ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

বেবিকর্নে অভাবনীয় সাফল্য, আরও ৮ জেলায় চাষের পরিকল্পনা

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
বেবিকর্নে অভাবনীয় সাফল্য, আরও ৮ জেলায় চাষের পরিকল্পনা রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের এগ্রোনমিস্ট মধুমিতা চক্রবর্তী

আগরতলা (ত্রিপুরা): সুপ থেকে শুরু করে রেঁস্তোরায় বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে বেবিকর্ন। এর ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর ২০২২ সালের খারিফ মৌসুমে রাজ্যে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে বেবিকর্ন চাষ শুরু করে।

 

আগরতলার অরুন্ধুতিনগরের রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা প্লটে এই বেবিকর্ন চাষ করা হয়। প্রথমবারেই বাজিমাত করেছে দপ্তর। রাজ্যে এর বাম্পার ফলন হয়েছে ও চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

এরপর রাজ্যের ঊনকোটি এবং ধলাই জেলার মোট ৫০ হেক্টর জমিতে বেবিকর্ন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৫ হেক্টরের বেশি জমি থেকে ফসল আবাদ করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন রাজধানী আগরতলার অরুন্ধুতিনগরের রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের এগ্রোনমিস্ট মধুমিতা চক্রবর্তী।  

প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত এই কর্মকর্তা বলেন, ঊনকোটি জেলায় ৪০ হেক্টর এবং ধলাই জেলার ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১৪১ জন চাষি যুক্ত রয়েছেন।  

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রথম বেবিকর্ন চাষ শুরু হয়। এগুলো স্বল্পমেয়াদি ফসল, তাই বীজ থেকে ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মাথায় ফসল তুলে নেওয়া যায়। কৃষকদের মাঠ থেকেই পাশের রাজ্যের এক বেসরকারি সংস্থা ফসলগুলো সংগ্রহ করে নিচ্ছে। ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট এলাকায় এই সংস্থার একটি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে। এখানে এনে বেবিকর্নগুলো প্রক্রিয়াকরণের পর প্যাকেট করে অন্য রাজ্যে রপ্তানি করছে। এখন পর্যন্ত ওই সংস্থাকে চাষিরা ১০ টনের বেশী বেবিকর্ন সরবরাহ করেছেন।

মধুমিতা চক্রবর্তী বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ধাপে ধাপে চাষ হচ্ছে, তাই ধারণা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফসল উৎপাদন চলবে। চাষিরা গড়ে প্রতি বিঘা থেকে ৩০ হাজার রুপির বেবিকর্ন পাইকারি দামে বিক্রি করছেন। ফসলগুলো পাইকারি দামে বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় এলাকার বাজারেও বিক্রি করছেন তারা।

চাষিদের রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের তরফে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তাদের বিঘাপিছু প্রায় সাড়ে তিন হাজার রুপি করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সার, বীজসহ মাঠ পর্যায়ের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে দপ্তরের তরফে।

ত্রিপুরা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের এই এগ্রোনমিস্ট বলেন, ফসল বিক্রির পাশাপাশি পরিত্যক্ত গাছগুলো বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কারণ এই গাছগুলো পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো প্রতি কেজি ৩ রুপি দামে বিক্রি করছেন তারা। স্বল্পমেয়াদি ফলস হওয়ায় এবং দাম অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি হওয়ায়, বেবিকর্ন চাষে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। তাই তারা এগুলো চাষ করে বেশ খুশি।

খারিফ মৌসুমে এই ফসল চাষে ব্যাপক সাফল্য আসায়, দপ্তর রবি মৌসুমেও পরীক্ষামূলকভাবে বেবিকর্ন চাষ করছে বলে জানান মধুমিতা চক্রবর্তী।  

তিনি আরও বলেন, রবি মৌসুমেও এর ফলন ভালো হচ্ছে। শীতের কারণে গাছে ফুল ও ফল আসতে একটু বেশি সময় লাগছে। ফল আসার প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হচ্ছে।  

পরিপূর্ণ গাছে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া প্রয়োগ করলেই দ্রুত ফুল আসছে বলেও জানান।

সব মিলিয়ে নতুন এই ফসল চাষে রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাই আগামী দিনে রাজ্যের আট জেলাতেই বেবিকর্ন চাষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের এই এগ্রোনমিস্ট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
এসসিএন/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।