দার্জিলিং ঘুরে: পরিবার নিয়ে ভ্রমণের সুবিধার্থে ট্যুর এজেন্সির সহায়তায় গাড়িসহ রুটম্যাপের একটি খসড়া করে শুরু হলো যাত্রা। সিকিম, পিলিং আর ভুটানের সীমানা ঘেঁষা এ ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে পর্যটক গেলেও তুলনামূলক কম।
সাগর থেকে পাহাড়-বন সবসময় বেশি প্রিয়। সঙ্গীদেরও তাই। যাত্রা শুরুর সময় সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন করলে এজেন্সির মালিক বললেন, ‘কোনো সমস্যা নেই। আর রাজ জিম করা লোক। একাই সাতজনকে ফেলে দিতে পারবে!’ গাড়ি আধাঘণ্টা চলার পর কমতে থাকলো শহুরে কোলাহল। ক্রমে ডুবে যেতে লাগলাম বন্য অনন্য নির্জনতায়। বান্দরবানের তিন হাজার ফুটের বেশি উঁচু পাহাড় দেখার সৌভাগ্য হয়নি তখনও। চলতে চলতে পাহাড়ি রাস্তার ইউটার্নের মতো বাঁক পড়লো সামনে। তখনও জানি না এর চেয়ে কঠিন বাঁক পেরুতে হবে সামনে। বাঁক পেরিয়েই টাইগার ব্রিজ। স্থানীয়ভাবে সেবক ব্রিজ নামেও পরিচিত। সেবক নাম কেন জানা হয়নি, তবে ব্রিজ পেরিয়ে রাস্তার দু’পাশজুড়ে মানুষের সেবা নেওয়ার জন্য বসে থাকা বানরের দল সঙ্গ দিলো অনেকটা দূর। একপাশে উঁচু পাথুরে পাহাড়, গাছ। একপাশে খাঁদ। সঙ্গে দেখা দুই বাংলার প্রত্যাশিত নদী তিস্তা।
ব্রিজটি তিস্তার ওপরেই। নদীতে পানি নয়, দেখা গেলো শুধু পাথুরে ধারা। মনটা একটু খারাপই হলো। পরে অবশ্য আরও ওপরে তিস্তার ভরা যৌবন দেখেছি। সেখানে স্রোত কম। পানি টইটম্বুর। রাজ জানালো এখানে বাঁধ আছে। এর পরের আলোচনায় গেলে টানতে হবে রাজনীতি!
বড় উঁচু পাহাড়ে চড়া শুরু হলো ব্রিজ পেরিয়েই। ব্রিজটি দার্জিলিংকে যুক্ত করেছে জলপাইগুড়ি জেলার সঙ্গে। উত্তর-পূর্ব দিকে গরুবাথান হয়েই পৌঁছাতে হবে লাভা। গরুবাথান সংরক্ষিত বন। বড় বড় শাল-সেগুন দেখা মিললো বনে। ভেতর দিয়ে মসৃণ রাস্তা চলে গেছে টানেলের মতো। বনে চরা গরু দেখা মিললো ক্ষণে ক্ষণে। গলায় আবার ঘণ্টি বাঁধা। গরুবাথান! অনেকটাজুড়ে আবার সেনাবাহিনীর দখলে। মাঝে-মধ্যে রয়েছে সমতলের সবুজ চা বাগান। শিলিগুড়ি থেকে লাভার দূরত্ব ১শ’ কিলোমিটারের বেশি। আর গরুবাথান ৬০ কিলোমিটার। গরুবাথান পর্যন্ত উচ্চতা দেড় থেকে ২ হাজার ফুট। অনেকটা পথ চলে গরুবাথানের শেষ প্রান্তে গিয়ে থামলো রাজুর গাড়ি। জায়গাটি সমতল। সোজা রাস্তাটি চলে গেছে ডুয়ার্সের দিকে।
এখানকার পাহাড়ি পাথুরে ঝিরিটি সত্যি মুগ্ধ করার মতো। পাহাড় থেকে নেমে এসেছে স্বচ্ছ পানি। হাত-মুখ পা ভিজিয়ে, ইচ্ছেমতো ছবি তুলে বসলাম এক লেপচা নারীর চা দোকানে। স্থানীয়দের কাছে জানা গেলো এখানে নেমে ছবি তোলাও খুব নিরাপদ নয়। কারণ হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মধ্যে। এর জন্য যে বর্ষার সিজন লাগে সেটা নয়। সুতরাং সাবধান। ছবি আর সেলফিতে শামীম ভাইয়ের এগিয়ে থাকার শুরু এখানেই। হিন্দি তারা ঠিকমতো বলতে কিংবা বুঝতে পারে না। তবে নেপালি ড্রাইভার রাজু চালিয়ে নিলো সে যাত্রা। প্রথম পেটে পড়লো বিখ্যাত দার্জিলিং টি। নির্ঘুম রাত ও টানা ভ্রমণের ক্লান্তি যেন অনেকটা উবে গেলো দূর পাহাড়ের হাতছানি, স্বচ্ছ পানি আর গা-সওয়া ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়। গরুবাথান থেকে লাভার দিকে যে সড়কটি চলে গেছে সে পথে দেখা হলো দুই স্কুল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। সন্ধ্যার আগে বেশ পরিপাটি পোশাক পরে বাড়ি ফিরছিলো তারা। তাদের সঙ্গে সেলফিও হয়ে গেলো একদফা।
চলবে....
**ফুলবাড়ি হয়ে দার্জিলিং, হ্যাপা কম নয় ২৫ রুপির ঘোষণায়
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৬
এএ