মানুষকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে আসতে ২০০৪ সালে জেসটেট হলিডে রিসোর্ট তথা ‘জাকারিয়া সিটি’ যাত্রা শুরু করে। এরপর মানুষের আসা-যাওয়া শুরু হয় এই গ্রামে।
অজোপাড়া একটি গ্রামে রিসোর্ট তৈরিতে উদ্যোক্তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে আসা। ২০১৩ সালে জাকারিয়া সিটি’র মালিকানা কিনে নেন প্রবাসী সাঈদ চৌধুরী ও তার বন্ধুরা। মালিকানা হাত বদলের পর ‘এক্সেলসিয়র সিলেট’ নামকরণ হলেও বদলায়নি তাদের উদ্দেশ্য। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে আরও নান্দনিক করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা।
তাদের একটাই উদ্দেশ্য, পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে দেশীয় কৃষ্টি কালচারে তৈরি পাঁচ তারকা আবাসনের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে এক্সেলসিওরে।
নৈসর্গিক সৌর্ন্দযকে অটুট রেখে আর্ন্তজাতিক মানের একটি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র এক্সেলসিয়র তিনটি টিলা-পাহাড়জুড়ে ১৭ একর ভূমিতে অবস্থিত। টিলাগুলোর রয়েছে যেমন পৃথক নামকরণ, তেমনি রয়েছে নান্দনিকতা। এর মধ্যে বাঘের টিলা, পুলিশ টিলা ও মাঝের টিলা উল্লেখযোগ্য।
বাঘের টিলা: বাঘ না থাকলেও এই টিলায় রয়েছে বাঘের প্রতিকৃতি। বাঘের টিলা খ্যাত হিলটপের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান মঞ্চে দিনে কিংবা রাতে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
মাঝের টিলা: এখানে রয়েছে কটেজ মধুমতি, সুইমিং-সেমিনার, সিম্পজিয়াম, স্নোকার খেলাঘর ও জিমনেশিয়াম।
পুলিশ টিলা: এই টিলাকে নান্দনিক করতে বৃক্ষরাজি অক্ষত রেখে কটেজ করার চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য দেশি-বিদেশি আর্কিটেক্টদের সম্পৃক্ত করেছেন তারা।
এক্সেলসিয়র সিলেট’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তিনটি টিলা নিয়ে এক্সেলসিয়রের প্রকৃতি। সুউচ্চ টিলার ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে নান্দনিকতা। আবাসন থেকে পর্যটন-বিনোদন। এখানে এলে প্রকৃতির সঙ্গে খানিকটা সময়ের জন্য হারিয়ে যাবেন পর্যটকরা।
ব্যবসার পাশাপাশি দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে, দেশের প্রতি নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে পর্যটকবান্ধব এমন একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন তারা। যা ভবিষ্যতে আরও নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে।
এক্সেলসিয়র
প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ উপলব্ধি করা যায় এক্সেলসিয়রের প্রবেশদ্বারেই। দুই দিকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ বৃক্ষরাজি প্রধান ফটক অতিক্রম করতেই আপনাকে অভিবাদন জানাবে। তিনটি টিলাজুড়ে রয়েছে প্রায় ৪শ প্রজাতির ৫০ হাজার গাছ। এর মধ্যে শতাধিক ওষুধি গাছ রয়েছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
৩শ ফুট উচু টিলায় ওঠার আগেই বাম পাশে তাকালেই দৃষ্টি আটকে যাবে মনোরম লেকে। সেখানে নৌকা চড়া ছাড়াও রয়েছে নির্বিঘ্নে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা।
পাশেই উপরের দিক থেকে নেমে এসেছে পাথরের তৈরি ড্রেন। উপরে না উঠে বাম দিকের পথ ধরে হাঁটলেই টিলার পাদদেশে ক্যামেলিয়া। যেখানে ২০টি কক্ষে রয়েছে থাকার বন্দোবস্তু। খানিকটা দূরে গিয়ে লেকের মাঝখানের নিঝুম দ্বীপ দৃষ্টিকাড়ে পর্যটকদের। আরও কিছুটা এগুলে বাঘটিলার পাদদেশে শিশুদের জন্য রয়েছে বিনোদন কেন্দ্র। সেখানে নামাজ আদায়ের জন্য রয়েছে মসজিদও।
প্রধান ফটক থেকে উঁচু সড়ক ধরে উপরে উঠলেই বাম পাশে খেলার মাঠ। যেখানে ঘুড়ি উৎসব, হাডুডু, ফুটবল খেলাও চলে মনের আনন্দে। একটু এগুলেই লাল সিরামিক ইটের তৈরি ভবন মধুমালতি। যেখানে সুইচ রুমসহ ত্রিশটি কক্ষে রয়েছে রাত যাপনের ব্যবস্থা।
উপরে উঠলেই হাতের বাম পাশেই পাবেন খেলাধুলা তথা টেনিস কোর্ট, লন টেনিস কোর্ট, জিমনেশিয়াম ও অডিটোরিয়াম। পাশেই রয়েছে সুইমিংপুল, এখান থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে চোখ ফেরালে দেখতে পাবেন দ্বিতল সবুজ বন আর ফুলে ফুলে শোভিত কটেজ মধুমালতি। এখান থেকে বসে টিলার ভাঁজে দেখা যাবে মিনি চিড়িয়াখানা। পশু-পাখি, বানর-হরিণসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু চোখে পড়বে। বিশেষ করে টিলা থেকে টিলায় উপর-নিচে আঁকা-বাঁকা পথে রয়েছে ট্রেইল করার সুবিধা।
সিলেট শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে জাফলং রোডের খাদিমনগরে সুরমা গেইট হয়ে ধলইপাড়া গ্রামে যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এক্সেলসিয়রের পাশাপাশি যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন সন্নিকটে থাকা শাহপরান ও শাহসুন্দরের মাজার কিংবা হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্র। ঘুরে আসতে পারেন জৈন্তাপুর রাজবাড়ি কিংবা জাফলং।
যেভাবে যাবেন
সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, বন্দর, ধোদিঘীরপাড় অথবা টিলাগড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে এক্সেলসিয়র সিলেট পৌঁছাতে ভাড়া নেবে দেড়শো থেকে ২শ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
এনইউ/জিপি/এসএনএস