ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬৩)

none | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬৩) পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার।

নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৬৩
মিডওয়ে ইন (লোহাগাড়া)- ঈদগাঁও (কক্সবাজার)= ৪৯.১০ কিমি

নুডলস, ছোলা-বুট, চা সহযোগে রিয়াদের বাসায় জম্পেশ নাস্তা শেষে রাস্তায়। কালকের হাঁটার শেষ পয়েন্ট ছিল হোটেল মিডওয়ে ইন। লেগুনায় চেপে সেখানে পৌঁছেই শুরু হন্টন। নলবনিয়া পার হতেই প্রচুর সেগুন বাগান। এই রাস্তায় আমার অসংখ্য বন্ধুর বাড়ি।  

হাঁটতে হাঁটতে আমি কার বাড়ি কোনখানে সেটা মনে করার চেষ্টা করছি। ‘সাবধান, হাতি চলাচলের পথ’- লেখা সাইনবোর্ডগুলো জানান দিচ্ছে এদিকে একসময় হাতির বেশ উৎপাত ছিল। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটা ফটকের ভেতরে পায়ে হাঁটার একটা ট্রেইল। বনের ভেতরে ঢোকা যায় এই ট্রেইল দিয়ে। একটু পরেই প্রবেশ করলাম কক্সবাজার জেলায়। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কিছু অংশ পড়েছে কক্সবাজার জেলাতেও।
খানিক বাদেই রাস্তার দুই পাশে দুই জেলা। রাস্তার পূর্ব পাশে বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর। কক্সবাজার জেলার উত্তর হারবাং রাস্তার পশ্চিম পাশে। এই রাস্তার অনেক ছোট বাজারও এই পথে অসংখ্যবার আসা-যাওয়ার সূত্রে আমার চেনা। চলতি পথে গাড়িগুলো নামাজ ব্রেক দিতে থামতো এ পথের ছোট্ট সব বাজারে।  

চুনতি অভয়ারণ্যের রাস্তার পাশের অংশে সামাজিক বনায়নের গাছ দৃশ্যমান। একটু ভেতরের দিকে উঁকি দিলেই বন ফাঁকা ফাঁকা। গাছের সংখ্যা কম ভেতরের দিকে। হারবাং এর নতুন বাজারের কাছে দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল। কচিকাঁচাদের ভিড় স্কুল প্রাঙ্গণে। হারবাংয়ে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে নার্সারি। হরেক রকমের গাছ দেখতে ভালোই লাগছিল।
ইনানী রিসোর্ট ছাড়িয়ে বরইতলী। বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা থেকে ডানের রাস্তাটা গিয়েছে মগনামা ঘাট অবধি। কুতুবদিয়া যাওয়ার পথ এটাই। বরইতলী গ্রামে প্রচুর গোলাপের চাষ হয়। রাস্তার দু’পাশে ধানক্ষেতের বদলে গোলাপ ক্ষেত। সবুজ গাছের শীর্ষের লাল গোলাপগুলো ঘিরে ফুলচাষিদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে এই সকালবেলাতেই। বানিয়ারছড়ার কাছে এক পিচ্চি আমাকে দেখে পেছন থেকে বলে উঠলো- ফঅল ফানলার (পাগল মনে হয়)। গোলাপ ক্ষেত শেষ হতেই শুরু টমেটোর ক্ষেত। ক্ষেতের পর ক্ষেতজুড়ে এই একটাই ফসল। মহাসড়ক যেখানে বাঁক নিয়ে চকরিয়ার দিকে এগিয়েছে, সেখানে মহাসড়ক ছেড়ে ধরলাম ছিকলঘাটের রাস্তা। লক্ষ্যার চর হয়ে মাতামুহুরী সেতুর কাছে আবার মহাসড়কে। নতুন সেতুর কাজ চলছে মাতামুহুরীর পাড়ে।
সেতু পেরিয়ে চিরিংগা। চকরিয়ার প্রাণকেন্দ্র এ জায়গাটা প্রচণ্ড রকম ব্যস্ত। মহাসড়কের পাশে ছোট লেন করা আছে হালকা যানবাহনের জন্য। সেই ছোট লেনেও হাঁটা যাচ্ছে না টমটম আর সিএনজি অটোরিকশার ভিড়ে। তার উপর হর্নের শব্দে কান পাতা দায়। ভেন্ডি বাজার পার হয়ে ফাঁসিয়াখালী। এখান থেকেই বামের রাস্তাটা লামা হয়ে আলীকদমের দিকে এগিয়েছে। এর ঠিক পরপরই শুরু হলো ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। কিছুদূর এগিয়ে মালুমঘাট। মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতাল নামক একটা হাসপাতাল আছে এখানে। এ অঞ্চলে এর বেশ নাম-ডাক। বন্ধু জিতুর বাসা এই হাসপাতালের গোছানো কম্পাউন্ডের ভেতরেই। মালুমঘাট ছাড়াতেই ডুমখালী। এ অঞ্চলে 'খালী' নামটা বেশ প্রচলিত।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের অবস্থান ডুলাহাজারা বাজারের কিছুটা আগেই। একসময় বেশ নাম-ডাক থাকলেও ইদানীংকালে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এই পার্ক। উলুবনিয়া রাস্তার মাথা পেরিয়ে ডুলাহাজারা বাজার। বেশ কিছু লাল মাটির টিলা পড়লো পথে। টিলাগুলো শেষ হতেই মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান শুরু। এই উদ্যানের মূল আকর্ষণ শতবর্ষী গর্জন গাছগুলো। গর্জন গাছের বিশাল কাণ্ডের উপরের অংশের ডাল-পালাগুলো ছাতার আকার নিয়েছে। খুটাখালী বাজারের আগে সঙ্গী হলো জাবেদ। ও আজ সকালে এসে যোগ দেওয়ার কথা। ঘুমের ঘোরে পড়ে আসতে পারলো শেষ বিকেলে। নতুন অফিস নামক জায়গা থেকে চকরিয়া ছাড়িয়ে প্রবেশ করলাম কক্সবাজার সদর উপজেলায়। জাবেদের সঙ্গে রংমিস্ত্রি বিষয়ক গল্প করতে করতে নাপিতখালী হয়ে শাহ ফকির বাজার। আজকের দিনের হাঁটায় ইস্তফা দিলাম ঈদগাঁও পৌঁছে।
চট্টগ্রাম থেকে আমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যেই বাইকে রওয়ানা দিয়েছিল এমরান আর পলাশ। ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো এখানেই। ছোলা-বুট খেয়ে আমরা রওয়ানা দিলাম চকরিয়ার উদ্দেশ্যে। আজ থাকার ব্যবস্থা চকরিয়াতে ইফতেখারের গ্রামের বাড়ি। এমরান আর পলাশ রওয়ানা দিল কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। মাইক্রোযোগে চকরিয়া পৌঁছে দেখা হয়ে গেলো সব পরিচিত মুখের সঙ্গে।  

শিহাব ভাই, জাকির ভাই, ইয়াসির ভাই, তানিম ভাই, কাউসার ভাই আজ আর কাল সঙ্গ দিতে চলে এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। এর মধ্যেই ফোনে কথা হচ্ছিল চকরিয়ার আদনান ভাইয়ের সঙ্গে। খানিক বাদেই চকরিয়ার সামাজিক সংগঠন পিস ফাইন্ডারের সদস্যরা চলে এলেন জনতা শপিং সেন্টারের সামনে। ক্রেস্ট, টি-শার্ট আর একটা বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে আবদ্ধ করলেন ঋণে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চলে এলেন আরো দুই প্রিয় মুখ ফরহান ভাই আর মারুফ ভাই। রাত হয়ে গেলেও এখনো দেখা নেই সাকিব, লাভলু ভাই আর ইসমত ভাইয়ের। ওদের পথ শেষ হচ্ছে না এখনো।

চলবে...

আরও পড়ুন...
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।