ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন     ছবি- বাদল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফাের

পারাবত এক্সপ্রেস থেকে নেমে: বিড়ম্বনার শুরু স্টেশনে ঢুকেই। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষমাণ সময়ে কান ঝালাপালা করবে ঘোষকের কমান্ডার স্টাইলের ঘোষণা।

অহরহই কমেন্ট কানে আসে, জন্মের পর এদের মুখে কি কেউ মধু দেয়নি! স্বাগত জানানো ও সময়সূচি ঘোষণার কর্কশ কণ্ঠ শুনতে চায় না মানুষ।
 
বিরক্তি নিয়ে ট্রেন আসার পর বগি চেনার পালা। কোনো বগিই সিরিয়াল অনুযায়ী নেই। ‘ক’ সামনে থাকার কথা থাকলেও দেখা যাবে রয়েছে সবার পেছনে। আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ‘গ’ বগির দেখা মিললো সবার শেষের আগেরটিতে গিয়ে।
 
দেশীয় পর্যটনের স্বর্গ সিলেট-শ্রীমঙ্গল। দিনে দিনে পুরো সিলেটজুড়ে গড়ে উঠছে পর্যটন বলয়। অথচ সেই এলাকার ট্রেনে বগি খুঁজতেই ট্রেন মিস হওয়ার যোগাড়। ঠেলে, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যদিও উঠলেন তো সিটে বসতেই কেটে যাবে ১০ মিনিট। শান্তি নেই বসেও। গায়ের উপর এসে পড়বে লোকাল যাত্রীরা। কিছু বলারও নেই কেউ।
 
সিটে বসতে না বসতেই শুরু একের পর এক হকারের অত্যাচার। একজন যেতে না যেতেই চলে আসে অন্য আরেকজন। এর সঙ্গে রয়েছে হিজড়াদের বিড়ম্বনা। হকার ওঠা নিয়ে রেলপুলিশ বা দায়িত্বরতদের কাছে অভিযোগ করলে বলেন, এরা কথা বললে শোনে না। লোকাল লোক। তবে হকাররা বলেন, পুলিশকে ১০ থেকে ২০ টাকা দিয়েই তাদের ঢুকতে হয়।
 
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল হয়েই সিলেট ভেড়ে এ রুটে চলাচলকারী চারটি ট্রেন। তিনটিতে আবার এসি নেই। ঢাকা থেকে দুপুর ১২টায় ছাড়া জয়ন্তিকায় রয়েছে শুধু এসি সুবিধা। এসময় কোনো পর্যটক সাধারণত চলাচল করেন না। কারণ, তারা ঘণ্টা ছয়েকের জার্নির জন্য বেছে নেন একেবারে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে ছাড়া পারাবত অথবা রাত ১২টার দিকে ছাড়া উপবন। অথচ এ দু’টি ট্রেনেই এসি সুবিধা নেই।
 
এর মধ্যে ঢাকা থেকে বিকেল ৫টায় ছেড়ে আসা কালনী এক্সপ্রেসের সিটে বসে কোনোভাবেই আরাম পাবেন না। সব সিট যেনো তৈরি হয়েছে ছয় ফুট লম্বা মানুষের জন্য। আর হকারের অত্যাচার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় এসিবিহীন প্রথম শ্রেণিতে কোনো ভিআইপি থাকা। এরপর বাড়তি সঙ্গী তেলাপোকা।  এ অবস্থায় বিদেশি পর্যটক দূরে থাক দেশি পর্যটকরাই মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
 
ট্রেনে সরবরাহ করা খাবার নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই যাত্রীদের। বছরের পর বছর ধরে সেই বাসি চিকেন ফ্রাই, কাটলেট আর পাউরুটি মাখন হলো ট্রেনের খাবার। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনে কোনো ধরনের চুলা না থাকায় গরম খাবার পাওয়া সম্ভব হয় না। ট্রেনে দায়িত্বরত এক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে একদিন আগে তৈরি খাবারই বেশি বিক্রি করা হয়।
 
ক্যান্টিনে গিয়েও দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বসার সুব্যবস্থা নেই। আর দামের তালিকা থাকলেও ক্যাটাররা বগিতে বগিতে ঘুরে যখন বিক্রি করেন তখন বাড়তি দাম হাঁকাতে ভোলেন না। কারণ, ভাঙা কাপ-পিরিচের জরিমানার টাকা অনেকটা এভাবেই তোলেন বলে জানান ক্যাটার আবুল হোসেন।
 
তবে ক্যাটার সার্ভিসের মালিক ওবায়দুল হক ও ম্যানেজার দুলাল জানান, চুলার ব্যবস্থা করলেই এ সমস্যা দূর হবে।
 
বগি খুঁজে না পাওয়া বিষয়ে পারাবতের পরিচালক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বগির সমস্যা অনেক আগের। একটি ট্রেন নষ্ট হলে অন্য ট্রেন থেকে বগি এনে জোড়া লাগাতে হয়। এটা যদি আমরা সিরিয়াল করতে যাই তাহলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাই এটা মেনটেইন করা আসলেই সমস্যা।
 
দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন বিভাগে ট্রেনের এহেন সার্ভিস সত্যি হতাশাব্যাঞ্জক। একইসঙ্গে পর্যটনের অন্তরায়ও বটে।

**চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
এএ/জেডএস/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ