শহরের দিকে বর্তমানে আলপনা আঁকার প্রচলন প্রায় উঠে গেছে। এখন বাজারে পাওয়া যায় নানা আকারের এবং নানা রঙের আলপনার স্টিকার।
তবে আগরতলার পার্শ্ববর্তী লঙ্কামুড়া, ভূবনবন, নন্দননগর এই সকল এলাকায় গেলে দেখা যায় মাটির উঠানে আলপনা। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) পৌষ সংক্রান্তির দুপুরে লঙ্কামুড়ায় বিভিন্ন বয়সী নারীদের আলপনা আঁকতে দেখা যায়। তাদের এ আলপনা দেখতে শহর থেকে মানুষ ছুটে যান বলে বাংলানিউজকে জানান তারা।
এই আলপনার মধ্যে নানা ধরন রয়েছে। কখনো সমগ্র উঠান জুড়ে থাকে একটি আলপনা আবার কখনো উঠানের মাঝে একটি বড় আকারের আলপনা ও চারপাশে চারটি ছোট আলপনা আঁকা হয়। আবার কিছু কিছু বাড়ীতে একাধিক আলপনা দিয়ে উঠান সাজানো হয়। এমনকি মূল রাস্তা থেকে বাড়ীর উঠান পর্যন্ত দেওয়া হয় আলপনা।
এগুলি আকার মূল উপাদান হচ্ছে চালের গুড়া। যা থেকে পাওয়া যায় ধবধবে সাদা রঙ, এছাড়াও লাল মাটি, বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতার রস দিয়ে তৈরি করা আলপনার রঙ। তবে আজকাল চালের গুড়িকে সাদা রঙ হিসেবে ব্যবহার করলেও মাটি এবং গাছের পাতার রসের জায়গায় দখল করেছে কৃত্রিম রঙ। মূলত উজ্জ্বলতার জন্য কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয় বলে জানান এক গৃহবধূ।
এ সকল আলপনা আঁকাকে কেন্দ্র করেও নারীদের মধ্যে সুস্থ্য ও সুন্দর প্রতিযোগিতার মনোভাব কাজ করে। কে কার চেয়ে সুন্দর আলপনা তৈরি করতে পারেন। কার আলপনায় কতো বেশী বৈচিত্র রয়েছে।
সম্প্রদায় ভেদে আলপনার ধরন আলাদা হয়ে থাকে। যেমন লঙ্কামুড়া এলাকার দাস পাড়ায় দেখা গেলো তারা তুলনামূলক ছোট আকারের আলপনা তৈরি করেছেন। আবার কপালি সম্প্রদায়ের মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশ বড় আকারের আলপনা তৈরি করেন।
অপর দিকে অবাঙ্গালী বিন সম্প্রদায়ের মানুষেরও আলপনা তৈরি করতে দেখা যায়। তারা একদিকে যেমন চালের গুড়ি দিয়ে উঠানে আলপনা তৈরি করেন, সেই সঙ্গে ঘরের চার দিকের মাটির দেওয়ালের নিচের দিকে ছোট আকারের আলপনার মত আঁকেন। পাশাপাশি তাদের অনেকই চালের তুষে লাল, সবুজ, হলুদ নানা রঙ দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের আলপনা তৈরি করেন। চালের তুষে রঙের সঙ্গে মেশানো হয় জরিও। এটি সম্পূর্ণ নতুন এবং সাম্প্রতিক সময়ের আলপনা তৈরির পদ্ধতি বলেও জানান তারা। এই আলপনা দেখে সহজেই বুঝা যায় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুনত্ব এসেছে।
এই আলপনার সূচনা কবে, কি কারণে আলপনা দেওয়া হয় তার ইতিহাস কেউ বলতে পারেননি। তাদের একটাই অভিমত, আমাদের পূর্বপূরুষরা পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে আলপনা দিতেন, তাই আমরাও দিচ্ছি।
আলপনার অতীত সম্পর্কে বলতে গিয়ে অধ্যাপক ড: শ্রীমন্ত রায় বাংলানিউজকে জানান, এই সময় ধান চাষের কাজ শেষ হয়ে যায়। ঘরে নতুন ধানও উঠে যায়। নারীরা অগ্রহায়ন ও পৌষমাসে ঘরে ধান তোলার কাজে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকেন, সেই সঙ্গে এই কাজে মহিলাদের প্রচন্ড কায়িক পরিশ্রম হয়। ধান গোলায় উঠে গেলে তারা কিছুটা অবসর পান। এই সময় নিজের মনের কল্পনাকে আলপনায় তোলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এসসিএন/এমকেএম