শ্রীমঙ্গল থেকে: চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে সবুজ চায়ের বাগানে বিশাল লেক ও ঝরনা।
তবে প্রকৃতির অপূর্ব দান এই সৌন্দর্যে এক ফোটা কালো মেঘ হিসেবে দেখা দিয়েছে এর যোগাযোগ ব্যবস্থা।
চারদিকে সবুজে ঘেরা চাবাগান মাঝে বিশাল লেকের স্বচ্ছ পানি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আষাঢ়ের বিকেলে কখনো কালো মেঘ, কখনো বা চকচকে রোদ। আর চাবাগানের ছায়া গিয়ে পড়ছে লেকের পানিতে।
ভাড়াউড়া লেকের পানির ওপর যখন চাবাগানের ছায়া পড়ছে, তখন মনে হচ্ছে, লেকের ভেতরেও রয়েছে আরেকটি বাগান।
শ্রীমঙ্গলের আরেক নৈসর্গিক সৌন্দর্য যজ্ঞকুণ্ডের ধারা। ঝরনাটি দিয়ে দূর থেকে প্রবল স্রোত এসে পড়ার শব্দে মুগ্ধ হবেন কবি, গায়ক গাইবেন গান। মাঝে মাঝে চকচকে রোদ, সবুজ চা পাতার ছায়া, ঝরনার পানির স্রোতধারা যেন পর্যটকদের কাছে ডাকছে।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মৌলভীবাজার রোড হয়ে কাকিয়া বাজার নেমে অথবা শহর থেকে ভাড়াউড়া চাবাগান হয়ে টিলার মাঝে সরু উঁচু মেঠোপথ দিয়ে জাগছড়া চাবাগানে গেলেই দেখা মেলে যজ্ঞ কুণ্ডের ধারা।
চারদিকে চাবাগান, মাঝখানে বিশাল আকৃতির প্রাকৃতিক লেক রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। শহর থেকে কলেজ রোড হয়ে রিকশায় ১০ মিনিট গেলেই ভাড়াউড়া কালীমন্দির। সেখান থেকে ভাড়াউড়া লেকে যেতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ছাড়া কোনো উপায় নেই পর্যটকদের।
তবে মোহনীয় এ সৌন্দর্য দেখতে মন চাইলেও সহজ যোগাযোগ মাধ্যম না থাকায় ভাড়াউড়া লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন না পর্যটকরা।
শহরে রিকশা থাকলেও পাহাড়ি টিলার মাঝে উঁচু-নিচু সরু রাস্তায় কেউ রিকশা নিয়ে যেতে চান না। তাই ঝরনা ও লেক দেখার সাধ মেটাতে বাধ্য হয়েই সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিতে হয়। ঘণ্টায় দু’শ’ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া এর। সরু পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে সিএনজি যোগে যাওয়াও কঠিন কাজ। পাহাড়ে উঠতে মাঝে মাঝে সিএনজি বন্ধ হয়ে যায়, মাঝে মাঝে গাড়িও বিকল হয়ে যেতে পারে।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে যজ্ঞকুণ্ডের ধারা ও ভাড়াউড়া লেকের দূরত্ব মাত্র প্রায় ১৫ কিলোমিটার। অথচ এই স্বল্প দূরত্বে যেতেই লেগে যায় ঘণ্টাখানেক। কারণ, সবগুলো পথই অত্যন্ত সরু।
চাবাগানের মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রকৃতির এই সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। অনুমতি না থাকলে লবণচাষিরাও পর্যটকদের আটকে দেন।
চাচাষি লিটন মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা চাবাগানের প্রায় ৭০০ শ্রমিক পরিবার নিয়ে এখানে বসবাস করি। আমরা সখ করে লেকের পানিতে মাছ ধরি’।
বরশিতে কি মাছ পাওয়া যায় জানতে চাইলে বলেন, ‘রুই-কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এ লেকের পানিতে রয়েছে’।
যজ্ঞকুণ্ডের ধারায় এক সময় পাহাড়ি পানির শব্দে গা শিউরে উঠলেও এখন আর নেই পানির কল কল শব্দ। ধারার একবারে কাছে গিয়ে দেখা যায়, আধা হাঁটু গভীরতায় পানির স্রোত বইছে।
এখন বর্ষাকাল হওয়ায় এটুকু পানির দেখা মিলছে বলে জানান চাচাষি সিতেশ। তিনি জানান, অনেক দূর থেকে মানুষ আসেন এই ধারা দেখতে। আগে ধারার পানির শব্দে অনেকেই কাছে যেতে চাইতেন না। কিন্তু এখন আর পানি নেই’।
কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও ভরাট হয়ে গেছে।
দিন দিন সৌন্দর্য হারাতে বসা এই লেক ও ধারা দেখার আগ্রহ থাকলেও বাহন না থাকা ও চাবাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মেলায় অনেককেই তেতো অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
**লাউয়াছড়ায় ১৫ হেক্টরের মধ্যেই দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ
**লাউয়াছড়ায় অর্থকরী ফসলের আত্মকথা
**নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
এসএম/এএসআর