ঠা করছেন নিজের মাতৃভাষাকে।
শ্যামলের ভাইয়েরাও দেশে প্রতিষ্ঠিত। ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাঘ বিশেষজ্ঞ। আরেক ভাই নাজমুল হাসান খান যুগ্ম সচিব।
ভবিষ্যতে কনস্ট্রাকশন ফার্ম গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছেন জেনেভায় বাংলা ভাষাকে মেলে ধরা এই প্রবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
জেডআর/এএসআর