ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সেন্টমার্টিনে সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার আল্পনা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
সেন্টমার্টিনে সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার আল্পনা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে: সারাদিন জুড়ে নিপুণ হাতে আল্পনা আঁকায় ব্যস্ত শিল্পীরা। বাহারি সেই নকশা।

দেখলে মনে হবে ভাবুক শিল্পী সৈকতে বসে সমুদ্র তীরজুড়ে নারিকেল গাছ এঁকেছেন। কোথাও আবার কোনো কিছুর সঙ্গে মেলানো কঠিন, তবে অপরূপ সেই শিল্পকর্ম। কোনোটি গোল, কোনটি আবার পাতাসদৃশ। কোথাও বা রূপচাঁদা মাছের আকৃতি।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিমে কোনার পাড়া বিচে এমন আল্পনার দেখা মিলবে। প্রথম কেউ দেখলে মনে হতেই পারে যেন কোনো শিল্পী তার জলরং দিয়ে রাঙিয়েছে সমুদ্র সৈকতকে। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এই আল্পনার খেলা। মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

দেখলে মনে হবে মৌসুম শেষে পর্যটকের আগমন কম, আর সেই সুযোগে ফাঁকা পেয়ে পুরো সৈকতজুড়ে আল্পনায় সাজিয়ে দিয়েছে নিপুণ কারিগররা।


সহকর্মী শাহজাহান মোল্লা বলেই বসলেন- এরা মনে হয় বাঙাল প্রেমিক। যে কারণে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এভাবে আল্পনায় সাজিয়েছে বিচকে।

কিন্তু কারা এই আল্পনা দিয়ে বিচকে সাজিয়েছে? কী দিয়ে সাজিয়েছে? তাদের না কি কেউ দেখেনি! খোদ স্থানীয়রাও তাদের আল্পনা আঁকতে দেখেননি কখনও। যে জেলেদের জীবন অ‍াষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে তারাও নাকি কখনও এদের আঁকতে দেখেননি।

কেবল ভাটা শেষে সৈকতে গেলে আল্পনা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষের পায়ের শব্দ পেলেই দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়। যেন প্রচার বিমুখ এরা। নিজেকে আড়াল করে রাখে সব সময়। এরা কোনো পেশাদার শিল্পী না। কিন্তু আঁকিয়েতে পেশাদার শিল্পীর চেয়ে খানিকটা এগিয়ে। পেশাদার শিল্পীর মতোই তীরের প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তুলেছে তাদের কারুশিল্পে।


খুব তীক্ষ্ণ নজর রাখলে এই শিল্পীর দেখা পেলেও পেতে পারেন। কিন্তু সে আপনাকে দেখলে দ্রুত গতিতে সটকে যাবে। তাকে ছোঁয়ার কোনো সুযোগ দেবে না।

এই আঁকিয়েরা হলো, সেন্টমার্টিন বিচের বিরল প্রজাতির কাঁকড়া। তাদের শিল্পকর্ম যেমন ভিন্ন, তেমনি নিজেরাও সেজেছে বাহারি রঙে। কোনটি সবুজ, কোনটি সাদা, কোনটি আবার খানিকটা কালচে বর্ণের।

দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার সাইজের এই কাঁকড়াগুলোর চলার গতি খুবই প্রখর। দৌড়ে নাগাল ধরা দায়। চোখের পলকে হারিয়ে যাবে। মাকড়সার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামলে নির্ঘাত প্রথম হবে এই শিল্পীরাই।


মাকড়সা যেমন সুতা দিয়ে জাল বোনে। এরাও বোনে তবে ক্ষেত্র ও উপাদানে রয়েছে ভিন্নতা। এই শিল্পীরা আঁকে মাটিতে বালির মণ্ড পাকিয়ে। ঠিক যেমন কারিগররা পুতি দিয়ে জৌলুস বাড়িয়ে তোলেন জামা কাপড়ের।

সেন্টমার্টিনের গলাচিপা থেকে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ঐতিহাসিক সমুদ্র বিলাস কটেজ পর্যন্ত চোখে পড়বে এই শিল্পীদের কারুকার্য। বিশেষ করে ভাটার সময় ভেজা মাটিতে এই আল্পনা যেকোনো দক্ষ শিল্পীর ভাবনার খোরাক যোগাতে সক্ষম। কাঁকড়ার এই আল্পনা নির্বিচারে তাদের নিধন করার প্রতিবাদে নাকি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে- সত্যিই ভাবনার বিষয়।  

 

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এসআই/এমজেএফ/

** পঁচা মাছে নষ্ট হচ্ছে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ