ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

শিগগিরই ত্রিপুরায় ওয়াইল্ড লাইফ ক্যাপিটাল ঘোষণা

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২১
শিগগিরই ত্রিপুরায় ওয়াইল্ড লাইফ ক্যাপিটাল ঘোষণা

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তেলিয়ামুড়া ও খোয়াই মহকুমার বিস্তীর্ণ বনভূমি এবং পাহাড়কে রাজ্যের ওয়াইল্ড লাইফ ক্যাপিটাল হিসেবে শিগগিরই ঘোষণা করবে সরকার। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এক টুইটে তিনি একথা জানিয়েছেন।

এ পাহাড়ি বনভূমিকে ওয়াইল্ড লাইফ ক্যাপিটাল হিসেবে গড়ে তোলার কারণ জানিয়ে ত্রিপুরার মুখ্য বন সংরক্ষক (পিসিসিএফ) রামেশ্বর দাস বাংলানিউজকে বলেন, এ অঞ্চলে একদিকে যেমন রয়েছে জীববৈচিত্র্য তেমনি বন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরণ। বর্তমানে রাজ্যের হতাইকতর পাহাড় তথা পূর্বতন বড়মুড়া পাহাড় এবং আঠারোমুড়া পাহাড়ের বিশাল অঞ্চলকে ওয়াইল্ড লাইফ ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। এসব পাহাড় ও বনভূমিতে রয়েছে লেঙ্গুর, ভাল্লুক, বাদুর, বন্য হাতি, ফ্লাইং স্কুইরেল, শকুন, ধনেশ পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। এছাড়া বন্যপ্রাণী চশমাপরা বানরের আবাসস্থল হচ্ছে ত্রিপুরা। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এদের দেখা যায় না বললেই চলে।
তিনি আরও বলেন, তেলিয়ামুড়ার চাকমাঘাট এলাকার পর থেকে আঠারোমুড়া পাহাড়ের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে এলিফেন্ট করিডোর। এ করিডোর দিয়ে খোয়াইয়ের কল্যাণপুরসহ আশেপাশের এলাকায় বন্য হাতিরা অবাধে বিচরণ করে। এ পাহাড়ের ওপর দিয়ে বর্হিঃরাজ্যের সঙ্গে ত্রিপুরার সংযোগকারী ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গেছে। হাতিদের গতিবিধি যাতে জাতীয় সড়কের কোনো যানবাহন বাধা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য বন দপ্তরের তরফ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সতর্কতা বার্তা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন দপ্তরের তরফে এবং যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মুঙ্গিয়াকামীতে হাতির জন্য পিলখানা গড়ে তোলা হয়েছে।

হতাইকতর পাহাড়ে রয়েছে ধনেশসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বসবাস। এসব পাখিসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বন দপ্তর থেকে ভিউপয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর হতাইকতর পাহাড়ে ২০২০ এবং ২০২১ সালে হর্ণবিল ফেস্টিভ্যাল (ধনেশ উৎসব) আয়োজন করেছে। লম্বা ঠোট যুক্ত এ পাখিটির বিষয়ে সাধারণ মানুষ যাতে সচেতন হন এবং এদের রক্ষা করতে বন দপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও যেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এজন্য এ উৎসব আয়োজন করা হয়।
ত্রিপুরার মুখ্য বন সংরক্ষক (পিসিসিএফ) রামেশ্বর দাস আগামীতে এ অঞ্চলকে বায়োডাইভার্সিটি হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সারাদেশ থেকে ক্রমশ শকুন কমতে থাকলেও খোয়াই মহকুমার পদ্মাবিল এলাকায় এদের সংখ্যা এখনও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এর ফলে এ এলাকায় শকুন সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। শকুন সংরক্ষণের জন্য ভারত সরকারের পরিবেশ বিষয়ক একটি বিশেষজ্ঞ দল ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে। বিশেষজ্ঞ দলটি পদ্মাবিলকে শকুন সংরক্ষণের একটি সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে মতামত দিয়েছে।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তেলিয়মুড়ার অদুরেই রয়েছে ত্রিপুরার সবচেয়ে বড় অভয়রণ্য ‘গোমতী অভয়রণ্য’। এ অভয়ারণ্যের সঙ্গে তেলিয়ারমুড়ার বনাঞ্চল সংযুক্ত রয়েছে। তাই গোমতী অভয়ারণ্যের প্রাণীরা করিডোর হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। হতাইখতর পাহাড়ে রয়েছে বড়মুড়া ইকোপার্ক, প্রাকৃতিক ঝর্ণাসহ নানা প্রজাতির বনফুল ও ঔষধি গাছ। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এ ইকোপার্কের মধ্যে লগঘাট তৈরি করা হয়েছে।

এসব বিষয় চিন্তা করেই রাজ্য সরকার তেলিয়ামুড়াকে ওয়াইল্ড লাইফ ক্যাপিটাল করার পরিকল্পনা করছে। এ কারণে হয়তো রাজ্যে পর্যটকদের আগমণ অনেকগুণ বাড়বে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২১
এসসিএন/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।