ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পরপারে পুনর্মিলনের বিশ্বাসের ‘গদনা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
পরপারে পুনর্মিলনের বিশ্বাসের ‘গদনা’ ছবি:বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): কখনো ফুল, কখনো ত্রিশূল, আবার কখনো বা গাছপালা, এমন নানান প্রকারের নকশা! একটি থেকে একাধিক। প্রতিটি হাতজুড়েই এই ‘পিত’ রঙের শিল্প গেঁথে রয়েছে।

কুঁচকে যাওয়া চামড়ার মধ্যেও নকশাটি বেশ প্রস্ফুটিত হয়ে আছে।  

চা শ্রমিক নারীদের শরীরে অঙ্কিত এমন সব অদ্ভুত নকশাই তাদের ঐহিত্য, কৃষ্টি আর পরম্পরার কথাই মনে করিয়ে দেয় বারবার। দু’চার বছর আগে নয়। অনেক আগে, তাদের শৈশবে এ নকশাগুলোই খোদাই করে আঁকা হয়েছিল।  

চা শ্রমিকদের ভাষায় এ নকশাকে ‘গদনা’ বলে।  শরীরের রঙ উজ্জ্বল হলে নকশাটিও ফুটে ওঠে গাঢ় হয়ে। রঙ কালো হলে নকশাটি অস্পষ্ট হয়ে লুকিয়ে রয়।  

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেলে দুর্গম লাখাইছড়া চা বাগানে গিয়ে এমন হস্তশিল্পের দেখা মিললো। তবে কি এটি তাদের দারিদ্র্যের আর অভাব-অনটনের প্রতিবাদী প্রতীক?

নাচঘর সংলগ্ন একটি ছোট্ট চায়ের দোকানটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন দুখিনী ফুলমালি। তার স্বামী মারা গেছেন বহু বছর আগে। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে চা বাগানের শ্রমিকের এবং অপর ছেলে এই চায়ের দোকানটি চালায়।  

সেই দুখিনীর হাতেও পাওয়া গেল দুঃখ হয়ে জেগে থাকা ফেকাসে নকশা। বাম হাতের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে দিব্বি আছে। তিনি বলেন, ‘এটা আমার বাচ্চা বয়সে আঁকা হয়েছিল। ’

দুখিনীর মতোই শরীরে গদনা নিয়ে ঘুরে বেড়ান এই চা বাগানের আত্মা গোয়ালা, রোহিনী তাঁতি, পার্বতী খেরোয়ার এবং বিজলী তাঁতি। সবার সঙ্গেই কথা হলো।

আত্মা গোয়ালা বলেন, গদনা আঁকার মানুষদের এখন আর পাওয়া যায় না। আগে অনেক ছিল। আজ সেই মানুষগুলো হারিয়ে গেছে। তখন তারা ভারত থেকে আমাদের দেশে আসতো। গদনা আঁকার মহিলারা আমাদের বাগানে এসে বলতো- ‘গদনা পাতাবে গো চুলবুয়িয়াকে মাই। ’ 

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলতে লাগলেন, আমি যখন ছোট তখন আমার হাতে এবং কপালে এগুলো আঁকা হয়েছিল। সাতটা সুঁচ একসঙ্গে করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এগুলো আঁকা হয়েছিল। খুব ব্যথা লেগেছিল তখন। প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল এগুলো আঁকতে।  

ওই বাগানেরই অধিবাসী সন্দীপ ব্যানার্জী বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমাদের চা শ্রমিক নারীদের একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। অনেক বয়স্ক নারীদের শরীরে এই গদনা আঁকা আছে।  

তিনি বলেন, এই দাগ শরীরে থাকলে মৃত্যুর পর স্বামীর সঙ্গে দেখা হলে চিনতে কোনো অনুবিধা হবে না- এমন বিশ্বাস থেকেই চা শ্রমিকদের মধ্যে ‘গদনা’ শিল্পের উৎপত্তি।

তবে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে এই ‘গদনা’ শিল্পর মতো তাদের অনেক ঐতিহ্য অনেকটাই বিলুপ্তির পথে বলে আক্ষেপ করেন সন্দীপ।  


বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
বিবিবি/এএটি/এইচএ/

** ‘খনার বচন’ যে অফিসে!
** সন্তান নিয়ে ‘মুন্নি’ এখন একা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ