সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে সবজি চাষে তার সফলতার কথা তুলে ধনের অজয় কুমার।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তৃস্তর পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজ্যের পশ্চিম জেলার অন্তর্গত ডুকলী পঞ্চায়েত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রমিকদের দিয়ে তিনি পুরো জঙ্গলটি পরিষ্কার করেন এবং গত মৌসুমে প্রথম শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ক্যাপসিকামসহ (মরিচ জাতীয় সবজি/ বেলপিপার) অন্যান্য সবজি চাষ করেন।
প্রথম থেকেই তিনি অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষের পরিকল্পনা করেন। সেই মতো এখনও অর্গানিক পদ্ধতিতেই সবজি চাষ করে হচ্ছে। শীতকালীন সবজির পর বর্ষা মৌসুমেও সবজি চাষ করছেন। সবজির বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ঢ্যাঁড়স, পুঁইশাক, বেগুন, মরিচ, করলা ও বরবটিসহ আরও অনেক জাতের সবজি রয়েছে। সব ধরনের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে।
ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান জানান, সবজির পাশাপাশি ঢালু জমিতে সবরি কলার গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়া জমির কিছু অংশ ঢালু ও গভীর। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে ‘লুঙ্গা জমি’। ওই জমিও কাজে লাগানো পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। লুঙ্গা জমিকে সংস্কার করে এখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হবে। অফিসের সবক’টি ঘরের চালের পানি পাইপের মাধ্যমে এ জলাধারে ফেলা হবে। তাতে করে সবজি চাষের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হবে না। যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে বলেও জানান তিনি।
উৎপাদিত সবজি কোথায় বিক্রি করা হয়? এর জন্য কোনো স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে কি?
উত্তরে অজয় কুমার দাস জানান, বেশিরভাগ সবজি অফিসে কর্মরত কর্মচারীরা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া পঞ্চায়েত সমিতির অফিসের সামনে যেসব খুচরো সবজির দোকান রয়েছে, তারা কিনে নিয়ে যান।
তিনি আরও জানান, এ সবজিতে কোনো প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার না করায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। ফলে ব্যবসায়ীদের থেকে শুরু সাধারণ মানুষ এ সবজি নেওয়ার জন্য ভিড় জমান। সবজি বিক্রি করে এরই মধ্যে ব্লক পঞ্চায়েত সমিতি সরকারকে পঞ্চাশ হাজার রুপি মুনাফা পাইয়ে দিয়েছে বলেও জানান। পাশাপাশি এ জমিতে ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এর ফলে তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
সরকারি পতিত জমিতে সবজিচাষ করার পরিকল্পনা এলো কি করে?
তিনি জানান, রাজনীতিতে আসার আগে তিনি একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে তিনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। সেসব দেশের কৃষি পদ্ধতি তাকে আকৃষ্ট করেছে। ওই আগ্রহ থেকেই সরকারি জমি কাজে লাগিয়ে সবজি চাষ করেছেন। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব পাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ টাটকা ফল ও সবজি খেতে পারছেন।
অর্গানিক পদ্ধতিতে ফল ও সবজি চাষের খবর এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব পর্যন্ত পৌঁছে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিজে এ বাগান পরিদর্শনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া রাজ্যের বহু পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধিরা এ সবজি বাগান ঘুরে দেখেছেন। অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেকে পরামর্শ চেয়েছেন। এ বিষয়ে অনেককে পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান।
সরকারি জমিতে কৃষি কাজ করতে তাকে পশ্চিম জেলার জেলা প্রশাসক সন্দ্বীপ মহাত্মন, সূর্যমনি নগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রামপ্রসাদ পালসহ অনেকে সহায়তা করেছেন বলেও যোগ করেন অজয় কুমার দাস।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২০
এসসিএন/ওএইচ/