ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

বাঁশের গয়না তৈরি করে স্বনির্ভর দীমান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯
বাঁশের গয়না তৈরি করে স্বনির্ভর দীমান দীমান দাস। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): দুই বছর আগেও যে যুবক কাজের সন্ধানে সরকারি-বেসরকারি এক দফতর থেকে অন্য দফতরের ছুটে বেড়াতেন, আজ তিনি স্বাবলম্বী। সেসঙ্গে আটজন লোকের কর্মসংস্থানও করেছেন। নতুন নতুন লোক তার কাছে আসছেন কাজের আশায়। 

ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে দেবেন্দ্রনগর গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত নন্দননগর গ্রাম। এ গ্রামের যুবক দীমান দাস।

কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার জন্য বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। বাড়ি ফিরে একটি কাজের জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘুরাফেরা করেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) নিজ বাড়ির কারখানায় কাজ করতে করতে বাংলানিউজকে জানান দীমান।  

ছোট বেলা থেকে তার বাঁশ-বেতের সামগ্রী তৈরির শখ ছিলো। হঠাৎ মনে হলো, এ বাঁশ-বেতের সামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করলে কেমন হয়। সেসঙ্গে আরও মনে হলো, ত্রিপুরা রাজ্যে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর খুব বেশি চাহিদা নেই, তাই তিনি খানিকটা ভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরির কথা চিন্তা করেন এবং বাঁশ-বেত দিয়ে গয়না তৈরি শুরু করেন। এসব গয়নার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গলার মালা, চুলের কাঁটা, ক্লিপ, কানের দুল ইত্যাদি। বাঁশ-বেত দিয়ে গয়না তৈরি করছেন কয়েকজন।  ছবি: বাংলানিউজপ্রথমে তিনি খুব সামান্য পরিমাণে কিছু গয়না তৈরি করে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি শুরু করেন। বিক্রি হচ্ছে দেখে তিনি আরও বেশি পরিমাণে গয়না তৈরি করেন। ধীরে ধীরে তার গয়নার চাহিদা বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার গয়না ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা এমনকি ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে কিনে নিচ্ছেন তার গয়না।  

এছাড়া ভারতের কলকাতা, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, পুনে, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি জায়গায় তার গয়নার চাহিদা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ভারতের বাইরে চারটি দেশে তার তৈরি বাঁশের অলঙ্কার রফতানি হচ্ছে। এ দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভুটান এবং মধ্যপ্রাচ্যের ওমান। সরাসরি এসব পণ্য রফতানি করছেন বলেও জানান তিনি।

এখন তো অনলাইনে কেনাকাটার খুব প্রচলন, অনলাইনে তার সামগ্রীগুলো পাওয়া যায় কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এখনও অনলাইনে তার তৈরি পণ্যগুলো নেই। তবে খুব দ্রুত এসব পণ্য পাওয়া যাবে। এ নিয়ে তার একটি নামকরা অনলাইন সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।

এমনিতেই হাতে তৈরি সামগ্রীর দাম খুব কম হয়। তার তৈরি গয়নার দামও সামান্য। নূন্যতম ৩৫ রুপি থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১১শ’ রুপি। গয়নার ডিজাইনের উপর নির্ভর করে তার দাম। তবে গয়নাগুলোর দাম খুব কম রাখার চেষ্টা করেন বলে জানান দীমান। এরপরও তার লাভ ভালোই থাকে। শতকরা ৮০ শতাংশ লাভ থাকে। বাকি ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং শ্রমিক খরচা। তবে এ কাজ খুব কঠিন, তাই ধৈর্য সহকারে করতে হয়।  

তার সঙ্গে মোট আটজন কাজ করছেন। অনেকে কারখানায় বসে কাজ করেন। আবার অনেকে নিজ বাড়িতে কাজ করে সামগ্রীগুলো দিয়ে যান।  

এ কাজ করতে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ধীমান বলেন, কোনও সরকারি সহযোগিতা পাননি। পাননি বলা ঠিক হবে না, তিনি কখনও সরকারি সহযোগিতা চাননি। তবে ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাজ্যে কুটির শিল্প সামগ্রী বিশেষ করে বাঁশের তৈরি সামগ্রী ভারতসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে যুবকদের স্বনির্ভর হওয়ার যে ডাক দিয়েছেন তাতে তিনি আশাবাদী। আগামী দিনে এ সামগ্রীগুলোর বাজার আরও বড় হবে বলে মনে করছেন তিনি।  

দীমান বলেন, এখন প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন জায়গা থেকে অর্ডার আসছে। কিন্তু সমস্যা হলো, খুব বেশি মানুষ এ কাজ জানে না। তাই চাইলেই বেশি পরিমাণ গয়না তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। আশার কথা হলো, নতুন নতুন মানুষ এসে এ কাজ শিখতে চাইছেন। কিছুদিন পর ত্রিপুরা থেকে বিপুল পরিমাণ এমন গয়না তৈরি হবে। বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯
এসসিএন/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।