শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) আগরতলার মুক্তধারা অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ত্রিপুরা সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি বিষয়ক দপ্তরের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভার স্পিকার রেবতী মোহন দাস, মুক্তিযোদ্ধা একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মিহির দেব, শ্যামল চৌধুরী, আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার কিরীটি চাকমা প্রমুখ।
ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকার রেবতী মোহন দাস বলেন, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দু’দেশের মধ্যে মানুষকে আটকানো সম্ভব হলেও মানুষের মনের মধ্যে বিভেদরেখা তৈরি করা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধস্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে কাজ করছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বাংলা ভাষাকে মুছে দিতে ভারতের আসাম রাজ্যেও অপপ্রয়াস চালানো হয়েছিল।
এসময় উপস্থিত সবাইকে স্বরচিত দু’টি কবিতাও পাঠ করে শোনান স্পিকার।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিপুরাকে মুক্তিযুদ্ধের তীর্থভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেসব ভারতীয় বীরসেনারা মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
তিনি বলেন, ভারত যদি আশ্রয়, অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে সহযোগিতা না করত, তবে মুক্তিযুদ্ধ নয় মাসে শেষ হতো না। কত বেশি সময় যে লাগতো তা বলা কঠিন।
এসময় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষ লিখে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর শুধু সংবিধানকেই ধ্বংস করার চেষ্টা করেনি, বাংলাদেশের মাটিকেও ধ্বংস করে মিনি পাকিস্তান তৈরি করতে চেয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধা একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ভারতের পাঁচটি জায়গায় বিশেষ অনুষ্ঠান করা হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ত্রিপুরা রাজ্য। কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরাবাসীর অবদান সবচেয়ে বেশি। ত্রিপুরা রাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টর ছিল। এই সব সেক্টরস্থলে আগামী বছরের মধ্যে স্মৃতিফলক লাগানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানিয়ে আবারও আমাদের ঋণী করলেন ত্রিপুরাবাসী। যেমনটা করেছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়।
এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী উপস্থিত সবার সামনে ঘোষণা দেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের যেসব এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল, সেসব জায়গাগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তৎকালীন ক্যাম্পের নামসহ বিস্তারিত বিবরণের খোদাই করা ফলক লাগানো হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রথম সচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন ভূঁইয়া, দ্বিতীয় সচিব এম এস আসাদুজ্জামানসহ ত্রিপুরা সরকারের তথ্য সংস্কৃতি ও পর্যটন দফতরের কর্মকর্তারা।
আলোচনা শেষে ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে শুক্রবারই ঢাকা থেকে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে আগরতলায় পৌঁছান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেসময় ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবেই তাকে বরণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
এসসিএন/এসএ/এইচএ