হাতিয়া (নিঝুম দ্বীপ) থেকে ফিরে: পায়ের নিচে উত্তাল তরঙ্গের আছড়ে পড়া, শীতল স্পর্শ। মাথার উপরে নীল আকাশে মেঘের ভেলা।
মেঘে ঢাকা নীল আকাশ যেন এখানে উত্তাল ঢেউ তোলা ফেনীল পানিতে মিশে তৈরি করেছে এক নৈসর্গিক দৃশ্য।
অনেকেটা নীরবে-নিভৃতে সাগরের গর্ভ থেকে ধীরে ধীরে জেগে ওঠা মন্ত্রমুগ্ধ এ সৈকতকে শুধু এমন বর্ণনা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের এ নামহীন সৈকতকে উপলদ্ধি করতে চর্মচক্ষে একে দেখার কোনো বিকল্প নেই।
নিঝুম দ্বীপের দমার চরে বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে উঠেছে এ অনিন্দ্যসুন্দর সৈকত। ইংরেজিতে যাকে বলে ভার্জিন সি বিচ। দ্বীপ সংলগ্ন দমার চরের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত সৈকতটি। সমুদ্রের বালু জমে তৈরি সৈকতটি একেবারেই নতুন।
এ দ্বীপের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কেফায়েত উল্লাহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সৈকতের আয়তন প্রায় ৯ কিলোমিটার। তবে সরকারিভাবে সঠিক আয়তন ঘোষণা করা হয়নি।
ভরদুপুরে তার সঙ্গে ওই সৈকতে গিয়ে প্রথম দেখায় এটিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো ঐশর্যময় মনে হলো।
একদিকে অপূর্ব সুন্দর নির্জন সৈকত, অন্যদিকে সাগরের মাঝে জেগে ওঠা চর। এ এক অন্যরকম আবহ। তবে শীত মৌসুমে এ সৈকতের সৌন্দর্য আরেক রুপ ধারণ করে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ সময়টাতে অসংখ্য রং-বেরংয়ের পাখির ওড়াওড়ি ও মধুর কলতানে মুখরিত থাকে এ সৈকত এলাকা। পাড়ের বালুকাবেলায় দেখা মেলে মহিষ, গরু আর ভেড়ার পালের।
সাগরকূলের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, নিঝুম দ্বীপে প্রচুর পর্যটক আসেন। বন আর হরিণের মায়াবীজাল ঘেরা এ সৈকতটি এখন পর্যন্ত বাইরের লোকের নজরে তেমন আসেনি।
তিনি জানান, নিঝুম দ্বীপের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে আসতে হয় দমার চর। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টা দুই।
তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো এ সৈকতে পর্যটকশুন্যতার কারণ। তারা জানান, দমার চর এলাকায় দস্যুদের বসবাস রয়েছে। এ কারণে সৈকতে পর্যটকরা যেতে পারেন না। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে যত্নশীল হলে সৈকতটি জমে উঠবে বলে তাদের মত। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারাও উপকৃত হবেন।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বন কর্মকর্তা নূরে আলম হাফিজ জানান, বন বিভাগ, কোস্টগার্ড মিলে নিঝুম দ্বীপ এলাকার দস্যুতা রোধে কাজ করে যাচ্ছে।
হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন জানান, নিঝুম দ্বীপ ও সৈকত নিয়ে তাদের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে পর্যটকমুখরিত হয়ে উঠবে দ্বীপটি, সঙ্গে সৈকতও।
কিন্তু সরকারি মহলে বারবার পরিকল্পনা পাঠানো হলেও তা আলোর মুখ দেখছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এসআর/