লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে এর আগে বহুবার গিয়েছি। তার প্রধান কারণ আমার ছোট মেয়ে নাসিয়া, ওখানকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে (UCLA)পড়াশুনা করছিল।
যাই হোক ৭ জুন, ২০১৬ রাত্রে লস অ্যাঞ্জেলেস এয়ারপোর্টে নাসিয়া আমাদের নিতে এসেছিল। কিন্তু অত বড় বড় বাক্স প্যাঁটরা ও বাচ্চাদের কার সিট বসাবার পর আরো চারজন ওর গাড়িতে ধরবে না জেনে আগে থেকে রেন্টাল কার নেওয়া হয়েছিল। রেন্টাল অফিস থেকে একটা কার, স্যরি, ভ্যান ভাড়া করে প্রথম রাতে আমরা গিয়ে উঠলাম লো’স হলিউড হোটেলে (Loews Hollywood Hotel)। ভীষণ ঝকঝকে, তকতকে হোটেল। তবে ছোট মেয়ের জায়গাটা একটুও পছন্দের নয়। তার কাছে এরিয়াটা নাকি নিউইয়র্কের টাইম স্কোয়ারের মতো লাগে। যত্ত রকমের গ্যাঞ্জাম। চেক ইন ও রুমে লাগেজগুলো ঠিক জায়গা মতো রাখতে রাখতে বাচ্চারা ঘুমিয়ে কাদা। ওদের দোষ কী, রাত তখন বারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। এতক্ষণ ডিনার হয়নি বলে পেটে ছুঁচো ডন দিচ্ছিল। ‘চলো খেয়ে আসি’ বলতেই মেয়ে বলল, ‘এটা তোমার নিউইয়র্ক বা শিকাগো নয়, এখানে সব কিছু এগারোটার পর বন্ধ। এক আধটা ডাইনার (Diner) হয়তো খোলা আছে কিনা দেখা যেতে পারে’। নসিবে কী আছে দেখতে গিয়ে তিন চার ব্লক পেরিয়ে একটা ‘ডাইনার’ পাওয়া গেল। অর্ডার দিয়ে তিনটে স্যান্ডুইচ পেতে লাগল দেড় ঘণ্টা। বিলটাও বেশ গ্ল্যামারাস। ট্যাক্স, টিপস যোগ করার আগেই তিনটে চিকেন স্যান্ডুইচের দাম পড়েছে ৬০ ডলার। যাকগে, রাতের ঐ সময়ে খাবার যে পাওয়া গিয়েছে, এতেই আমরা খুশি।
পরের দিন (৮ জুন) সকালে আমরা চেক আউট করে ছোট মেয়ের লোসফেলিজ (Los Feliz) ভিলেজের অ্যালেকজান্দ্রিয়া অ্যাভেন্যুর অ্যাপার্টমেন্টে গেলাম। সেখান থেকে একসঙ্গে গিয়ে ৫ মাইল দূরে বেভারলি বুলেভার্ড (Beverly Boulevard) আর সুইটজার অ্যাভেন্যুর (sweetzer Avenue) মাথায় বিখ্যাত ব্লু বটল কফির (Blue Bottle Coffee) দোকানে কফি ও স্ন্যাকস খাওয়া হলো। ব্রেকফাস্টের জন্য দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই সোজা লাঞ্চে চলে গেলাম জোন্স অন থার্ড (Jones on third) রেস্টুরেন্টে। জায়গাটা ছিল থার্ড স্ট্রিট ও ফ্লোরেস (Flores) স্ট্রিটের কোণায়। রেস্টুরেন্টটা যেন পাঁচমেশালি টাইপ। একদিকে ক্যাফেটারিয়ার মতো খাবার লাইন করে সাজানো, অথচ নিজে কিছু উঠিয়ে নেওয়া যাবে না। ওয়েটার টেবিলে সার্ভ করবে। কিছুটা অংশ ডেলির মতো। তারা সোজাসুজি অর্ডার নিচ্ছে ও খাবার দিচ্ছে। অন্য দিকে কফি বার ও বেকারি আছে। সব খাবারই ভেতরে অথবা বাইরে বসে খাওয়া যায়। খেতে খেতে বড় মেয়ে সেঁজুতি বলল, তার চুল কাটার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল বেভারলি হিলসে। দেরি হয়ে যাবে বলে সেটা সে রি-স্কেজ্যুল করে দেড় ঘণ্টা পরে নিয়েছে। হাতের ফ্রি সময়টার ভালোই সদ্ব্যবহার করলাম আমরা বেভারলি হিলস পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে। আহ্, কী মনোরম পরিবেশ। মনে হয় লাইব্রেরিটাকে যেন কেউ গাছপালা ঘেরা সুন্দর একটা পার্কের উপর বসিয়ে দিয়েছে। ঢোকার পথে দেখলাম লেখা আছে, ‘সিটি অফ বেভারলি হিলস পাবলিক লাইব্রেরি’। জিজ্ঞেস করলাম, এটা সিটি অফ লস অ্যাঞ্জেলেসের মধ্যে পড়ে না? মেয়ে বলল, ‘লস এঞ্জেলেসের মধ্যেই, কিন্তু এদের বিভিন্ন এরিয়ার জন্য আলাদা আলাদা মিউনিসিপ্যালিটিও আছে। এরা অনেক বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে বেভারলি বুলেভার্ড হয়ে সান্টামনিকা বুলেভার্ড (Santa Monica Boulevard)-এ ঢোকা হলো। তারপর ক্যানিয়ন ড্রাইভের মাথায় ভিদাল সেসুন স্যালনে (Vidal Sessoon Salon) সেঁজুতিকে নামিয়ে দিয়ে আমরা উল্টোদিকে গাড়ি পার্ক করে আসলাম। স্যান্টামনিকা বুলেভার্ড ও রোডিয়ো ড্রাইভ (Rodeo Drive)-এর এই জংশনটার উপর অনেক পশ দোকান পত্তর আছে। এখানে হলিউডের ফেরেস্তারা আর হুর-পরীরা হাট বাজার করতে আসে। ওর চুল কাটার সময়টা আমরা স্যান্টামনিকা বুলেভার্ডের উপর কিছু ঘোরাঘুরি করে ঐ রোডিও ড্রাইভ এলাকায় স্প্রিনকল্স (Sprinkles) নামের একটা আইসক্রিম পার্লারে ঢুকে নতুন নতুন ফ্লেভারের আইসক্রিম মজা করে খেলাম। সেঁজুতির কাজ শেষ হলে আমরা একত্রে হেঁটে রোডিয়ো ড্রাইভ পার হয়ে ফেডারেল অ্যাভিন্যুর দিকে এগোলাম। নাসিয়া বলল, ‘জানো আব্বা, এ জায়গাটাকে আন অফিসিয়ালি তেহেরাঞ্জেলেস (TeherAngeles) বলা হয়। কারণ ইরানিয়ান রেভোল্যুশানের সময় অনেক ইরানিয়ান ইহুদি (Jews) ও শাহের অনুসারী মুসলিমরা তেহেরান থেকে পালিয়ে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। তোমাকে তো আগেই বলেছি, আমি যেখানে থাকি সেখানের বেশির ভাগ রেসিডেন্ট হলো আর্মেনিয়ান। তারা টার্কিশ ম্যাসাকারের সময় পালিয়ে ঐ এরিয়াতে এসে সেটল করেছিল। ওটাকে বলে লিটল আর্মেনিয়া। আর্মেনিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে-তে তারা বিরাট প্রসেশান বের করে। তারপর সভা করে, বক্তৃতা দেয়, গান নাচ করে। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লোকদের তাদের দেশের নামে অনেক টাউনশিপ আছে। এরকম একটা হলো কোরিয়া টাউন, যেটার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে টাগ অফ ওয়ার করে সাহসী বাংলাদেশিরা কিছু অংশ বের করে নিয়ে লিটল বাংলাদেশ বানিয়েছে। ’
একটু এগিয়ে থার্ড স্ট্রিটের উপর একটা শপিং মল থেকে কিছু কেনাকাটা করে আগের জায়গা থেকে গাড়ি নিয়ে সমুদ্রের কাছে ওশান ড্রাইভে (Ocean Drive) গাড়ি পার্ক করা হলো। এবার স্যান্টামনিকা বিচের দিকে হাঁটা ধরলাম। জুতো খুলে বিচের কিনারায় একহাঁটু পানির মধ্যে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় দেড় মাইল হাঁটা হয়ে গেল। বাচ্চাদের সে কি উৎসাহ! তারা ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের উপর লাফ দিয়ে খেলতে খেলতে খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। নেমে আরো গভীরের দিকে যাওয়ার জন্য অস্থির। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসতে সবাইকে গুটিয়ে নিয়ে ওশান ড্রাইভের ওপর আমরা একটা স্পেশাল মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গেলাম, নাম ব্লু প্লেট টাকো (Blue Plate Taco)। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে পার্কিং লট থেকে গাড়ি বের করে আবার হলিউডে ফেরত না গিয়ে, সোজা ডাউন টাউনের শেরাটন গ্র্যান্ড, লস এঞ্জেলেস (Sheraton Grand, Los Angele) হোটেলে গিয়ে চেক ইন করলাম। হাতে আর ছুটি ছিল না বলে আগের দিন জামাই আসতে পারেনি। তাই বাচ্চা দুটো ও আমাকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে ওরা দুই বোন আবার এয়ারপোর্টে গেল জামাইকে নিয়ে আসতে।
পরের দিন (৯ জুন) নাসিয়ার গ্রাজুয়েশান, যে জন্য আমাদের ওখানে যাওয়া। সকালে আমরা আর একটা নতুন জায়গা, ডাউন টাউনের ফিলজ কফিতে (Philz Coffee) কফি খেয়ে পরে ফাইভ সেন্টস (5 Cents) ডাইনারে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে। খাবারের অভিনব মেনু আর হিউজ কোয়ান্টিটি শেষ করতে গিয়ে খাবারগুলো নাক পর্য্যন্ত উঠে এসেছিল। হোটেলে ফিরে এসে পোশাক বদল করে গ্রাজুয়েশান সেরিমনিতে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা দিলাম। কমেন্সমেন্ট শুরু হবে বিকেল ৩টায়। তার আগে পৌঁছে জায়গামতো পার্ক করে হেঁটে ক্যাম্পাসের রয়েস হলে (Royce Hall) গিয়ে আমাদের নির্ধারিত জায়গায় বসা হলো। দিনটা ছিল শুধুমাত্র ডক্টরেট দেবার কমেন্সমেন্ট সেরিমনি। কোন ব্যাচেলরস বা মাস্টার্স ডিগ্রিওয়ালাদের জন্য নয়। এ বছর ৭৭০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ডক্টরেট দেওয়া হচ্ছে। বাপ রে, এতগুলো ডক্টরেট? হবেই তো, কারণ এটা একটা মেজর পাবলিক ইউনিভার্সিটি। আমরা বসার পর প্রসেশান করে চ্যান্সেলর ড. জিন ব্লকের নেতৃত্বে প্রথমে ফ্যাল্কাল্টি মেম্বাররা ঢুকে স্টেজে উঠে গেলেন। পরে ডক্টরাল ক্যান্ডিডেটরা ঢুকে তাদের নির্ধারিত সামনের সিটগুলিতে বসল। ড. ব্লকের স্পিচের পর ডিন অফ নার্সিং বক্তৃতা দিতে উঠলেন। প্রথমেই তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের উপদেশ দিলেন এই বিগ অ্যাচিভমেন্টের জন্য সবার আগে তাদের পিতামাতাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ দিতে। তারপর মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে তিনি ক্যাম্পাসে যে ভয়াবহ ও ন্যক্কার জনক মার্ডার হয়েছে সে জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করলেন। ঘটনা হলো, একটা প্রাক্তন ছাত্র তার পিএইচডি-র মেন্টর, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এক প্রফেসরকে গুলি করে হত্যা করে। তারপর সে নিজেই নিজের গুলিতে আত্মহত্যা করেছে।
যে বিষয়গুলোর উপর ডক্টরেট দেওয়া হলো তাদের অনেকগুলোর নামই শুনিনি। সে সব সাবজেক্টে তারা যে কী কাজ করে সে সম্বন্ধে ভালো ধারণাও ছিল না। যেমন জিওগ্রাফির উপর একজন পিএইচডি করলো। তার টপিক ছিল ‘বেটার ম্যানেজমেন্ট অফ ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেটলজি’। বিশ্ববিদ্যালয়টি খুবই কসমোপলিটান বলে মনে হলো। ক্যাণ্ডিডেটদের মধ্যে প্রচুর এশিয়ান যে থাকবে তা আগে থেকেই আন্দাজ ছিল। এরা হলো প্রধানত চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান ইত্যাদি। কিছু আফ্রিকান আমেরিকানও ছিল। কিন্ত দুটো বিষয় লক্ষ্য করে অবাক লাগলো। এক, দেখা গেলো এখানে সাউথ এশিয়ান ক্যান্ডিডেট খুবই কম, হাতে গোণা কয়েকজন মাত্র ডিগ্রি নিল। অন্যদিকে দেখা গেল প্রচুর সাউথ আমেরিকান। আরো অবাক লাগলো, যারা ডিড়্রি নিচ্ছে, তাদের অনেকেই শুধু বিবাহিতই নয়, তাদের গড়ে দুজন করে বাচ্চা। এক সিঙ্গল মাদারকে দেখলাম, তিনটে বাচ্চা নিয়ে স্টেজে ডিগ্রি নিতে গেল। সবাই ছেলে মেয়ে সমেত তাদের নিজের স্ত্রী বা স্বামীকে নিয়ে স্টেজে গিয়ে ডিগ্রি নিচ্ছিল। এক চাইনিজ ভদ্রলোক তার দুটো বেশ বড় বড় বাচ্চাদের নিয়ে স্টেজে উঠে নার্সিং-এ পিএইচডি ডিগ্রি নিলেন।
যে সব সাবজেক্ট আমার না জানার জন্য নতুন মনে হয়েছে তা হলো- এথনো মিউজিকোলজি, ইনটিগ্রেটিভ মলিকুলার সেলিউলার ফিজিওলজি, মলিকুলার অ্যান্ড মেডিক্যাল ফারমাকোলজি, মলিকুলার সেল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি, সেলুউলার অ্যান্ড মলিকুলার প্যাথোলজি, বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স ইত্যাদি। তাছাড়া জানাশুনা সব সাবজেক্টই ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দিক থেকে দেখা গেল এখানে মেকানিক্যাল ও ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রভাব বেশি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাত্র একজন পিএইচডি পেয়েছে। আমার লাইন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পেয়েছে মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে দুজনই মেয়ে। কম্পারেটিভ লিটারেচারে মাত্র দুজন। দুজনই মেয়ে এবং তারা এশিয়ান অরিজিন। এক আমার মেয়ে আর একজন তাইওয়ানের মেয়ে নাম ইউ টিং হোয়াংগ। ইউ টিং এর সাব্জেক্ট ছিল চাইনিজ ডায়েসপোরা।
নাসিয়ার সাব্জেক্ট ছিল পোস্ট কলোনিয়াল ডায়েসপোরা। প্রধানত, ইংরেজ ও ফরাসিদের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ানদের, বিশেষ করে ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদের এবং আফ্রিকার আলজেরিয়ান, তিউনিশিয়ান ও মরক্কোর মানুষদের বিদেশে, বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে নতুন করে পুনর্বাবাসিত হওয়ার পর তাদের অবস্থা। ঐ সব দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির ওপর তাদের প্রভাব ও অবদান এবং দুই কালচারের সংঘর্ষ ও সংমিশ্রণে নতুন যে কালচার তৈরি হয়ে চলেছে তার ওপরে গবেষণা। এটা একটা নতুন টপিক এবং আস্তে আস্তে এ বিষয়ের উপর সবার নজর পড়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধস্ত শহর গ্রাম থেকে লাখ লাখ রিফিউজি যখন ইউরোপে এসে বসতি স্থাপন করার চেষ্টা করছে ও তাড়া খাচ্ছে।
কমেন্সমেন্ট শেষ হবার পর হলের সামনের মাঠে পানীয় এবং সোস্যাল আওয়ারের ব্যবস্থা। নতুন ডক্টরেটরা সবাই তাদের প্রফেসার, অ্যাডভাইসার, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিলছে, ফুল আর চকোলেট নিচ্ছে আর গাদা গাদা ফটো তুলছে। ভীষণ রৈ রৈ, হৈ চৈ। সবাই তাদের গার্জেনদের সঙ্গে বন্ধু বান্ধবদের গার্জেনদেরও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এমন দুই গার্জেনের সঙ্গে পরিচয় হলো। এক পরিবার হলো নাসিয়ার বন্ধু ইউ, টিং এর বাবা মা। তারা তাইওয়ান থেকে মেয়ের গ্রাজুয়েশনে এসেছেন। আমাদের সঙ্গে এই প্রথম আলাপ। কিন্তু অন্তরঙ্গতা এমন ছিল যেন মনে হলো প্রতি সপ্তাহে আমাদের দেখা হয়। আর একটা ছিল নাসিয়ার বন্ধু নাজনিন, সংক্ষেপে নাজের পরিবার। বাবা মা সমেত ওনারা ৪-৫ জন এসেছেন ক্লিভল্যান্ড থেকে। নাজের সাবজেক্ট হলো ‘জেন্ডার’। নাজের বাবা মা’রা গুজরাটি। তার বাবার কাছ থেকে শুনলাম, তার অন্য সন্তানটি ছেলে। সে ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট স্পেশালিস্ট, সিনসিনাটির এক হাসপাতালে হার্ট, লাংগ্স, কিডনি ইত্যাদি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করে। তিনি নিজে একজন ইলাস্ট্রেটর। ইউ টিং-এর বাবাও একজন ইঞ্জিনিয়ার। তো দেখলাম আমাদের পরের জেনারেশানদের সবাই আমাদের মতো প্রফেশানাল লাইনে ঢোকার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেনি। এদের অনেকেই বেশ বোল্ড হয়ে লিবারাল আর্টস নিয়েছে এবং অত্যন্ত ভালো করছে।
নাসিয়ার দু’জন প্রফেসরদের সঙ্গেও দেখা হলো। এদের একজন ইরানিয়ান, একজন জুইশ। খুবই আন্তরিক ছিলেন সবাই। একজন নাসিয়ার বড় বোন সেঁজুতিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইউ আর এ পিএইচডি হোল্ডার টু?’ সেঁজুতি বলল, ‘নট রিয়েলি, আই অ্যাম এ ডক্টর টু, বাট এ ডক্টর ডক্টর’। উনি বললেন, ‘ইউ মিন ফিজিশিয়ান অ্যান্ড ইউ হ্যাভ ইওর ওন প্র্যাকটিস’। মেয়ে বলল, ‘না, আসলে আমি চাকরি করি। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিতে আছি’। অন্য প্রফেসর তখন আমার জামাইকে বললেন, ‘সো বোথ অফ ইউ আর ইন দি সেম ফ্যাকাল্টি?’ জামাই বলল, ‘ঠিক তা নয়, অ্যাকচুয়েলি আমি অন্য জায়গায়, মানে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিতে আছি’। তখন উনি আবার বললেন, ‘ইটস এ স্মল ওয়ার্ল্ড। আমার ভাই থাকে শিকাগোতে। ইন ফ্যাক্ট সে ঐ নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিতেই আছে। ওখানে আমি প্রায়ই যাই। আই লাভ শিকাগো; বিউটিফুল সিটি’। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের আজকের ইভনিংয়ের প্রোগ্রাম কি?’ নাসিয়া বলল, ‘আমরা মৎজা পিৎজা (Mozza Pizza)-তে যাচ্ছি’। উনি বললেন, ‘ওহ ফ্যান্টাস্টিক, ইট্স এ ভেরি গুড প্লেস ফর ডাইনিং’। গিয়ে দেখা গেল সত্যিই তাই। ঢুকতে বেশ বড় লাইন। অর্ডার নিতে আসতেও ওয়েটারদের অনেক দেরি হচ্ছিল। যাই হোক, খাবারগুলো নতুন ও এত ভালো ছিল যে মনে হলো, ‘ইট ওয়াজ ওয়ার্থ দি ওয়েট’। পরে যে যার জায়গায় ফিরে কমেন্সমেন্টের ধরাচূড়াগুলো খুলেফেলার পর অনেকটা হালকা লাগলো।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
এমজেএফ/