জানালার কাঁচ দিয়েও তাকানো যাচ্ছে না সূর্যের দিকে। প্রচণ্ড তাপে বোঝা যাচ্ছে বেশ ক্ষেপে আছে মাঘের সূর্য।
রোববার সকাল সাতটা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও কিছু সময় দেরিতে ছেড়েছে ট্রেন। মহানগর প্রভাতীর পেটে চড়েছি আমরা ক’জন। ট্রেনের জানালা দিয়ে দূরে সবুজ গ্রাম আর প্রকৃতি দেখার অানন্দ অন্যরকম। সেই দেখা থেকেই ল্যাপটপের কী প্যাডে হাত চালানোর লোভ সামলানো গেলো না।
প্রভাতীর ৩২ নম্বর সিটে বসে কেবলই প্রকৃতির প্রতি বিস্ময়। কোথাও ধানের গাঢ় সুবজ রঙা ক্ষেত, লম্বা ধানের শীষের মাথায় সুর্যের আলো পড়ে হীরের মত চিক-চিক করছে শিশির। অবচেতন মনেই গুঞ্জরিত হলো রবি ঠাকুরের সেই কবিতা-
‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের ওপরে
একটি শিশিরবিন্দু। ’
মাঝে-মাঝে স্টেশনে ক্ষণিকের জন্য থেমে যায় ট্রেন। দেখা যায় কর্মব্যস্ত মানুষের মুখরতা। বুট-বাদাম ও চানাচুর বিক্রেতাদের হাকে-ডাকে ফেরি করে বিক্রির হিড়িক।
স্টেশনে থাকা ছোট-ছোট শিশুরা টুকিয়ে বেড়াচ্ছে পড়ে থাকা বাহারি রকম বোতল। কেউ আবার নিজ গন্তব্যে যেতে অপেক্ষা করছে ট্রেনের। এক স্টেশনের একটু জিরিয়ে ফের ছুটে চলে ট্রেন। আবার সেই ধূ-ধূ মাঠ, ধানক্ষেত, কোথাও মুঠো ভর্তি নুতন ধানের চারা রোপণের ব্যস্ততা কৃষকের।
বড় মাঠের কোথাও ছোট-ছোট বিল। তার মাঝখানে ফুটে আছে কচুরিপানা। এসব দৃশ্য গ্রামবাসীদের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে শহুরে মানুষের কাছে তা অনেক আকাঙক্ষার। কিংবা যারা দীর্ঘদিন পর-পর গ্রামে যান তাদের জন্যও স্মৃতির আখর।
বাহারি সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়ে এভাবেই চলতে-চলতে ট্রেন এসে গেলো ভৈরব নদীর সেতুর ওপর। এখানে এসে সৌন্দর্যের নতুন চমক দেখা গেলো। নদীর মাঝখান দিয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। কুলোর মত ছোট্ট নৌকাগুলোকে ট্রেন থেকে মনে হচ্ছিলো শাপলা ফুলের পাপড়ির মতো।
প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে দেবে। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে এমন নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ থেকে আমরা দিনের পর দিন বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছি..।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭
জেডএফ/টিআই