আগরতলা, (ত্রিপুরা): মাগুর মাছের প্রজননের খুব সহজ একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ত্রিপুরার ফিশারি কলেজের গবেষকরা। যা ভারতের মধ্যে এটাই প্রথম আবিষ্কার।
মাগুর একটি দেশীয় প্রজাতির মাছ। পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিলে পানি জমে। ওই পানিতে এই প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, কিন্তু এখন এই প্রজাতির মাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে কৃষি জমিতে ব্যাপক হারে কীটনাশক, বালাইনাশকের ব্যবহার। অতিরিক্ত বালাইনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নালা, খাল-বিলের পানিতে মেশার কারণে মৃত্যু ঘটছে। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে মাগুর মাছের প্রজনন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল, পরিবেশ ও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এই মাছের ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণে প্রকৃতিতে মাগুর মাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। তবে, মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ধরে মাগুর মাছের বাচ্চা উৎপাদন করে আসছেন। আগরতলার পার্শ্ববর্তী লেম্বুছড়া এলাকার কৃষি কলেজের ডিন ড. পি কে পান্ডে বাংলানিউজকে জানান, মাগুর মাছ থেকে কৃত্রিম উপায়ে ডিম উৎপাদন করা অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য পুরুষ মাগুর মাছকে কেটে তার মধ্য থেকে শুক্রাণু বের করে তা স্ত্রী মাগুরের শরীরে প্রবেশ করিয়ে ডিম উৎপাদন করা হত। কিন্তু কৃষি কলেজের বিজ্ঞানী ড. হিমাংশু প্রয়দর্শী দীর্ঘ ১০ বছরের গবেষণার পর সম্প্রতি খুব সহজ পদ্ধতিতে কৃত্রিম উপায়ে মাগুর মাছের প্রজনন উৎপাদনের কাজে সক্ষম হয়েছেন।
ফিস জেনেটিক্স প্রডাকসন বিভাগে বিজ্ঞানী ড. হিমাংশু প্রয়দর্শী বাংলানিউজকে জানান, মাগুর মাছের নতুন এই প্রজনন পদ্ধতির নাম বেরিয়ার রিমুভাল ইন ক্যাট ফিশ ফর ভলন্টারি ক্যাপ্টিভিলশ পয়ন যাকে সংক্ষেপে বৃকস টেকনোলজি বলা হয়। আগের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি তে যেখানে প্রজননের জন্য পুরুষ মাগুর মাছকে মেরে ফেলতো। কিন্তু এই পদ্ধতি অন্যতম সুবিধা হচ্ছে মাছকে মারতে হয় না শুধুমাত্র অভাটাইড হরমোনাল ইনজেকশন দিতে হয় পুরুষ এবং স্ত্রী মাগুর মাছকে। ইনজেকশন দেওয়ার পর মাছের জোড়াকে টানা ১২ ঘণ্টা একসঙ্গে রাখতে হয়। এরপর আরও একটি বিশেষ প্রজাতির অক্সিটসিন হরমোন যুক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয় মাছগুলোর ওপর এবং প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছ পেট থেকে ডিম ছাড়তে শুরু করে। দু-তিন ঘণ্টা পরপর মোট তিন থেকে চার বার ডিম পাড়ে ইনজেকশন দেওয়া স্ত্রী মাছ। প্রায় দেড়শ গ্রাম ওজনের একটি মাছ দুই থেকে ৩ হাজার ডিম পাড়ে। ডিম পাড়া শেষ হয়ে গেলে দুটো মাছকে এই জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য ট্যাঙ্কে নিয়ে যেতে হবে।
অপরদিকে ডিমগুলো ফুটে ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা জন্ম হতে থাকে। এই পদ্ধতিতে পাড়ার ডিম দিয়ে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বাচ্চা উৎপাদিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ট্যাঙ্কে রাখা মাছের বাচ্চাগুলোকে জুপ্লাংকটন জাতীয় খাবার দিলে ২০ দিনের মধ্যে বাচ্চা পুকুর অথবা চাষের জলাশয় ছড়ার উপযুক্ত হয়ে যায়। এটি অত্যন্ত একটি সহজ পদ্ধতি যেকোনো মৎস্য পালক চাইলেই এই পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণে মাগুর মাছের পোনা উৎপাদন করতে পারবেন। কিন্তু আগের যে পদ্ধতি ছিল বা বর্তমানে যা চলছে তা দিয়ে মাগুর মাছের পোনা উৎপাদন করা সম্ভব কিন্তু এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ার কারণে সহজে মৎস্যচাষিরা নিজে ডিম এবং চারা উৎপাদন করতে পারছিলেন না। তারা এই পদ্ধতিতে মাগুর মাছের চারা উৎপাদন করে ১শ শতাংশ সফল হয়েছেন আগামীদিনে ত্রিপুরা তোতা ভারতের বিভিন্ন এলাকার মৎস্য চাষিদের মধ্যে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করবেন।
তিনি আরও বলেন, এখন মাগুর মাছের স্বল্পতার কারণে বাজারে চড়া মূল্যে এই মাছ বিক্রি হচ্ছে কিন্তু চাষিরা যদি একটু সচেতন হোন তাহলে অত্যন্ত লাভবান হতে পারেন। কারণ যেসব জলাভূমিতে অন্য সব মাছ চাষ করা সম্ভব হয় না বিশেষ করে কচুরিপানা যুক্ত জলাভূমি এই যেসব জলাভূমিতে খুব সহজে মাগুর মাছ বেড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১
এসসিএন/এএটি