মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে: অপেক্ষারত যাত্রীদের জন্য মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সারি সারি আসন রাতের বেলা হয়ে যায় বিছানা। ঝকঝকে ধাতব বেঞ্চগুলোর প্রতিটিতে নাক ডেকে ঘুমান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
টার্মিনালের বেঞ্চিতে ঘুমানো এসব মানুষের কেউ হকার, কেউ বাসের স্টাফ, কেউ কাউন্টারের কর্মচারী আবার কেউবা ভবঘুরে। তাদের মধ্যে আছেন নারী-পুরুষ। আছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই।
বাংলানিউজের আয়োজনে ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে শ্রীমঙ্গল যাত্রার উদ্দেশে শুক্রবার (১৫ জুলাই) ভোরে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।
ছয় সারির প্রতিটি সারিতে ১০টি করে বেঞ্চ, একপাশে আরও ছয়টি সমেত মোট ৬৬টি বেঞ্চের প্রতিটিতে শুয়ে আছে মানুষ। বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন তারা, কেউ ডাকছেন তারস্বরে নাক!
ভোর সোয়া ৫টা থেকে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে বসতে না পেরে কাঁধে থাকা দুই ব্যাগের ভারে কিঞ্চিৎ বিরক্তই হলাম। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা মৌলভীবাজারের উদ্দেশে আসা আরেকজন রীতিমতো ক্ষেপে গেলেন। বিড়বিড় করে বললেন, ‘যাত্রীরা বসার জায়গা পায় না, এরা নাক ডেকে ঘুমায়। মামুর বাড়ির বিছানা পাইছে!’
এনা পরিবহনের সুপারভাইজার মো. ইসমাইল জানান, অনেকটা উপায়হীন হয়েই এখানে ঘুমায় মানুষ। এদের কেউ কেউ মহাখালীতে এসেছেন গভীর রাতে। অটোরিকশা বা ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া মেটানোর সঙ্গতি না থাকায় সকালের বাস চলাচলের জন্য অপেক্ষা করছেন এখানে ঘুমিয়ে।
টার্মিনাল রাতের বেলা যাত্রীশূন্য হয়ে পড়লে আশপাশের অনেক হকার, চা দোকানিরাও এখানে এসে ঘুমায়, জানান ইসমাইল।
ততক্ষণে ঘড়িতে পৌনে ৬টা, লোকসমাগম বাড়ছে টার্মিনালে। এনা পরিবহনের সামনে সিলেট অঞ্চলগামী যাত্রীদের রীতিমতো ভিড়। বিভিন্ন পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাঁকডাক দিচ্ছেন ঘুমন্ত মানুষগুলোকে ডেকে তুলতে।
বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে-কচলাতে আগত যাত্রীদের দিকে তাকায় এক পথশিশু। চোখে-মুখে তার রাজ্যের বিরক্তি আর অভিসম্পাত! আশ্রয়হীন এই শহরে যাত্রী আসনই তার আরামের বিছানা!
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
এমজেএফ/এটি