রোগ নিরাময়ের টনিক নীলাচল। ছবি: বাংলানিউজ
বান্দরবান: ‘হাওয়া বদল’ অতিপ্রাচীন রোগ নিরাময়ের টনিক। মানে জায়গা বদল করে কিছুদিনের জন্য পছন্দের কোনো গন্তব্য থেকে বেড়িয়ে আসা। আর এতেই অসুস্থ শরীরের উন্নতি দেখতেন চিকিৎসক। হালের প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসা এই ‘হাওয়া বদল’ চিকিৎসা কমে গেলেও বিলুপ্ত হয়নি। মানুষ এখন নিজেই বোঝে কোথায় গেলে সে শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে অনেকটা। বান্দরবানের নীলাচল তেমন এক স্বর্গীয় অনূভূতি ছড়ানো পর্যটন গন্তব্য।
ঈদের ছুটিটা কাজে লাগিয়ে তাই ঘুরে আসতে পারেন বর্ষার অনন্য বান্দরবান থেকে।
পাহাড়ি রাস্তায় বেশি জার্নি করতে না চাইলে তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট পাহাড় নীলাচল।
যেখান থেকে সকালে সূর্যোদয় ও বিকেলের রোমাঞ্চকর সূর্যাস্ত দেখা যায়। নীল আকাশ যেখানে পাহাড়ে এসে ঘুমায়। আর আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়বে দর্শনার্থীদের। কথিত আছে নীলাচলের বিশুদ্ধ শীতল বাতাস যেকোনো পুরনো রোগ নিরাময়ের টনিক হিসেবে কাজ করে। এক কথায় বলা যায় মানসিক প্রশান্তির আরেক নাম নীলাচল। প্রায় ২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ পাহাড়টি। যে দিকে দু’চোখ যায় সেদিকেই সবুজ ও নীল আকাশের হাতছানি। চারপাশে সবুজ পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকা-বাঁকা রাস্তা চলে গেছে দূর-দূরান্তে। তাছাড়া নীলাচলের সৌন্দর্যে ভিন্নতা এনে দেয় বর্ষা মৌসুমে। এই পাহাড় থেকে পাখির চোখে দেখা যায় বান্দরবান শহর। এসময় কখনো রোদ্দুর কখনো বৃষ্টির পরশ ভ্রমণপিয়াসুদের মনে আনে স্বর্গীয় অনুভূতি। সেখানে নির্মিত হয়েছে ‘ঝুলন্ত নীলা’ ‘নীহারিকা’ ও ‘ভ্যালেন্টাইন’ পয়েন্ট নামে বেশ কিছু স্পট। যেখান থেকে নীলাচলের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাছাড়া ভরা পূর্ণিমা রাতে যদি নীলাচলে কাটাতে চান তাহলে সেভাবেই দিনক্ষণ ঠিক করে ঘুরে আসতে পারেন। জোৎস্না রাতে নীলাচলের সৌন্দর্য দেখা না হলে নীলাচলের সৌন্দর্য অবলোকনে অপূর্ণতা রয়েই যাবে। দিনভর পাখ-পাখালির কিচির মিচির শব্দে মুখরিত এ জায়গাটির আশপাশের পাহাড়ের ঢালুতে দেখতে পাবেন তঞ্চঙ্গ্যা, বম সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড়ি গ্রাম ও আদিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখতে চাইলে হেঁটে যেতে হবে পাহাড়ের পাদদেশে। তবে সাবধান, বর্ষায় পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তা বেশ বিপদজনক আর জঙ্গলে বিষাক্ত সাপের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। সাপ কিংব্য বন্যপ্রাণী দেখলে কিছুতেই উত্যক্ত করবেন না, বিপদ ঘটে যেতে পারে।
নীলাচলে নীলাম্বরী নামে একটি আকর্ষণীয় রিসোর্ট রয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সাধারণ দর্শনার্থীদের থাকার সুযোগ থাকলেও রিসোর্টের অতিথিরা সর্বক্ষণ থাকার সুযোগ পাবেন সেখানে। প্রতিটি কটেজে দু’টি করে রুম আছে, প্রতিটি রুমের ভাড়া ৩০০০ টাকা। নীলাচলে রাতযাপন করতে চাইলে আগেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো।
বান্দরবান শহর থেকে ভাড়ায়চালিত বেবি ট্যাক্সি, চাঁদের গাড়ি, জিপ নিয়ে ১৫-২০ মিনিটে নীলাচল যাওয়া যায় খুব সহজেই। ভাড়া গুনতে হবে ৪০০-৮০০ টাকা। নীলাচলে পাহাড়ের ঢালুতে রয়েছে তিনটি নীল রঙের দৃষ্টিনন্দন কটেজ ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি রেস্টহাউজ। কটেজগুলো ভাড়ায় পাওয়া যায়, আর রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপন করতে হলে আগেই নিয়ে নিতে হবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৯
এএ
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।