এ পূজার রীতিনীতি অনেকটাই অন্য সব পূজা থেকে ভিন্ন। পূজার পুরোহিতকে বলা হয় চন্তাই।
প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে গড়িয়া দেবতাকে নিয়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে যান একদল লোক। গড়িয়া দেবতা বাড়িতে আসছেন দেখতে পেলে বাড়ির নারীরা উঠানে পানি ছিটিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে একটি পিঁড়ি বসান। গড়িয়া মূর্তিকে ওই পিঁড়িতে বাসনো হয়। এর পর পরিবারের কর্তা, গৃহিণীসহ সব সদস্য ধূপ দেখিয়ে বরণ করে প্রণাম করেন। একইসঙ্গে চালসহ অন্য বাড়ির উৎপাদিত ফসল ও নগদ রুপি চাঁদা হিসেবে দেন।
দেবতাকে উঠানে পিঁড়িতে বসানোর পরিক্রমার সঙ্গে আসা নারী-পুরুষ বাবা গাড়িয়াকে ঘিরে গান করতে করতে নৃত্য করেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি গান হলো 'গড়িয়া রে গড়িয়া টিল্লাটক্কর ভাঙিয়া'। একইভাবে পহেলা বৈশাখ থেকে সাতদিন পর্যন্ত এভাবে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পরিক্রমা করা হয়।
বৈশাখ মাসের সপ্তম দিনে হয় মূল গড়িয়া পূজা। এদিন গ্রাম ঘুরে যে চাঁদা সংগ্রহ হয়, তা দিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়। হিন্দুদের অন্য সব মূর্তি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বাবা গড়িয়ার মূর্তি। গড়িয়া মূর্তি তৈরি হয় বাঁশ, আদিবাসীদের হস্ত-তাঁতে তৈরি কাপড় ও জুমের চাল দিয়ে।
গড়িয়া পূজার জায়গাও তৈরি করা হয় বাঁশ দিয়ে। পূজার দিন হাঁস, মুরগি, কবুতর ও পাঠা বলি দেওয়া হয়। আবার কেউ কেউ কবুতর বলি না দিয়ে গড়িয়ার কাছে উৎসর্গ করে ছেড়ে দেন। পূজাতে প্রয়োজন হয় বাড়িতে তৈরি বিশুদ্ধ মদ ও মুরগির ডিম।
মূলত গ্রামের মানুষের মঙ্গল কামনা করে ও জুমে অধিক ফসল ফলনের প্রার্থনার আশায় গড়িয়া দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে যুগ যুগ ধরে ত্রিপুরার সনাতন আদিবাসীরা এ পূজার আয়োজন করে আসছেন। এতো গেল আদি গড়িয়া পূজার পদ্ধতি। তবে যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ পূজাতেও নানা পরিবর্তন এসেছে। এখন আগরতলার বিভিন্ন পাড়ার লোকজন এমনকি ক্লাবের উদ্যোগেও গড়িয়া পূজার আয়োজন করা হয়। এখন সাত দিনব্যাপী পাড়া না ঘুরা হলেও প্রতি বছর ৭ বৈশাখ নিয়মনীতি মেনে ও পূর্ণ শ্রদ্ধার সঙ্গে গড়িয়া পূজার আয়োজন করা হয়।
রাজধানী আগরতলার অভয়নগর এলাকায় সবচেয়ে বড় গড়িয়া উৎসব হয়। বসে দুই দিনব্যাপী মেলাও।
গড়িয়া পূজার চন্তাই প্রবীর দেববর্মা বাংলানিউজকে জানান, গড়িয়া হচ্ছেন দেবাদিদেব মহাদেবের ছেলে গণেশ। জনজাতি অংশের মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে এ পূজা করে থাকেন। তবে কবে থেকে এ পূজার সূচনা তা তিনি বলতে পারেননি। তার ধারণা, মানুষ যখন থেকে সৃষ্টি হয়েছে তখন থেকে এ পূজা হচ্ছে।
অভয়নগরের গড়িয়া পূজার স্থানে পূজা দিতে আসা মালা দেববর্মা নামে এক নারী জানান, এ পূজা অনেক প্রাচীন। তিনি তার পূর্বপূরুষের কাছে শুনেছেন রাজাদের আমল থেকে এখানে গড়িয়া পূজা হয়ে আসছে। তিনিও ছোট বেলায় বাবা-মা'র সঙ্গে পূজায় আসতেন। এখন তিনি নিজের ছেলে-মেয়ে নিয়ে আসেন। পূজা দিয়ে পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন।
তিনি আরো জানান, পূজা উপলক্ষে বাড়িতে পিঠাপুলিসহ চিরাচরিত খাবার তৈরি করা হয়। আগরতলার পাশাপাশি রাজ্যের জনজাতি অধ্যুষিত প্রতিটি জনপদে হচ্ছে এ পূজা।
অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ত্রিপুরা সরকার গড়িয়া পূজা উপলক্ষে সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজ্যব্যাপী সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
এসসিএন/আরবি/