রাতারগুল, গোয়াইনঘাট, সিলেট থেকে: শহর থেকে দূরে, বহুদূরে। যেখানে নেই কোনো যান্ত্রিক কোলাহল কিংবা নগর সভ্যতার যন্ত্রণা।
এমন নীরবতায় নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসা যেতে পারে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুলে।
সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের গোয়াইন নদীর দক্ষিণে রাতারগুলের অবস্থান। বনের দক্ষিণ রয়েছে দু’টি হাওর- শিমুল ও নেওয়া।
রাতারগুল একটি সংরক্ষিত এলাকা ও বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে দেখা মেলে বানর আর গুঁইসাপের। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, পাখি ও বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
‘বাংলার আমাজান’ খ্যাত রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলারবন। বর্ষা ঋতু এর যৌবনকাল। শুকনা মৌসুমে এর বিলে পানি থাকলেও রাতারগুলের পূর্ণরূপ দেখার আসল সময় বর্ষা ঋতু।
এখানে আছে একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। এখান থেকে রাতারগুলের চারদিকের মনভোলানো সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
চারদিকে শুধু থই থই পানি। এর মাঝে কোমর ডুবিয়ে বিভিন্ন মোহনীয় ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে জাম, জারুল, হিজল, করচ, অর্জুন, ছাতিমসহ নানা প্রজাতির গাছ। কোনো কোনো গাছের পুরোটাই পানিতে ডুবে আছে। রাতারগুলের স্বচ্ছ পানির ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে তার সবুজ পাতা।
সূর্যের মিষ্টি রোদে গাছের ছায়া রাতারগুলের স্বচ্ছ পানিতে পড়েছে। আর শ্রাবণের মৃদু হাওয়ায় পানির উপরিভাগ হালকা দোল খাওয়ায় গাছের ছায়াগুলো যেন করছে নৃত্য।
চারদিকে সুনশান নীরবতার মাঝে ডিঙি নৌকার বৈঠার স্পর্শে পানিগুলো যেন কঁকিয়ে ওঠে অদ্ভুত এক সুরের সৃষ্টি করছে। হিরণ্ময় নীরবতায় পানির কলকল শব্দ, গাছের ডালের ফাঁকে ফাঁকে রোদের লুকোচুরি, গাছগুলোর মোহনীয় ভঙ্গি আর গাছের ছায়ার নৃত্য দেখতে দেখতে পর্যটক মাত্রই পাবেন এক নৈসর্গিক অনুভূতি।
চৌরঙ্গিঘাট, মটরঘাট ও রাতারগুলঘাট- এ তিনটি ঘাট থেকেই রাতারগুলে ঢোকা যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চৌরঙ্গিঘাট দিয়ে ঢুকলে খরচ কম হয়। তুলনামূলক সস্তায় নৌকাও ভাড়া পাওয়া যায়।
ঘাটের মাঝি মইনুদ্দিন জানালেন, এটি ৪ বছর আগেও ছিল অবহেলিত। এর রূপ তখনও আবিষ্কৃত হয়নি। ৪ বছর আগে ১০/১২ জন ছাত্রের একটি দল এখানে এসে দুই মাস থেকে এর ওপর গবেষণা করেন। তারাই সাংবাদিকদের এ সৌন্দর্যের কথা জানালে দেশবাসীর নজরে আসে। সে বছর তেমন কোনো পর্যটক আসেননি। ৩ বছর আগে থেকে এখানে পর্যটকরা আসা শুরু করেন।
প্রথম পর্যটকদের একটি দলকে এ জলাভূমি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন বলেও দাবি করেন মইনুদ্দিন।
তিনি আরও জানান, সারা বছরই এখানে পর্যটকরা আসেন। তবে বর্ষা মৌসুমে পর্যটক বেশি হয়। শীতকালে পর্যটক কমে গেলে সে সময় কৃষি কাজ করেন তিনি। বাকি সময় নৌকার মাঝি হয়ে পর্যটকদের রাতারগুল ঘুরে দেখান।
রাতারগুল ঘুরে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আলামিন, সিফাত, আরমান, মামুন ও হারুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘অপূর্ব সুন্দর রাতারগুল। আমরা সবাই মুগ্ধ। নীরবতায় রাতারগুলের সৌন্দর্য পূর্ণরুপে ধরা পড়ে। তাই ইঞ্জিনচালিত নৌকা এখানে নিষিদ্ধ করা উচিত। এছাড়াও এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেন ও গান-বাজনা করেন। এগুলো বন্ধ করা উচিত’।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
এমআই/এএসআর
আরও পড়ুন
** পথেই মলিন বিছনাকান্দি যাওয়ার আনন্দ (ভিডিওসহ)
** রেমা-কালেঙ্গা উজাড় করে বাড়ছে চাষের জমি (ভিডিওসহ)
** ঘুরে আসুন রেমা-কালেঙ্গা-১
** শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তার ‘ডিজিটাল বালাইনাশক নির্দেশিকা’
** শ্রীমঙ্গলের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বধ্যভূমি’৭১ পার্ক
** লক্কর-ঝক্কর মার্কা ট্রেন সিলেট-শ্রীমঙ্গল পর্যটনের অন্তরায়
** সিলেটের ট্রেনে হকার, হিজড়া, ভিক্ষুকের উৎপাত