আগরতলা (ত্রিপুরা) থেকে ফিরে: কুঞ্জবনে পুরা ত্রিপুরা হাসছে। আধুনিকতায় মোড়ানো ইতিহাস আর ঐতিহ্যের পরতে পরতে চমকিত হওয়ার আয়োজন।
ত্রিপুরা বনবিভাগের উদ্যোগে নির্মিত এই উদ্যানের নাম হেরিটেজ পার্ক। যার প্রধান আকর্ষণ মিনি ত্রিপুরা। এই মিনি ত্রিপুরা গড়া হয়েছে গোটা রাজ্যের ভূমিরূপের সঙ্গে মিল রেখে ভূমিতে বিস্তৃত এক ম্যাপের ওপরে। ম্যাপের যেখানে প্রাসাদ আছে সেখানে বসেছে প্রাসাদের রেপ্লিকা, প্রাচীন মন্দিরের স্থানে মন্দিরের মিনি সংস্করণ। আছে মসজিদ, বৌদ্ধ বিহার। বাদ যায়নি পাহাড়, বন, নদী-লেকও।
রাধানগর পেরিয়ে আগরতলার উত্তর অংশে কুঞ্জবন এলাকায় গড়ে তোলা এই হেরিটেজ পার্ক তার গাছ-গাছালি ঘেরা ঘরে কতোটা আকর্ষণ লুকিয়ে রেখেছে তার এক ঝলক টের পাওয়া গেলো প্রবেশ পথের সামনে দাঁড়িয়েই।
তিন রাস্তার মোড়ে বিশাল প্রবেশ পথটিও সাজানো হয়েছে ত্রিপুরার ইতিহাস আর ঐতিহ্যের আবহে। বিপরীতে ছিমছাম পার্কিং। ভেতরে পুরো পার্কটির সীমানা ছুঁয়ে গড়া হয়েছে লাল ইটে বাঁধানো ওয়াকওয়ে। দু’পাশে নানা গাছগাছালি, ফাঁকে ফাঁকে শিল্পকর্ম।
ভেতরের ক্রসরোডগুলো না বাঁধিয়ে অনেকটা মাটির ট্রেইলের শেপ দেওয়া হয়েছে। কোথাও খোলা আকাশ, কোথাওবা বাঁশবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে মাটির হাঁটা পথ। পথের পাশে কোথাও ছোট্ট পদ্মপুকুর, কোথাওবা জিরিয়ে নেওয়ার জন্য পাকা প্ল্যাটফর্মে গাছের খুঁটির ওপরে খড়ের চালা। গ্যালারির মতো উন্মুক্ত একটা মঞ্চও চোখে পড়লো খাল পাড়ে। তবে শুকনো খালটিতে অকেজো হয়ে পড়ে আছে পানির ফোয়ারা।
এসব ঘুরে কয়েক মিনিটের মিনি ত্রিপুরা ট্যুর শুরু হবে সাব্রুম সীমান্তের মহামুনি বিহার থেকে। দক্ষিণ ত্রিপুরার বাংলাদেশের রামগড় সীমান্তের ওই বৌদ্ধ বিহার দেখে একটু এগুতেই হাতের বাঁয়ে পড়বে একই জেলার রাজনগরের চন্দ্রপুর প্রাচীন মসজিদ। হাতের ডানে ৮ম শতকের পিলাক নগর।
একটু এগুলে গোমতী জেলা পড়বে হাতের ডানে। সেখানে ত্রিপুরেশ্বরী ও ভূবনেশ্বরী মন্দিরের রেপ্লিকা। হাতের বাঁয়ে সিপাহীজলা জেলার নীরমহল। তারওপরে পশ্চিম ত্রিপুরার বক্সনগর, আগরতলার উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, আগরতলা রেল স্টেশন।
উত্তর অংশে উনকোটি জেলা, পাহাড়ে খোদাই করা বিগ্রহ। এসব কিছুর ফাঁকে ফাঁকে মূল ম্যাপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সড়ক আর রেলপথ। রেলব্রিজ আর পাহাড়ি টানেলও ঠিক ঠিকই চিহ্নিত করা হয়েছে মিনি ত্রিপুরায়।
সিন্দবাদের দৈত্যের মতো প্রতিটি প্রাসাদ যেনো আঁকড়ে ধরা যাবে দু’হাতে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই হেরিটেজ পার্ক উদ্বোধন করেন। শুরুর দিকে পার্কটি ঘুরে দেখা যেতো বিনা পয়সায়। পরে পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে ১০ রূপী প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়। ভাগ্যিস, বিদেশিদের জন্য বাড়তি রূপী গোনার ব্যবস্থা রাখা হয়নি আগরতলা হেরিটেজ পার্কে।
বাংলাদেশ অ্যাসিসট্যান্ট হাই কমিশনের অফিস এই হেরিটেজ পার্কের দক্ষিণে। তারও দক্ষিণে হাতের ডানে বেনুবন বিহার, বাঁয়ে মহারাজার অতিথিশালা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগরতলা এলে ওই অতিথিশালাতেই থাকতেন। ওটার নাম পুষ্পবন্ত বিহার রেখেছিলেন কবিগুরু।
গোলাকার ওই ভবনটিতে এখন রাজ্যপাল থাকেন। বছরখানেকের মধ্যে নতুন রাজ্যপাল ভবনে চলে যাবেন তিনি। তারপর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এই পুষ্পবন্ত বিহার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এইচএ/জেডএম/
আরও পড়ুন
** রুদ্রসাগরের জলপ্রাসাদে
** গোবিন্দের ভুবনেশ্বরীতেই রবি ঠাকুরের রাজর্ষি বিসর্জন
** ত্রিপুরা সুন্দরীর কল্যাণ সাগরে বোষ্টমী ধুঁকছে (ভিডিও)
** আগরতলায় শতবর্ষী মসজিদ, প্রাসাদের আদলে স্টেশন
** রাজ প্রাসাদ যেখানে জাদুঘর
** মাণিক্য রাজ্যের নাম কি করে ত্রিপুরা
** আড়াইশ’ টাকায় আগরতলা, ঢাকা থেকে ৪ ঘণ্টা