ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

‘আবারও পৃথিবীটা সুস্থ হবে সেই আশায় দিন গুনছি’

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
‘আবারও পৃথিবীটা সুস্থ হবে সেই আশায় দিন গুনছি’ ঢাক ঠিক করছেন বলরাম। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা, (ত্রিপুরা): ঋতুচক্রের নিয়ম মেনে এখন প্রকৃতিতে শরৎ বিরাজমান। একদিকে যেমন বর্ষা বিদায় নেওয়ায় নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা টুকরো টুকরো মেঘের ভেলা অপরদিকে নদীর ধারে এবং গ্রামীণ এলাকায় সবুজ কাশবনের মধ্যে হাওয়ার তালে দোল খাচ্ছে সাদা কাশফুল।

 

এই ঋতুতে বাঙালি অন্যতম বড় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাই এখন কুমারপাড়া থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় তৈরি হচ্ছে পূজা প্যান্ডেল, দুর্গা প্রতিমার সাজসজ্জার কাজে যুক্ত শিল্পী থেকে শুরু করে পাড়ার দর্জি সবাই এখন ব্যস্ত যে যার কাজে। মূলত তাদের এই ব্যস্ততা বাঙালিদের অন্যতম বড় মিলন উৎসব দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে। দুর্গাপূজার অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে ঢাকের বাদ্য। তাই এখন অন্যান্য শ্রেণি-পেশা এবং শিল্পীদের মতো ঢাকিরাও ব্যস্ত ঢাক ঠিকঠাক করার কাজে।

ত্রিপুরার খোয়াই জেলার অন্তর্গত তেলিয়ামুড়া এলাকার ঋষিপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল কেউ নতুন করে ঢাক তৈরি করছেন, আবার কেউ সারা বছরব্যাপী ফেলে রাখা ঢাককে রোদে শুকিয়ে চামড়া টান করা এবং শান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত।  এলাকারই বাসিন্দা পেশায় ঢাকি বলরাম ঋষিদাস জানান, এমনিতে দুর্গাপূজায় তাদের বেশ ভালো রোজগার হয়। দুর্গাপূজার পাঁচ, সাতদিনের জন্য তারা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। দুর্গাপূজা ছাড়াও বিশ্বকর্মা পূজা, মনসা পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে বাজনা বাজিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ সময় দুর্গাপূজা উদ্যোক্তারা তাদের বাড়িতে এসেই পূজার কয়দিনের জন্য চুক্তি করে যান। আর যদি কোনো কারণে বাড়িতে উদ্যোক্তারা না আসেন তবে, আগরতলার কামান চৌমুহনী এবং বটতলা বাজার এলাকায় পূজার দু-তিন দিন আগে থেকে ঢাকিদের বাজার বসে। এই বাজারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকিরা তাদের ঢাক নিয়ে আসেন পূজা উদ্যোক্তারাও আসেন এবং বাজনা শুনে যাদের পছন্দ হয় সেই অনুসারে দরদাম করে নিয়ে যান। তবে, করোনার কারণে গত বছর থেকে তাদের ব্যবসায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে।

একদিকে মহামারির কারণে সরকার খুব বড় আকারের উৎসব অনুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছে না। এজন্য পূজা উদ্যোক্তারা খুব বেশি চাঁদা তুলতে পারছেন না। তাই উৎসবের খরচ কম হয়ে গেছে। ফলে বাজনার খাতেও বরাদ্দ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া অন্যান্য অনুষ্ঠান ছোট আকারের হচ্ছে আবার কম সংখ্যায় হচ্ছে তাই রোজগার অনেকটাই কমে গেছে। তারপরও তারা আশায় বুক বাঁধছেন এবার হয়তো গত বছরের মতো এত আর্থিক সংকট হবে না তাদের এই ভেবে। তবে এ বছরও তারা যে খুব বেশি রোজগার করতে পারবেন না তাও তিনি আঁচ পড়তে পারছেন। কারণ সরকার খুব বড় আকার পূজার প্যান্ডেল তৈরি করার অনুমতি দেয়নি তাই ছোট আকারে প্যান্ডেল প্রতিমাসহ গোটা আয়োজন করছে বলেও জানান তিনি।  

পৃথিবী থেকে মহামারির সংকট একদিন কেটে যাবে এবং তাদের রোজগার আবার স্বাভাবিক হবে এই স্বপ্নকে সামনে রেখে নিজের হাতে প্রস্তুত করা ডাক বাজিয়ে বলরাম দেখে নেন ঠিকভাবে প্রস্তুত হয়েছে কিনা।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
এসসিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।