ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

পৌষ সংক্রান্তির বাতাসা-তিলুয়া তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
পৌষ সংক্রান্তির বাতাসা-তিলুয়া তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর বাতাসা-তিলুয়া তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরা। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা: আগামী ১৪ জানুয়ারি (রোববার) পৌষ সংক্রান্তি। সমগ্র পশ্চিমবাংলা, বাংলাদেশ, ত্রিপুরাসহ আসাম রাজ্যের বরাক ভ্যালিতে ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয়। একে মকর সংক্রান্তিও বলা হয়ে থাকে।

অপরদিকে আসাম রাজ্যের অসমীয়া জাতি গোষ্ঠির মানুষরা এই উৎসবটিকে ভোগালী বিহু নামে পালন করে থাকেন। উৎসবের নাম ভিন্ন হলেও আয়োজন একই থাকে।

মূলত এই সংক্রান্তিতে পিঠাপুলি, পায়েস তৈরি করা হয়। এ উৎসবের অন্যতম দু’টি খাবার হলো বাতাসা ও তিলুয়া (কদমা)।  

এ তিলুয়া ও বাতাসা অতিপ্রাচীন প্রথাগত দু’টি মিষ্টি জাতিয় খাবার। এখন বর্তমান যুগে আধুনিক নানান স্বাদের মিষ্টির ভিড়ে তিলুয়া ও বাতাসার কদর প্রায় নেই বললেও চলে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হরিনাম সংকীর্তনের সময় তিলুয়া ও বাতাসার প্রয়োজন হয়। আর সারা বছর এ দু’টি খাবারের কথা মনেই রাখেনা ভোজন রসিক বাঙালিরা। তবে সারা বছর ভুলে থাকলেও মকর সংক্রান্তি এলে এ দুই সুমিষ্টর চাহিদা বেড়ে যায়। মকর সংক্রান্তি তিলুয়া ও বাতাসা ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। তাই সিলেট অঞ্চলে এটি তিলসংক্রান্তি নামে পরিচিত।

আগে বাতাসা ও তিলুয়া কারখানা প্রচুর সংখ্যায় থাকলেও এখন দিন দিন এই সব কারখানা হারিয়ে যাচ্ছে।

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার মহারাজগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একটি কারখানায় তিলুয়া ও বাতাসা তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগরেরা। ছয়জন কারিগর মিলে তিলুয়া তৈরি করছেন ও দু’জন বাতাসা তৈরি করছেন। তারা বিরামহীনভাবে কাজ করে চলছেন।
বাতাসা-তিলুয়া তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরা।  ছবি: বাংলানিউজ
কারখানার মালিক দ্বীপতেশ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, মহারাজগঞ্জ বাজারের পুরাতন চারটি বাতাস কারখানার মধ্যে একটি তার কারখানা। তাদের তিন পুরুষের এ ব্যবসা। তার ঠাকুরদা ১৯৫২ সালে এ কারখানা চালু করে ছিলেন। তারপর তার বাবার হাত ধরে তার কাছে এসেছে কারখানাটি।

তিনি বলেন, সারা বছর তিলুয়া ও বাতাসার চাহিদা না থাকলেও মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে চাহিদা বেশি থাকে। তাই এ সময় কারখানায় দিন-রাত্রি কাজ হয়। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ কুন্টাইল তিলুয়া তৈরি করা হয় এবং ৩ থেকে ৫ কুন্টাইল বাতাসা তৈরি করা হয়।

চাহিদা বাড়তে থাকলে আরও বেশি তৈরি করা হয়। তাই এ সময় অধিক সংখ্যক কারিগর বেশি মজুরি দিয়ে কাজে রাখেতে হয় বলেও জানান তিন।

এসব কারিগরেরা সারা বছর ভিন্ন কাজ করে থাকেন। সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে তারা আগরতলায় এসে এসব কারখানায় কাজ করেন। তবে এ মিষ্টি জাতিয় খাবারের চাহিদা কমতে থাকায় কারিগর সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। কারণ নতুন প্রজন্ম এ কাজে আসতে চাইছে না। তাই সংক্রান্তির মৌসমে কারিগর পেতে অনেক কষ্ট হয়- বলেন দ্বীপতেশ সাহা।

প্রতিকেজি তিলুয়া ও বাতাসা ৬০ রুপি করে পাইকারি বিক্রি করা হয়। বড় আকারের তিলুয়া প্রতিকেজি ৭০ রুপি করে পাইকারি বিক্রি করছেন তিনি।  

 দ্বীপতেশ সাহা বলেন, এ শিল্পে আগে সরকার থেকে সল্প মূল্যে চিনি পাওয়া যেতো। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ সুবিধা বন্ধ আছে। ফলে এখন খুলা বাজার থেকে চিনি কিনে এগুলো তৈরি করতে হচ্ছে। তা না হলে সাধারণ মানুষদের অনেক কম দামে এসব মিষ্টি খাওয়ানো যেতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
এসসিএন/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।