উচাইল (হবিগঞ্জ) থেকে: কাদামাখা কাঁচা রাস্তা ধরে আধা কিলোমিটার মতো এগুতেই বিস্ময়ে বিমূঢ় হওয়ার দশা। এমন সুন্দর মসজিদ বাংলাদেশে কমই আছে।
এ গ্রামেরই গৃহস্থ বজলুর রহমান পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন মসজিদটির কাছে। মসজিদটির দক্ষিণ দিকে শাহ মজলিস আমিনের মাজার। মসজিদ চত্বরের চারপাশে অবারিত সবুজ। নানা প্রজাতির পাতা বাহারসহ হরেক ফুলের মেলা।
পোড়ামাটির চিত্রফলকে ফুল-পাতার নকশা। এমন অনিন্দ্যসুন্দর ও ব্যাপকভাবে নকশা কাটা মসজিদ এ দেশে বিরলই বটে। নির্মাণ শৈলী দেখে ধারণা করা যায়, হোসেন শাহ এর রাজত্বকালে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিলো। পূর্ব দিকের মূল প্রবেশ পথের উপরে কালো পাথরের একটি শিলালিপিও আছে। তবে এখনও এর পাঠ উদ্ধার হয়নি।
দিনাজপুরের সুরা মসজিদ, পটুয়াখালীর মসজিদবাড়ি মসজিদ, গৌড়ের খনিয়া দিঘীর মসজিদ ও নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ মসজিদের সঙ্গে এ মসজিদের খানিকটা মিলও রয়েছে।
বৃহত্তর সিলেটে এখনো টিকে থাকা সুলতানি আমলের একমাত্র মসজিদ এটি। হযরত শাহজালালের হাত ধরে ১৩০৩ সালে মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ এলাকায় মসজিদ নির্মাণের যে প্রবণতা শুরু হয় এই মসজিদ তারই অনন্য নজির।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আলীপুর বাজার থেকে পশ্চিম দিকে রাস্তা ধরে কয়েক কিলোমিটার এগুলে উচাইল গ্রামে এই মসজিদের অবস্থান। সদর উপজেলার রাজুরা ইউনিয়নের এই মসজিদটিতে যাওয়া যায় হবিগঞ্জ বাইপাস থেকেও।
আয়তাকার এ মসজিদের বাইরের দিকে দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১৩ মিটার, প্রস্থ প্রায় সাড়ে ৯ মিটার। মসজিদের চার কোণায় ৪টি ও বারান্দার ২ কোণায় ২টি অষ্টভূজ আকৃতির মিনার আছে। বর্তমান কাঠামোর মূল প্রার্থনা কক্ষের উপরে ছাদজোড়া গম্বুজ। পূর্ব দিকে আছে আয়তাকার কক্ষের বারান্দা।
বারান্দাসহ মসজিদটি আয়তাকার হলেও মূল প্রার্থনা কক্ষ বর্গাকার। প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৬ মিটার। তবে বারান্দার দৈর্ঘ্য প্রার্থনা কক্ষের বাহুর সমান হলেও প্রস্থ মাত্র দেড় মিটারের কিছু বেশি।
মূল কক্ষের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে আছে ৩টি করে দরজা। মাঝের দরজাগুলো তুলনামূলক বড়। এছাড়া বারান্দার দু’পাশে দু’টি করে দরজা আছে। ভেতরে পশ্চিম দেওয়ালে আছে ৩টি করে মিহরাব। পত্রাকারে নির্মিত মিহরাবগুরোর উপরিভাগে খাঁজ কাটা।
প্রায় বর্গাকার খিলান আকারে নির্মিত দরোজাগুলোর উপরিভাগে খাঁজকাটা। মসজিদটিতে দফায় দফায় সংস্কারের ছাপ পড়ায় আদি আকৃতি অনেকটাই বিলুপ্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৬
জেডএম/
**চুন ব্যবসায়ীর ঘাট থেকে মুক্তিযুদ্ধের সদর দপ্তরে
** চুরি গেছে মুড়ারবন্দরের শিলালিপি
**চেনা-অচেনা বন্য প্রাণীদের সঙ্গে লুকোচুরি
**বেটা-বেটির পুঞ্জি ঘুরে বীজহীন বাগানে
** রাত দুপুরে গভীর বনে ভয়ের সঙ্গে পাঞ্জা
** বন্যপ্রাণির বুনো গন্ধে মাতাল লাউয়াছড়ার রাত
**তপ্ত জলে মিশে আছে নির্মাইয়ের কান্না
** চায়ের রাজধানী সবুজ শীতল শ্রীমঙ্গলে
**৪ ঘণ্টায় চায়ের দেশে
**ট্রেন চলেছে চায়ের দেশে