পারাবত এক্সপ্রেস (সিলেট-ঢাকা) থেকে: ঠিক সাত দিন পর আবার সেই পারাবত এক্সপ্রেসে। এবার উল্টোদিক থেকে।
সাত দিন আগে ১৪ জুলাই ঢাকা থেকে বাংলানিউজ টিম শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার পথে ট্রেনে হ-য-ব-র-ল বগির কারণে বিপাকে পড়েছিলো আরও অনেক যাত্রীর সঙ্গে।
সেবার দেখা গিয়েছিলো বগিগুলোর কোনো ধারাবাহিকতা নেই। ক-জ-ঞ-ট-খ-নাম বিহীন (এক্সট্রা-১),-চ-এক্সট্রা ৪-গ-ঠ বগি। কতগুলোতে নম্বরই ছিলো না।
বাংলানিউজের ওই খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন উঠেছিলো। তবে তা যে কর্তৃপক্ষেরও নজরে এসেছে, আর তার যে একটা ফলও হয়েছে তা নজরে এলো ফের পারাবতের যাত্রী হয়ে।
প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই একজন বগি অ্যাটেনডেন্ট হাসিমুখে কুশল জানতে চাইলেন। আর জানতে চাইলেন, কোন বগিতে উঠবো।
বগির নম্বর ‘চ’ জানালে বললেন, এখান থেকে চার বগি সামনে।
অবাক হতেই হলো। ১৪ জুলাইও একইভাবে এদেরই একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু সেদিন উত্তর পেয়েছিলাম দেখেন সামনের দিকে আছে।
যাত্রীসেবার মান কিছুটা বেড়েছে, নিঃসন্দেহে বলা চলে।
আর ওই রিপোর্টের পর যে কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও সক্রিয় হয়েছে তা বোঝা গেলো ট্রেনের গায়ে কাগজে কম্পিউটার প্রিন্টেড বগির নম্বর দেখে।
কিন্তু চিন্তিত হতে হলো বগি অ্যাটেডেন্টের কিছু কথায়। বললেন, ‘ভাই আমাদের ক্ষতি করিয়েন না, আমরা চুনোপুটি। ধরলে রাঘব বোয়ালদের ধরেন। ’
গলায় তার স্পষ্টতই অনুযোগের সুর।
কি হয়েছে জানতে চাইলে, জবাব এড়িয়ে গেলেন। বললেন, না কিছু হয়নি, এমনিতেই বললাম।
তবে বুঝা গেলো চাপটা এসে পড়েছে এই নিচের দিকের কর্মীদেরই ওপর।
যাইহোক, এগুতে থাকলাম ‘চ’ বগির দিকে। আরও তিনটি বগিতে দেখলাম কম্পিউটারে প্রিন্ট করা নম্বর সাঁটানো।
তবে ঞ, এক্সট্রা-৪, ট, ঝ লেখা চক দিয়েই। একটি বগির সামনে গিয়ে চোখ আটকে গেলো। সেখানে কম্পিউটার কম্পোজ করে লাগানো বগির নম্বরটি কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে।
মনে হলো কাজটি যাত্রীদের কারোই হবে।
আসলে কর্তৃপক্ষের একার উদ্যোগে নয়, যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এ ধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্য।
একটি বগির নম্বর এলোমেলো হয়ে গেলেই সবটা এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে এবারও ইঞ্জিনের পরেই মিললো ‘ঠ’। এরপর যথাক্রমে ঘ, ইএক্স-৪, চ, খ, ট, ঞ, ইএক্স-১, ঝ এবং ক বগি। ফলে সেই একই বিপাক।
পারাবত এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ে সকাল সাড়ে ৬টায়। আর সিলেট থেকে ছাড়ে বিকেল ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে।
এই ফিরতি পথে বগির ভেতরটা ভাগাড়ের মতো হয়ে থাকে। বাদামের খোসা, বিস্কুটের ঠোঙা কমলার ছিলকা, ডিমের খোসা সবই মেলে ট্রেনের মেঝেতে, সিটগুলোতে।
আর বগিগুলোর মাঝে ইটের গুড়ো ও সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে কোনোরকমের ব্যবস্থা। যার কোথাও কোথাও ঢালাই উঠে গিয়ে গর্ত হয়ে গেছে। কোথাও আবার কোথাও ফুলে উঠেছে। তাড়াহুড়োর যাত্রীরা হোঁচট খাচ্ছেন তাতে।
দেশি-বিদেশি পর্যটক যারা ট্রেনকে বেছে নিয়ে সিলেট যাতায়াত করেন তাদের জন্য এই ভ্রমণ যে খুব একটা আরামদায়ক নয় সেকথা বলাই বাহুল্য।
এই ট্রেনটিতে নেই কোনো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বগি। জানা গেলো শুধু জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে একটিমাত্র এসি বগি রয়েছে।
রাত সাড়ে ১০টায় এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবেই। যাত্রীদের অনেকেই জানালেন, এখন নাকি ট্রেন খুব বেশি দেরি হয় না। দশ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত এদিক সেদিক হয়।
বাংলানিউজের টিমটি নেমে গেলো শ্রীমঙ্গলে। ধারণা করা যাচ্ছে যথাসময়েই ঢাকায় পৌঁছে যাবে ট্রেনটি। হ্যাপি জার্নি পারাবত এক্সপ্রেস।
***পাখিরা আগে, পরে বাড়ির লোকেরা
*** চায়ের দেশে চা জাদুঘর
*** গরুও মানিয়ে নিয়েছে হাওরকে
*** ‘শ্রীমঙ্গল কিন্তু এক্কেবারে অন্য ধাঁচের’
*** মুভি দেখে পুলিশে যোগদান
*** ভোরের স্নিগ্ধ লাউয়াছড়া-১
*** লাউয়াছড়ার বুক চিরে ট্রেন ভেঙে দিয়ে যায় নির্জনতা
*** হ-য-ব-র-ল বগিতে ভোগান্তির পারাবত!
বাংলাদেশ সময় ১৯৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
এসআই/এমএমকে