আগরতলা (ত্রিপুরা): প্রতি বছর ২০ মে দিনটিকে বিশ্ব মৌমাছি দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে এই দিবস পালন শুরু হয়েছে।
কৃষি বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সময় মৌমাছির জীবনচক্রের ওপর তিনি গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন। কারণ তার পড়াশোনার বিশেষ বিষয় ছিল মৌমাছির জীবনচক্র ও তাদের কার্যকলাপ।
আমরা সবাই জানি, মৌমাছি মধু উৎপাদন করে। মধু একদিকে যেমন খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তেমনি এর রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। প্রাকৃতিক ও খাঁটি মধু শুধু মৌমাছিই উৎপাদন করতে পারে।
তবে শ্রীকান্ত নাথের মতে, মধু উৎপাদন মৌমাছির একমাত্র কাজ নয়, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ধরে রাখা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা ও গাছপালার বংশ বিস্তারের জন্য মৌমাছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি হঠাৎ করে কোনো কারণে পৃথিবী থেকে মৌমাছি হারিয়ে যায়, তাহলে হাজার হাজার উদ্ভিদ এবং লতা-গুল্মও পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাবে। এর কারণ হচ্ছে উদ্ভিদের পরাগায়ণ এবং বংশবিস্তারে ক্ষেত্রে মৌমাছি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সাধারণ মানুষদেরকে এই বিষয়ে সচেতন করতে এবং মৌমাছি রক্ষায় আরও বেশি আগ্রহী হওয়ার জন্য বিশ্ব মৌমাছি দিবস উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও মৌমাছি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে ফল ও শস্যদানা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরাগায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মৌমাছি। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পৃথিবীর প্রায় ১১৫ ধরনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাদ্য শস্যের মধ্যে প্রায় ৯০ প্রজাতির পরাগায়ণের জন্য মৌমাছি অথবা অন্যান্য পরাগায়ণকারি পতঙ্গের প্রয়োজন।
কি নেই সেই তালিকায়! আপেল, আলমন্ড, বিভিন্ন প্রজাতির বীজ, বিট রুট, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, বেগুন, আদা, আঙ্গুর, লেটুস, সরিষা, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, মুলা, স্কোয়াশ, সূর্যমুখী ফুল, মিষ্টি আলু, তরমুজ ইত্যাদি। তাই পশ্চিমা দেশে শুধুমাত্র পরাগায়ণের কাজে মৌমাছির বক্স ভাড়া দেওয়া হয়। উত্তর আমেরিকায় প্রতি বছর ১৫ লাখ মৌমাছি বাক্স ভাড়ায় দেওয়া হয় এবং এই বক্স দিয়ে যে পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়, তা প্রায় বছরে এক হাজার ৫০০ কোটি আমেরিকান ডলার দেশটির অর্থনীতিতে যুক্ত হয়।
ভারতের ক্ষেত্রে মৌমাছি নির্ভর কৃষি জমির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি হেক্টর, যার জন্য প্রয়োজন প্রায় এক হাজার ৫০০ লাখ মৌমাছির কলোনি। অথচ বর্তমানে ভারতের আছে সর্বসাকুল্যে ১২ লাখ মৌমাছির কলোনি, যা বাণিজ্যিকভাবে পরাগায়ণে ব্যাবহার করা হয়। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, এই খাতে কত বেশি কাজের এবং রোজগারের সম্ভাবনা রয়ে গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে মৌমাছির দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ণ করালে স্বাভাবিকের চেয়ে ফলনের মাত্রা বেড়ে যায় অনেকগুণ। যেমন সরিষার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ফলনের প্রায় চার শতাংশ, সূর্যমুখী ফুল ৩২-৪৮ শতাংশ, কার্পাস ১৭-১৯ শতাংশ, পেঁয়াজ ৯৩ শতাংশ, আপেল ৪৪ শতাংশ, এলাচ ২১-৩৭ শতাংশ। শুধুমাত্র পরাগায়ণের জন্য প্রতি বছর যে পরিমাণ অর্থনৈতিক লাভ মৌমাছি এনে দেয়, সেটার অংক পুরো বিশ্বে প্রায় ২২৪ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার।
তাই আমরা মৌমাছি থেকে মধু বা মধুর সঙ্গে যেসব উপাদান পাই, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানব সভ্যতা রক্ষায় সঠিক পরিবেশের ভারসাম্য।
এক্ষেত্রে শ্রীকান্ত নাথের মতে, মৌমাছির পরাগায়ণ পদ্ধতি আরও বেশি করে প্রয়োগ করা উচিত। এর ফলে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার অনেকটাই কম হবে। ফলে পরিবেশও দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
তবে এখন লাগামহীনভাবে কৃষিকাজে সার ও কীটনাশক ঔষধের প্রয়োগ, সেই সঙ্গে সবুজ বন ধ্বংস হওয়ার কারণে মৌমাছিদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। হারিয়ে যাচ্ছে বহু জাতের মৌমাছি। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে একদিন হয়তো উপকারী এই পতঙ্গটিও হারিয়ে যাবে পরিবেশ থেকে। তাই আগেভাগেই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে মৌমাছি রক্ষার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
এসসিএন/এসআইএ