চর্চার বিষয় যখন বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাস, তখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি আসেই। প্রসঙ্গত আসে, মাও সে তুঙের 'শত ফুল বিকশিত হোক' কথাটি।
এটা সকলেরই জানা, যে সমাজে অসংখ্য মতামত থাকে সেই সমাজই উন্নত এবং সমৃদ্ধ! কলকাতা ও বেঙ্গালুরু ভ্রমণে মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংবাদপত্র ও টিভিতে চাঞ্চল্যকর বিষয় খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। মানুষ দ্বিধাহীন চিত্তে নিজের মত লিখিত ও কথ্যভাবে প্রকাশ করেছে।
বৃষ্টির কলকাতায় রবীন্দ্র সরোবরে বর্ষার গান
সংবাদপত্র পাঠ একটা উৎসবের মতো। মোড়ে, বাসস্টপে পত্রিকা নিয়ে নিমগ্ন পাঠে লোকজন ব্যস্ত। গল্প-গুজব, হৈ-হট্টগোলের বদলে পাঠ্যচর্চা সত্যিই ভালো লাগে। ছোট মুদি দোকানি বা ভবনের পাহারাদারও দিব্যি নিজের পয়সা খরচ করে কাগজ পড়ছেন। আর আছে পাড়ায়, মহল্লায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিস লাগোয়া দলীয় মুখপত্র পড়ার স্ট্যান্ড। ভিড় করে শৃঙ্খলার সঙ্গে চলছে নীরব পাঠ।
বাসে, ট্রেনে, পাবলিক প্লেসে তরুণ-তরুণীরা আধুনিক মোবাইল হাতে ঘুরছে। শহরের প্রায়-সর্বত্র ওয়াইফাই সুবিধা থাকায় কেউ নেটওয়ার্কের বাইরে নেই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কেউ চিৎকার করে ফোনে কথা বলে শব্দ দুষণ ঘটাচ্ছে না। পড়ছে বা প্রয়োজনীয় তথ্য ডাউনলোড করছে। সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মানুষ। সচেতন ও মনোযোগী হয়েছে প্রযুক্তিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর দিকে। এভাবেই প্রথাগত সমাজের দক্ষিণ এশিয়ার দৃশ্যপট দ্রুতই বদল যাচ্ছে।
ঢাকায় ফিরে আসার সময় এসব কথা ভাবছিলাম। বেঙ্গালুরু, কলকাতা আর ঢাকার এরিয়াল ভিউ তুলনা করছিলাম আসা-যাওয়া সুযোগে। বেশি নয় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ফুট ওপরে বসে আছি এয়ারলাইন্সের অন্দরে! সত্যিই প্রযুক্তি কোন অবিশ্বাস্য বিন্দুতে পৌঁছে দিল আমাদের!! বেশ মজা, এরপর তো অন্তরীক্ষেও দিব্যি ছেলে-মেয়েকে হোয়াটস অ্যাপ করা যাবে!!!!
কিন্তু আমরা সেটা করছি না। সামাজিক-পারিবারিক-ব্যক্তিগতভাবে অশান্তি করছি প্রয়ুক্তিতে ভুলভাবে প্রয়োগ করে। বহু অশান্তির মূলে রয়েছে একটি ফেস বুক পোস্ট!! চারপাশে ভুল বার্তায় বিভ্রান্ত বিপথগামী হচ্ছে সাধারণ মানুষ প্রয়ুক্তির ভুল ব্যবহারের কারণে।
বস্তুত আমরা এমন একটা সময়ে প্রবেশ করেছি যেখানে সোশাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে যে কোনও রকম প্রতিবাদ বা প্রতিশোধের অস্ত্র, তা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হতে পারে, কোনও বিশেষ পক্ষের বিরুদ্ধে হতে পারে, হতে পারে যে কোনও কিছুর বিরুদ্ধে! এটা এমন একটি অস্ত্র যার সামনে সবাই অসহায়, এই অস্ত্র থেকে আগুন বের হয় না, কিন্তু আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, চোখের পলকে নষ্ট করে দিতে পারে সামাজিক শান্তি। কারো হঠকারি আচরণের মাশুল গুণতে হচ্ছে একটা গোটা জনপদকে!
এ ব্যাপারে সচেতন হতে না পারলে, সংযম দেখাতে না পারলে আরও ভয়াবহ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। একটু ভেবে দেখুন, আগ্নেয়গিরির ওপরে বসে আছি আমরা, সব কিছু নিয়ে ছেলেখেলার সময় এটা নয়!!!
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার অযথা বিতর্কে না গিয়ে শান্তির সন্ধান করাই কর্তব্য। প্রয়ুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কল্যাণ, শান্তি ও পারস্পরিক উন্নয়নে নিয়োজিত করার আঞ্চলিক উদ্যোগই কাম্য।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৭
জেডএম/