ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হজরত শাহপরান, আশাগাছ এবং অন্যান্য

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
হজরত শাহপরান, আশাগাছ এবং অন্যান্য ছবি: শুভ্রনীল সাগর

সিলেট থেকে: হজরত শাহজালালের (র.) বোনের ছেলে হলেন হজরত শাহপরান (র.)। তার জন্ম ইয়েমেনের হাদ্রামাউত অঞ্চলে।

তিনি ছিলেন শাহজালালের (র.) ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে অন্যতম। তিনি তার মামার সঙ্গে ১৩০৩ সালে ভারতবর্ষে আসেন। সেখান থেকে সিলেট শহর। শুরুতে মামার সঙ্গে তিনিও একই আস্তানায় থাকতেন।

কথিত আছে, মামার অনুপস্থিতিতে তার পোষা পায়রা রান্না করে খেয়ে ফেলেন ভাগনে শাহপরান (র.)। বিষয়টি জানতে পেরে ভাগনেকে গালমন্দ করেন মামা। তখন শাহপরান (র.) সেই পায়রার পালকগুলো বাতাসে উড়িয়ে দিলে একঝাঁক পায়রা হয়ে উড়ে যায়। ভাগনের এই কেরামতি দেখে মামা অভিভূত হয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন, ভাগনেও সাধনায় সফল হয়েছেন। তিনি শাহপরানকে (র.) আলাদা আস্তানায় যাওয়ার উপযুক্ত মনে করেন।

এরপর শাহজালাল (র.) তার হাতের লাঠিটি ছুড়ে দিলে সেটি গিয়ে পড়ে বর্তমান খাদিম নগরে শাহপরানের (র.) মাজার শরীফে। মামা আদেশ করেন, যেখানে লাঠি পড়েছে, সেখানে গিয়ে আস্তানা গাঁড়তে। তাই সেখানেই আস্তানা করেন তিনি। মামার ছুড়ে দেওয়া সেই হাতের লাঠিটি একটি গাছে রূপ নেয়, গাছটির নাম ‘আশা গাছ’। গাছটিতে একই সঙ্গে ডুমুর আর আম হয়। তবারক হিসেবে সেই ডুমুর আর আম খাওয়া হয় ভক্তি ভরে।

শাহপরানের (র.) মাজার শরীফ সিলেট মহানগরী থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ডানপাশে অবস্থিত। যাওয়া যাবে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টাউনবাস বা ব্যক্তিগত যানবাহনে।

মাজারের রাস্তা ঢুকে গেছে সিলেট-তামাবিল রোড থেকে ডানদিকে। মেইন রোডের উপরে মাজারের তোরন, দেখলেই চোখে পড়বে। এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি সুদৃশ্য টিলার ওপর মাজারটি। হেঁটেও চলে যাওয়া যায় দিব্যি। কিছুদূর পর থেকে রাস্তার দু’ধারে কোরানশরিফ, ইসলামী বই, তসবিহ, গিলাফ, নোকমা, মোমবাতি, আতর, আগরবাতি, গোলাপজল, কদমা, মিষ্টান্নের দোকান। মানতের সঙ্গে এসব জিনিসপত্র মাজার শরীফে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। মূল মাজার চত্বরেও এগুলো হাতে-হাতে বিক্রি করেন অনেকে।  

মাজারের সামনেই প্রশস্ত পুকুর। স্থানীয় নাম, শাহপরান পুষ্কনী। অনেকেই মানত করেন এখানে গোসল করার। পুকুরের একপাশে অজু করার ব্যবস্থা। মাজারে ঢোকার মূল সিঁড়ির বামপাশে নারীদের জন্য নির্ধারিত ইবাদত খানা ও গদি ঘর। মাজারের উন্নয়ন ও মানতের টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র গদি ঘরেই জমা দিতে হয়। এর ঠিক পাশ দিয়ে শাহপরানের (র.) কবর বরাবর সিঁড়ি উঠে গেছে। খালি পায়ে ঢোকার নিয়ম ও ছবি তোলা নিষেধ। মূল মাজার অংশের একদিকে নামাজ, কোরান ও প্রার্থনার স্থান। শাহপরানের কবর চারপাশে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। অনেকেই দেয়াল ধরে প্রার্থনা করছেন। মাজারের ওপর সুবিশাল একটি গাছের ছায়া। ধারণা করা হয়, এটিই সেই ‘আশা গাছ’, যেটি শাহজালালের (র.) ছুড়ে দেওয়া লাঠি থেকে রূপান্তরিত। লোকবিশ্বাস, এই গাছ ছুঁয়ে কেউ মানত করলে সেটি পূরণ হয়।

দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে নানা ইচ্ছে, সমস্যা ও রোগমুক্তির মানত-প্রার্থনা নিয়ে। কেউ দলধরে দরুদ পাঠ করেন, কেউ নামাজ, কোরান পাঠ শেষে বিশেষ মোনাজাত। যে যার মানত শেষে গদি ঘর থেকে তবারক নিয়ে নিজ ঠিকানায় ফেরেন। কেউ মানত অনুযায়ী দ্বিতীয়বার এসে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত যাইহোক, এখানে প্রতিদিনের চিত্র এক।

ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সিলেট এলে অন্তত একবার মামা-ভাগনে তথা শাহজালাল ও শাহপরানের (র.) মাজার শরীফ ঘুরে যান। যেমন ঢাকা থেকে এসেছেন হারুন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এ যুবা বেশ কয়েকটি আর্জি নিয়ে এসেছেন। আলাপে বলেন, শাহজালালের (র.) মাজারেও গিয়েছি। তারা আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দা। এখানে এসে প্রার্থনা করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ কবুল করবেন। এর আগে, হজরত বায়েজীদ বোস্তামীর (র.) মাজারে প্রার্থনা করে আমার অনেক ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

আরও পড়ুন...

*** মাধবকুণ্ড ঝরনাতলার কোলাহলে

*** ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা পরিকুণ্ড

*** ‘আগে সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার, পরে মিউজিয়াম’

*** শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে হাকালুকির কন্যারা
*** ধুলো ঝেড়ে কুশিয়ারার ইস্ট-ইন্ডিয়া ঘাট​
*** অরূপরতনের সন্ধানে শ্রীচৈতন্যের বাস্তুলীলায়
*** জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে রেমা-কালেঙ্গা
*** রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা  
*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এসএনএস/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ