সুন্দরবনের করমজল ঘাটে নামলেই বানরের এমন দুষ্টুমি চোখে পড়বে সবার আগে। বাদরামি কাকে বলে সেটা করমজলে ডুকলেই টের পাওয়া যাবে।
পাশের বড় পুকুরে রয়েছে বড় কুমির। ২০০২ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণী প্রজননের জন্য এই কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। ২০০৫ সালে প্রথম এখানে শুরু হয় কুমিরের প্রজনন।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে পশুর নদী পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক প্রতিদিন আসেন। যাদের এখানে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়।
সরেজমিন করমজল ঘুরে দেখা গেছে, যেসব পর্যটক এখানে আসছেন তারা বাধাকপি, বাদাম, ঘাস ও পাতা দিয়ে হরিণের সঙ্গে যেমন বন্ধুত্ব করছেন, তেমনি বানরদলের সঙ্গে খেলছেন দুষ্টুমির খেলা। সাবধানে উঁকি দিচ্ছেন কুমিরের চৌবাচ্চায়।
কেউ কেউ করমজলের সুন্দরবনের মানচিত্রটি দেখছেন। এই মানচিত্রে এক নজরে সুন্দরবনটাকে দেখা যায়। এর পাশেই আছে একটি সুন্দরবন সংগ্রহশালা। সেখানেও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কংকাল, হরিণের কংকাল, কুমিরের নমুনা ডিম, কুমিরের মাথাসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীর নমুনা। মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা দিয়ে এগুলোকে ফ্রেমে বন্দি করছেন অনেকে।
মানচিত্র, সুন্দরবন সংগ্রহশালা, বানর, হরিণ, কুমির দেখার পর দল বেঁধে পর্যটকরা বনে হাঁটার জন্য তৈরি করা কাঠের ট্রেইল বেয়ে বনে ডুকছেন। করমজলে একটি কাঠের তৈরি ওয়াচ টাওয়ার ও একটি ইটের পাকা সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার আছে। সেখানে উঠে দেখা যাবে সুন্দরবনের বিশাল এলাকা।
প্রায় ১ থেকে দেড় কিলোমিটারের কাঠের ট্রেইল ধরে বনের মধ্যে অনায়াসে হেঁটে হেঁটে দেখা যাবে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য। তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা এখানে মাঝে-মধ্যে বাঘের আসা-যাওয়া হয়।
বনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে অনেকে বসে পড়ছেন বনের বিভিন্ন জায়গায় বসার জন্য তৈরি করে রাখা বিশ্রামখানায়। বনের বিভিন্ন খালের পাড়ে গোলপাতার ছাউনি আর কাঠের তৈরি এসব বিশ্রামখানায় বসে বনের শীতল হাওয়া মেখে হাঁটার ক্লান্তি দূর করছেন তারা।
আবার কেউ কেউ করমজলের রেস্টুরেন্ট থেকে চা, কফিসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পশুর নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে দিচ্ছেন আড্ডা।
ঢাকা থেকে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসা স্কুল ছাত্র সানজিদ বাংলানিউজকে বলে, হেঁটে হেঁটে সুন্দরবন দেখতে সত্যিই ভালো লাগছে। বিশেষ করে বেশি ভালো লেগেছে হরিণকে বাঁধাকপি খাইয়ে, ছোট-বড় কাঁকড়া দেখে।
সবুজ বনে নানা প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির, হরিণ-কুমির দেখা, বানরের সঙ্গে দুষ্টুমি আর সুন্দরি, গেওয়া, পশুরসহ নানা প্রজাতির গাছ দেখে তা চেনা, সব মিলিয়ে অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতির কথা জানায় সানজিদ।
করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বাংলানিউজকে বলেন, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় । কেননা এ দর্শনীয় স্থানে হরিণ ও কুমিরের প্রজনন, লালন-পালন, ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র এবং পায়ে হেঁটে বনের সৌন্দর্য দেখা যায়।
তিনি জানান, করমজল প্রজনন কেন্দ্রে ৪০টি হরিণ, ছোট-বড় ২১৫টি কুমির রয়েছে। প্রতিদিন করমজলে ৩০০-৩৫০ পর্যটক আসেন। দেশি পর্যটকদের ভ্যাটসহ ২৩ টাকা ও বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে ৩৪৫ টাকা প্রবেশ ফি নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
এমআরএম/জেডএম