প্যারাসেইলিং নামের অ্যাডভেঞ্চারে করে পর্যটক আকাশ থেকে দেখতে পারেন সমুদ্র ও পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য । এখন এটি বাংলাদেশেই হচ্ছে।
বাংলাদেশে কেবল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দরিয়ানগর ও হিমছড়িতে আকাশে উড়ার এই সুযোগ মিলছে। থাইল্যান্ডের পাতায়া বা ইন্দোনেশিয়ার বালি’র মতো ‘প্যারাসেইলিং’ এখন বাংলাদেশেই চলছে। শীত, বর্ষা, গরম সব ঋতুতে চলছে আকাশে উড়াউড়ির খেলা।
অ্যাডভেঞ্চারের এ স্বাদ নিতে গত সপ্তাহের এক দুপুরে আকাশপানে আবার উড়তে যাই। সুগন্ধা সৈকতের অদূরে। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্বে দরিয়ানগর সাগর তীর থেকে উড্ডয়নের পালা।
প্রায় এসে পড়া শীতের এ সময়ে হেলে পড়া সূর্যের দুর্বল তেজে আকাশে উড়ার প্রস্তুতি। গায়ে বেঁধে দেয়া হলো প্যারাশ্যুটের রশি। বালুকাময় তীর ছেড়ে এবার আকাশে ….
নিচে রশি টেনে ধরেছে স্পিডবোট। তার আগে মাত্র ২ মিনিটের একটি ব্রিফ দিয়ে দিলেন একজন প্যারাসেইলিং ইনস্ট্রাকটর। হাত ধরে রাখা আর নামার সময় রশি টানার নিয়ম এই যা ….
আকাশের বাতাসে দোল খেয়ে উড়ে উড়ে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের ঢেউ, একপাশে সাগর আরেক পাশে পাহাড়। এই দুয়ের মিশেল পাখির চোখে দেখার মতো রোমাঞ্চকর অনভূতিতে ভাসছি।
রোমাঞ্চ আরো একটু বাড়াতে কয়েকশ’ ফুট ওপর থেকে সাগরে পা ভিজিয়ে আবার উড়াল দেয়ার সুযোগও দেয়া হয়। তারপর তীরের বালুতে নির্বিঘ্নে পা ফেলে নেমে আসা।
দরিয়ানগরে ‘স্যাটেলাইট ভিশন’ এবং হিমছড়িতে ‘ফানফেস্ট’ নামে একই মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন পর্যটকদের জন্য খুলেছে এই অ্যাডভেঞ্চার।
আকাশ থেকে একটু সমুদ্রে নামিয়ে আবার আবার উড়াল দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। থাকতে হয় একটু সাহস... এই যেমন রেজওয়ান-সামিরা দম্পতির মতো। তারাও কক্সাবাজারে এসেছেন সপ্তাহখানেক হলো। শুধু হোটেল আর বিচ-এ গিয়ে তিনদিন কাটার পর নতুন কিছু খুঁজছিলেন। পেয়ে গেলেন প্যারাসেইলিং।
প্রথমেই সাহস দেখালেন সামিরা। গায়ে বেঁধে নিলেন প্যারাশ্যুট। নিচে তার স্বামী রেজওয়ান মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করছিলেন।
আকাশে প্রায় ৫ মিনিট থাকার পর নিচে নেমে এসে সামিরা বললেন, ‘আনন্দটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না’।
শেষে রেজওয়ানও চড়লেন প্যারাসেইলিংয়ে। অনুভূতি জানালেন একসঙ্গে। বললেন, ‘সত্যিই প্যরাসেইলিং না করলে বোঝানো যাবে না এটা অসাধারণ অনুভূতি। আবার আসবো, আবার প্যারাসেইলিং করবো….’
প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠান ফানফেস্টের কর্মীরা জানান, তাদের কাছে ‘সেফটি ফার্স্ট’। এ কারণে আবহাওয়া অনুকূল না হলে প্যরাশ্যুট উড়ানো হয় না। সে সময় অনেকেই এসে মন খারাপ করে ফিরে যান। কেউ কেউ সারাদিন অপেক্ষা করেন। কেউ কেউ পরের দিন বা তার পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বা শীতকালে আবহাওয়া সম্পূর্ণ শান্ত থাকে বলে প্যারাসেইলিংয়ে কোনো সমস্যা নেই।
সাগরে ছাড়াও সাগরতীরে ল্যান্ড প্যারাসেইলিং করা যায়। রশি দিয়ে বেঁধে শুধু সাগর তীরের আকাশে উড়ার সুযোগ রয়েছে এতে।
কক্সাবাজারে ‘ফানফেস্ট’ ও ‘স্যাটেলাইট ভিশন’ বিদেশের সি-বিচগুলোর মতো আরো ‘বিচ অ্যাটিভিটিস’ চালু করবে কিছুদিনের মধ্যে।
ফানফেস্ট বিচ অ্যাক্টিভিটিস-এর চেয়ারম্যান শামসুর রাহমান বাংলাদেশে সি-স্পোর্টস-এ আরো নতুন অধ্যায় যোগ করতে যাচ্ছেন। প্যারাসেইলিং ছাড়াও এই মৌসুমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিচের মতো বিচ অ্যাক্টিভিটিস যোগ করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
আর এসব আকর্ষণের টানে বিদেশি পর্যটকরা ব্যাপক আকারে ভিড় করবেন কক্সবাজারে-এমন প্রত্যাশা তার।
এখন ‘ফানফেস্ট ও স্যাটেলাইট ভিশন’ কক্সবাজারে প্যারাসেইলিংয়ের ২ টি প্যাকেজ করে থাকে। একটি হলো ‘ফান প্যারাসেইলিং এবং অন্যটি সুপার ফান প্যারাসেইলিং। এছাড়াও এখানে রয়েছে বোট রাইডিং, জেট স্কি, বিচ বাইক, এবং ক্যান্ডেল-লাইট ডিনার করার সুযোগ।
ফান প্যারাসেইলিং এর ক্ষেত্রে সমুদ্র সৈকত থেকে দুই কিলোমিটারের একটি চক্কর দেয়া হয়। আর সুপার ফান-এ বিচ থেকে ফ্লাই করিয়ে দেড় কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের সাড়ে চারশ’ ফুট ওপরে তোলা হয়। সেখান থেকে আবার সি-টাচ বা সমুদ্রে পা ভিজিয়ে দিয়ে আবার ৪শ’ ফুট তুলে আরো দেড়কিলোমিটার রাইড দিয়ে ফের বিচে নামিয়ে আনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এসএ/জেডএম