এর অবস্থান ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের আসাম রাজ্যের যোরহাট জেলায়। আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কিলোমিটার দূরে।
৯শ’ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই দ্বীপ অনেক বিরল ও বিষধর প্রজাতির প্রাণী, গাছপালা ও পাখীর বিচরণ ভূমি। দ্বীপটিও পরিযায়ী পাখীদেরও প্রিয় আবাস স্থল। তাই প্রতি বছর এই দ্বীপে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখী আসে। বাসা বাঁধে। বংশ বিস্তার করে ফিরে যায় শাবকদের নিয়ে।
হুনোয়ালকাছারী, মিশিং, দেউরি ইত্যাদি আদিম আদিবাসীরও দেখা মেলে মাজুলী দ্বীপে।
অসমীয়া জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন শঙ্কর দেব ষোড়শ’ খ্রিস্টাব্দে তার নতুন ভাবধারার জন্ম দিয়েছিলেন এই মাজুলীতেই। যে ভাবধারা অসমীয়াদের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে।
৫শ’ বছরেরও বেশী পুরাতন শত্র (সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র) ব্যবস্থার উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা যায় মাজুলীর এদিকে ওদিকে। তাই মাজুলীকে আসাম রাজ্যের সাংকৃতিক রাজধানী বলা হয়। এখানে নিজস্ব কিছু নৃত্য শৈলী রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল ক্ষত্রীয় নৃত্য, গায়ন বায়ন, সূত্রধর, উজাবালী নৃত্য ইত্যাদি। আর এসব কিছুরই প্রাণ পুরুষ শঙ্কর দেব।
মাজুলী এমন একটি স্থান যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অংখ্য ছোট বড় শত্র। শুধু টিকিয়ে রাখাই নয়, নিষ্ঠার সঙ্গে শত্রের প্রাচীন রীতি নীতি মেনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকিয়ে রাখছেন এখানকার বাসিন্দারা। আসাম রাজ্যের রাজধানী গৌহাটি থেকে নিয়মিত দিন ও রাত্রীকালীন বাস সার্ভিস রয়েছে মাজুলী পর্যন্ত। বাসে করে প্রথমে যোরহাট আসতে হবে। সেখানে পাবলিক স্ট্যান্ড থেকে নিমাতিঘাট পর্যন্ত ছোট গাড়িতে করে যেতে হবে। দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। সারা দিন কিছুক্ষণ পর পরই ছোট গাড়ি ছাড়ে। ভাড়া মাথা পিছু মাত্র ১৫ রুপি। ফেরীতে করে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর দিয়ে মাজুলী যেতে হয়। যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টার কিছু বেশী। মানুষের পাশাপাশি পণ্য সামগ্রী, এমনকি বাইসাইকেল, বাইকসহ গাড়িও মাজুলীতে নিয়ে যাওয়া হয় ফেরিতে করে।
ফেরী থেকে নেমে ফের গাড়িতে চেপে মাজুলীর সব চেয়ে বড় জনবসতি পূর্ণ ও বাজার এলাকা কমলাবাড়ী যেতে হয়। সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে ইচ্ছে মতো বেড়ানো যায়। চাইলে ঘোরা যায় আসাম সরকারের পর্যটন দফতরের বাসেও। যেদিকেই যান, চোখে পড়বে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
জেডএম/