ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

চীনা পণ্য বর্জনে ভারতে মাটির প্রদীপের চাহিদা তুঙ্গে 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২০
চীনা পণ্য বর্জনে ভারতে মাটির প্রদীপের চাহিদা তুঙ্গে  মাটির প্রদীপ। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): আসছে আলোর উৎসব দীপাবলি। এ উৎসবকে ঘিরে মাটির প্রদীপ বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ত্রিপুরা কুমাররা।

 এক সময় দীপাবলির বাজারে মাটির প্রদীপের চাহিদার জোগান দিতে দিতে খাওয়া ঘুম উবে যেতো। এখন ইলেকট্রিক বিভিন্ন বাতি, রাইস টুনি, ইলেকট্রিক প্রদীপ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক আলোক এর দাপটে চাহিদায় ভাটা পড়েছে মাটির প্রদীপে। আর এসব ইলেকট্রিক পণ্য চীন থেকে ভারতে আমদানি হতো। তবে বিরোধপূর্ণ লাদাখ সীমান্তে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারত ও চীন উভয়ের মধ্যে এখন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। ফলে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে ভারত সরকার। এতে করেই আসছে আলোর উৎসবকে সামনে রেখে ভাগ্য খুলে গেছে ভারতীয় কুমারদের। চলতি বছর আলোর উৎসব দীপাবলি উদযাপিত হবে শনিবার (১৪ নভেম্বর)। চীনা পণ্য বর্জনে উৎসবকে সামনে রেখে কুমারেরা মাটির প্রদীপ বানাতে ব্যস্ত। কারো যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। সবাই রাত-দিন প্রদীপ বানানোর কাজে ব্যস্ত।

সেই চিত্র দেখা গেলো রাজধানী আগরতলার পার্শ্ববর্তী নন্দননগর এলাকায়  কুমারপাড়ায়। এই পাড়ার অধিকাংশ জনগোষ্ঠীই রুদ্র পাল সম্প্রদায়ের। এখন তারা অনেকেই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাদের মূল পেশা মৃৎসামগ্রী তৈরি। অন্যান্য পেশার সঙ্গে এই সম্প্রদায় যুক্ত থাকলেও আদি পেশা মৃৎশিল্প। এখন মাটির তৈরি তৈজসপত্রের  চাহিদা কমে গেছে। তবে দইয়ের হাঁড়িসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রসাদ বিতরণে ব্যবহৃত মাটির থালা, বাটির চাহিদা রয়েছে। তাই সারাবছর রুদ্র পাল সম্প্রদায় এসব পণ্য তৈরি করে জীবন প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী আগরতলায় মহারাজগঞ্জ বাজারে পাইকারি দামে মাটির প্রদীপ বিক্রি হয়। গড়ে ১শটি প্রদীপের ৮০ থেকে ৯০ রুপি। যদি এভাবে সাধারণ মানুষ চীনা পণ্য বর্জন করে তবে, আর্থিক অবস্থা আরও অনেক ভালো হবে বলেও জানান আগরতলার কুমাররা।

আলোর উৎসব দীপাবলি এলে মাটির প্রদীপের চাহিদা বাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় আয়। এবার কুমারপাড়ায় ব্যস্ততা অনেক বেশি বলে বাংলানিউজকে বলেন রঞ্জিত রুদ্র পাল। মূলত চীনা পণ্য বর্জনে ভাগ্যের চাকা খুলেছে কুমারপাড়ায়। রঞ্জিত রুদ্র পাল বলেন, আমাদের এখানে চীনা পণ্য বর্জন, এটা আমাদের জন্য মঙ্গল। মাটির প্রদীপের চাহিদাও তুঙ্গে। ইতোমধ্যেই প্রায় ১৫ লাখ মাটির প্রদীপ বানিছি। চাহিদার কথা মাথায় রেখে সামনে আরও বেশি বেশি মাটির প্রদীপ বানাতে হবে। মাটির প্রদীপগুলোকে প্রস্তুত করার জন্য চুল্লির ওপর সাজিয়ে রাখতে হবে।

মাটির প্রদীপের চাহিদা বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর আমরা কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছি। তখন ১০ হাজার পিস মাটির প্রদীপ তৈরির অর্ডার পাওয়াই ছিল কষ্টকর। কারণ চীনের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক প্রদীপ আমদানি হতো। ফলে দীপাবলি উৎসব মাটির প্রদীপ জ্বালানো প্রায় বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু এবছর ভারত সরকারের তরফে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়ায় আমাদের কপাল খুলেছে। চীনা পণ্য সামগ্রী আসছে না, আসেনি দীপাবলির ইলেকট্রিক্যাল বাতিও। ফলে আবার মাটির প্রদীপের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছেন। চাহিদা বেড়েছে প্রদীপের। তাই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২০
এসসিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।