রাজ্যে এনআরসি নিয়ে প্রথম মামলাটি করেছেন ত্রিপুরা পিপলস ফ্রন্টের (টিপিএফ) সভানেত্রী পাতালকন্যা জমাতিয়া। দ্বিতীয় মামলা করেছেন তিনজন মিলে।
এনআরসি নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় নিত্যানন্দ দেবের সঙ্গে। ৩৫ বছরের এ যুবক একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। তিনি জানান, তার দাদু রাজন্য আমলে ত্রিপুরায় এসে জায়গা কিনেছিলেন বলে বাবার মুখে শুনেছেন। দাদুর চার ছেলে। এরপর পরিবার ভাগ হয়েছে, কার কাছে জমির কাগজ রয়েছে বা আদৌ আছে কি-না, তা ঠিকভাবে বলা যায় না।
এসময় এক প্রৌঢ় এসে বলেন, শুনেছি আসামে যারা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, তাদের ধরে ধরে একেকটি ক্যাম্পে রাখছে। যদি ত্রিপুরাতেও এনআরসি চালু হয়, তবে এখানেও তো এমন করবে!
ত্রিপুরার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এনআরসি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন।
ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তাপস দে বলেন, বিজেপি আগে ঠিক করুক, তারা কী করতে চাইছে। তাদের একেক নেতা একেক কথা বলছেন। দলটির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এনআরসি চালু করা হবে। অথচ, ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলছেন, এ রাজ্যে এনআরসি চালু হবে না। আবার বিজেপি-শাসিত আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালও এনআরসি নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে নরম সুরে কথা বলছেন। তিনি বলছেন, যাদের নাম এনআরসির তালিকায় নেই, তাদের এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই। তারা এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তাপস দে আরও বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রচণ্ড খারাপ। এ অবস্থায় বিজেপি তিন তালাক, কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, এনআরসির মতো অরাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে। জনগণ এসব ঠিকই বুঝতে পারছে। এসব করে তারা মানুষের নজর ঘোরাতে পারবে না।
এনআরসি নিয়ে সিপিআই(এম)-এর ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পবিত্র করের ধারণা, এর মাধ্যমে বিজেপি আসামে জম্মু-কাশ্মীরের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। এটা তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই করছে বলে জানান তিনি।
শুরু থেকেই এনআরসির তীব্র বিরোধীতা করছে ‘আমরা বাঙালী’ দল। দলের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সহ-সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল বলেন, বাঙালিদের কোণঠাসা করার জন্য নানা সময় নানা চক্রান্ত হয়েছে। এনআরসি-ও এ চক্রান্তের একটি কৌশল। ভারতীয় সংবিধানে রয়েছে, নাগরিকত্ব পাওয়ার নানা পদ্ধতির মধ্যে কয়েকটি হলো- জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব, অর্থাৎ ভারতে জন্ম হলে তিনি এদেশের নাগরিক হতে পারবেন। বিবাহসূত্রে নাগরিকত্ব, অর্থাৎ কোনো নারী বিদেশ থেকে এসে কোনো ভারতীয় নাগরিককে বিবাহ করলে তিনিও ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। এমন আরও কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু, এনআরসির জন্য এ আইনগুলো অস্বীকার করা হচ্ছে।
তার মতে, এ সমস্যা সমাধানের একটি পথ আছে। সেটি হলো- ভারতে বাঙালিদের জন্য আলাদা রাজ্য সৃষ্টি করা। গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল বলেন, এটি নতুন কিছু নয়। যেমন- নাগাদের জন্য নাগাল্যান্ড, পাঞ্জাবীদের জন্য পাঞ্জাব রাজ্য রয়েছে। তেমনি বাঙালিদের জন্য ‘বাঙালিস্থান’ পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন যেকোনো এলাকায় করা যেতে পারে।
ত্রিপুরায় এনআরসি নিয়ে রাজ্যের শাসক দলের কী অভিমত জানতে চাইলে বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য্য বলেন, এখানে এনআরসি চালু হবে কি-না, তা আদালতের বিষয়। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যা রায় দেবেন, তা মেনে নেবে রাজ্য সরকার। আসামে এনআরসি চালুর জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, সরকার সে নির্দেশ কার্যকর করছে মাত্র।
অরাজনৈতিক সংগঠন তিপ্রা স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সম্পাদক সুনীল দেববর্মা বলেন, শুধু আসাম, ত্রিপুরা ও উত্তরপূর্ব ভারতে কেন, সারাদেশেই এনআরসি করা উচিত। তবে তার মতে, যারা বিদেশ থেকে চলে এসেছেন, তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। তবে, আর যাতে নতুন করে অনুপ্রবেশ না ঘটে, সরকারের সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
এসসিএন/একে