ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

চুন ব্যবসায়ীর ঘাট থেকে মুক্তিযুদ্ধের সদর দপ্তরে

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
চুন ব্যবসায়ীর ঘাট থেকে মুক্তিযুদ্ধের সদর দপ্তরে ছবি: আবু বকর সিদ্দিকী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) থেকে: রাজাপুরে টিপরা রাজা অচক নারায়ণের কোনো চিহ্নই খুঁজে পাওয়া গেলো না। ৮শ’ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া রাজধানীর কোনো কিছুই নেই কোথাও।

চুনারুঘাট শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় চারিদিকে ধানক্ষেত ঘেরা রাজাপুর এখন কেবলই গ্রাম।

হযরত শাহজালাল ১৩০৩ সালে যখন সিলেট জয় করেন তখন তরফ (বর্তমান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট) এলাকায় রাজত্ব করতেন অচক নারায়ণ। হযরত শাহজালাল তার প্রধান সেনাপতি নাসির উদ্দিন সিপাহসালারকে পাঠান তরফ অভিযানে। ১৩০৪ সালের ওই অভিযানে পরাজিত হন অচক নারায়ণ। কালক্রমে তার রাজবাড়িও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

বর্তমান বাল্লা সীমান্তের টেকারঘাট গ্রামে তার মূল রাজধানী ছিলো বলে ধারণা পাওয়া গেলেও এ যাত্রা আর সেখানে যাওয়া হলো না।

অগত্যা পুরনো ঢাকা-সিলেট হাইওয়েতে উঠে মাধবপুরের দিকে রওয়ানা হতে হলো। পেছনে পড়ে রইলো চুনারুঘাট।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, এক চুন ব্যবসায়ীর নাম থেকেই এই চুনারুঘাট নাম। সে সময়কার যোগাযোগের একমাত্র পথ খোয়াই নদীর তীরে বড়াইল মৌজা তীরবর্তী ঘাটে ছিলো ওই চুন ব্যবসায়ীর কারবার। গোটা তরফ রাজ্যে ছড়িয়ে ছিলো তার চুন ব্যবসা। সেখান থেকে প্রথমে চুন ব্যবসায়ীর ঘাট, পরে আরো সংক্ষেপ হয়ে চুনারুঘাট নামটি টিকে যায়।
বর্তমান চুনারুঘাটের দক্ষিণে ভারত ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা, উত্তরে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবল, পূর্বে ভারত ও মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা এবং পশ্চিমে মাধবপুর উপজেলা।

জেলা সদর থেকে চুনারুঘাটের দূরত্ব ২৯ কিমি। তবে ঢাকা থেকে চুনারুঘাট আসতে মৌলভীবাজারের আগেই বাইপাস সড়কের আগে দক্ষিণে ঘুরে যেতে হবে, অথবা মাধবপুর থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে আসতে হবে চুনারুঘাটে।

চুনারুঘাট ছেড়ে পুরনো ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ধরে কিছু দূর এগুতেই মাইলের পর মাইল বিস্তৃত সমতল চা বাগান। এমন সমতল চা বাগান বোধ করি বৃহত্তর সিলেটের আর কোথাও দেখা যায় না। ফিনলে আর ডানকান এর মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোর মাইলের পর মাইল চা বাগান বিছিয়ে আছে এখানে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে প্রবেশের পর চা বাগান হারিয়ে গেলেও ফের ফিরে এলো উদ্যান শেষ হওয়ার পরপরই।

চুনারুঘাটের সীমানা পেরিয়ে মাধবপুরের দিকে কিছুটা এগুতেই পূর্ব দিকে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের রাস্তা।

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল এই বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় সমবেত হন মুক্তিবাহিনীর সিনিয়র অফিসাররা। আগরতলা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এখানে আসেন কর্নেল ওসমানী (পরে জেনারেল)। মুক্তিযুদ্ধের সমর কৌশল নির্ধারণ বিষয়ক নীতি নির্ধারণী এ সভায় রূপরেখা পায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী সম্পর্কিত সাংগঠনিক ধারণা ও কমান্ড কাঠামো। ওসমানীকে দেওয়া হয় মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব।
ম্যানেজার বাংলোটিকে ঘোষণা করা হয় মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর। এখান থেকেই ভাগ হয় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর। চালু হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।

তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশন থেকে এখানকার দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। বর্তমানে এখানে ম্যানেজার বাংলোর পেছনে বাঁধানো চত্বরের মাঝধানে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অর্জনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুলেট আকৃতির এক স্মৃতিসৌধ।

স্মৃতিসৌধ বেদিতে ওঠার মুখে দু’পাশে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি উৎকীর্ণ। মূল স্মৃতিসৌধের গোড়ায় লিখে রাখা আছে সদর দপ্তর ঘোষণার সভায় মিলিত হওয়া কর্মকর্তাদের নাম।

স্মৃতিসৌধের পাশে এক দল মানুষের জটলা। মাধবপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নেতা তারা। ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মালেক জানালেন- কোনো একজন মন্ত্রী আসবেন বলে অপেক্ষায় আছেন তারা।

স্মৃতিসৌধের পূর্ব দিকে সবুজ চত্বর। তার ওপাশে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত লেক। ওপাশে অনুচ্চ টিলা পেরুলেই ভারত। সারি সারি চা বাগান ঘিরে আছে স্থানটিকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
জেডএম/ 
 

 

আরও পড়ুন..

** চুরি গেছে মুড়ারবন্দরের শিলালিপি
**চেনা-অচেনা বন্য প্রাণীদের সঙ্গে লুকোচুরি
**বেটা-বেটির পুঞ্জি ঘুরে বীজহীন বাগানে
** রাত দুপুরে গভীর বনে ভয়ের সঙ্গে পাঞ্জা
** বন্যপ্রাণির বুনো গন্ধে মাতাল লাউয়াছড়ার রাত
**তপ্ত জলে মিশে আছে নির্মাইয়ের কান্না
** চায়ের রাজধানী সবুজ শীতল শ্রীমঙ্গলে
**৪ ঘণ্টায় চায়ের দেশে
**ট্রেন চলেছে চায়ের দেশে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ