চিত্রের এক দিদি ট্রেকারদের সুবিধার্থে চা, কফি, বিস্কুট বিক্রি করছেন। অবশ্য শরীর গরম করার আরও কিছু তরলও রয়েছে তার সংগ্রহে।
এর মধ্যে বৃষ্টিও কিছুটা ধরে এসেছে। কিন্তু মেঘের কারণে চারপাশে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আমরা শুধু পথটুকু অনুসরণ করছি। মাঝে-মধ্যেই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে ল্যাল্ড রোভারগুলো। হিমালয়ের স্বাদ বুঝি এমনই। কোথায় মাথার উপর গভীর নীল আকাশ থাকবে, রোদের ছোঁয়ায় রুপালি বরফ চূড়া দেখতে দেখতে হারিয়ে যাবো তা না, এই বিদঘুঁটে আবহাওয়ার সঙ্গে জুঝতে হচ্ছে। তবে শরীর এরই মধ্যে মানিয়ে নিয়েছে। হাঁটতে এখন আর কষ্ট হচ্ছে না। চলছি তো চলছিই।
এর মধ্যে টিমের মোস্তাফিজ ভাই, নাফিজা আপা পেছনে পড়ে গেছেন। আমি, সামী আর জুয়েল ভাই কখনও একা কখনও একসঙ্গে পথ চলছি। সত্যি কথা বলতে কি ঠান্ডাটুকু বাদ দিলে এখনও হিমালয়ের স্বাদ তেমন পাইনি। এসব ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলাম লামেধুরা। আমাদের দুপুরের খাবার জায়গা। খাবার বলতে স্যুপ নুডলস আর ডিম সিদ্ধ। ক্ষুধা লেগেছে রাক্ষসের মতো। গো গ্রাসে খেলাম। আমরা আজ রাত কাটাবো টুমলিংয়ে।
অনেকে অবশ্য টংলুতে রাতে থাকেন। মাঝেখানে পড়বে মেঘমা। ঘণ্টা দুই আড়াইয়ের পথ। সেখানে এসএসবির চেকপোস্ট রয়েছে। পাসপোর্ট এন্ট্রি করতে হবে। এই ট্রেকটা কখনও নেপাল কখনও ভারতের মধ্য দিয়ে গেছে। রাস্তায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের চেকপোস্ট থাকলেও নেপালি নিরাপত্তা বাহিনীর এ ধরনের কোনো স্থাপনা নেই। মেঘমাতেও ঘন মেঘমেদুর বিষণ্ন আবহাওয়া। পুরো দলের পাসপোর্ট এন্ট্রি করার ফাঁকে এখানকার এক লজে কফি পান হলো এক দফা।
এ ধরনের ট্রেকে ঘন ঘন পানি বা তরল পান করতে হয়। এতে উচ্চতাজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি কমে। মেঘমা থেকে টুমলিংয়ের দিকে দুটো রাস্তা গেছে। আমরা নেপাল অংশের রাস্তাটা ধরলাম। গাইডের কথামতো ভারতীয় অংশে যে রাস্তা টোংলু হয়ে টুমলিং পৌঁছেছে সেটি নাকি বেশি চড়াই।
এখন শেষ বিকেল। কিন্তু চারপাশের যে হালহকিকত তাতে সন্ধ্যা হওয়ার বাকি আছে কিছু? অনেক আগেই আশপাশের গ্রামের মানুষ ঘরে ঢুকে দোর দিয়েছে। অনেক দূর থেকে দেখা গেলো টুমলিং। পাহাড়ের গায়ে সুন্দর কিছু লজ দেখা যাচ্ছে। এখান থেকেই নাকি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আমাদের ভাগ্য ভালো হলে দেখতেও পারি। এর মধ্যে মেঘ সরে গিয়ে আকাশের কিছুটা নীল বের হয়ে এসেছে।
আপার টুমলিংয়ের পা রেখেই হৈ চৈ কানে এলো। দৌড়ে গেলাম এবং প্রথমবারের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘার ক্ষানিকটা অংশ নজরে এলো। দিগন্তে মেঘ সরে গিয়ে চূড়ার হালকা একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেটুকু নজরে এলো তাতেই আমি খুশি। সারাদিন যে আবহাওয়া দেখেছি তাতে এটিই তো বোনাস। অন্তত এতটুকু আশা তো জেগে উঠলো আগামী কাল থেকে আবহাওয়া পরিষ্কার হলেও হতে পারে। সেখানকার সিদ্ধার্থ লজে আমাদের থাকার ব্যবস্থা।
এই ডরমেটরিতেও সাতটি বিছানা। ২০০ রুপি করে মাথা পিছু ভাড়া। রাতের খাবার মেন্যু ঠিক করা হলো খিচুড়ি, পাঁপড় এবং ডিম ভাজি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়ার সেই এতটুকু অংশ চোখ দিয়ে গিলে লজে ফিরলাম। সাড়ে সাতটার মধ্যে খাওয়ার ডাক পড়লো। আহা খিচুড়ির কি অসাধারণ স্বাদ! গলা পর্যন্ত গেলাম। এই ২৯৭০ (৯৭৪৪ ফুট) মিটারেও যে মহাতৃপ্তি নিয়ে ভোজ সারলাম আশা করি শেষ পর্যন্তও পারবো।
চলবে....
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
এএ
** যে শহর অর্ধেক নেপাল, অর্ধেক ভারতের
** পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল
** ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত