সেন্টমার্টিন থেকে: মেরিন পার্কে ঢুকে আঁকাবাঁকা সরু রাস্তাটা ধরে কিছুদূর এগোতেই টিলার ওপর আটকে যায় চোখ। সেখানে একটা জায়গা চারদিক ঘিরে রাখা হয়েছে বাঁশের বেড়ায়।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, আপনি যদি কাছিম ভরা সেই হ্যাচারি দেখার আশা নিয়ে সেদিকে যান, তাহলে আপনি পুরোপুরি পস্তাবেন। আমাদের অভিজ্ঞতা তাই বলে।
এবার সেই অভিজ্ঞতাটা খুলে বলা যাক, সেই হ্যাচারির পাশে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী। আছে কাছিম ভরে রাখার ১১টি ঝুড়িও, নেই শুধু কাছিম। হ্যাচারিটা দেখতে পুরাতন কবরের মতো। এজন্যই বুঝি সেখানে সুনসান নীরবতা।
কাছিমের এই শূন্য হ্যাচারিই মেরিন পার্কের পুরো চিত্র বলে দেয়। অথচ পার্কের গল্পটা হওয়ার কথা ছিল অন্যরকম। দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি গবেষণায় ব্যস্ত থাকার কথা ছিলো গবেষকদের।
২০০৬ সালে ৫৯০ হেক্টর জায়গার ওপর ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কটি নির্মাণ করে পরিবেশ অধিদফতর। ২০১০ সাল পর্যন্ত পার্কটির যথেষ্ট তদারকিও ছিলো। এরপর থেকেই শুরু হয় করুণ দশা।
সেন্টমার্টিনের পশ্চিমপাড়া নামে প্রায় জনশূন্য এলাকায় পার্কটির আবস্থান। বুধবার (০৬ এপ্রিল) বিকেল চারটায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পার্কে দুই তলাবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য এখানে রয়েছে ছয়টি বাংলো ও ১০০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি ডরমেটরি। তবে প্রত্যেকটি কক্ষই তালাবদ্ধ। কোনো কর্মকর্তা তো দূরের কথা, একজন নিরাপত্তারক্ষীও নেই সেখানে। জাদুঘরটিও তালাবদ্ধ।
জাদুঘরের জানালায় উঁকি দিয়ে দেখা যায়, একপাশে নানা কৌটায় ফরমালিন দিয়ে বিভিন্ন প্রাণী অগোছালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাপ, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, শামুক ও কাছিম অন্যতম। পাশাপাশি সাপসহ বিভিন্ন প্রাণীর ডিমও সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্যপাশে জেনারেটরসহ নানা তেলজাতীয় পদার্থ ফেলে রাখা। দীর্ঘদিন ধরে সেসব কৌটা পরিষ্কার না করায় নষ্টের পথে।
স্থানীয়রা জানান, পার্কটি তৈরির সময় সেখানে ছিলো ১৫টি কম্পিউটারসহ অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব। অথচ সরেজমিনে সেসব কম্পিউটারের দেখা মেলেনি। খোলা মাঠে স্থাপিত সোলার প্যানেলটিও পড়ে আছে অবহেলায়, নষ্ট হয়ে গেছে পাখাগুলোও।
একটি বাংলোর নিচতলার খোলা জায়গায় জাল বুনছিলেন নূর হোসেন ও তার স্ত্রী মরজিয়া বেগম। নূর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে দীর্ঘদিন ধরে কেউ আসে না। আমরা এখানে নিজেদের কাজ করি। ’
আবদুল আজিজ নামে এক নিরাপত্তারক্ষী পার্কের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন বলেও জানান নূর হোসেন।
আবদুল আজিজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় সময়ই পার্কে থাকি। দুপুরে বিশ্রামের জন্য বাড়িতে এসেছিলাম। নিরাপত্তার বিষয়টা আমি দেখি, অন্য বিষয়ে কিছু জানি না। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন বলেন, ‘কোস্টাল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের (সিডবি) আওতায় পরিবেশ অধিদফতর ২০১০ সাল পর্যন্ত পার্কটি তত্ত্বাবধায়ন করে। ওই বছরের শেষের দিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তারা চলে যায়। এরপর আর কেউ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়নি। একজন নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্বে আছেন। কিন্তু বিশাল এ সম্পদ রক্ষার জন্য তা মোটেও যথেষ্ট নয়। নেই কোনো কর্মকর্তা-গবেষক। ফলে এই পার্ক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যটাই এখন মৃত। ’
এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি নিয়মিত দেখভাল করার জন্য আমাদের লোকবল নেই। তাই ওপরের মহলকে অবগত করা হয়েছিলো। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবুও আমাদের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে গিয়ে পার্কটি দেখভালের কাজ করে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
টিএইচ/টিআই
** আখেরি স্টেশন দোহাজারী, কক্সবাজারে রেল কবে?
** বয়সটা কম, তবুও কাঁধটা ‘বড়’ তাদের..
** ঘোড়া চলে ঘুষ দিয়ে !
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ