সিলেট থেকে: রেলওয়ে পথে সিলেট, সে যেন এক দুঃসহ যাত্রার নাম। সরাসরি সিলেটে এখন আর কেউ পারতপক্ষে রেলে যাত্রা করেন না।
কেবল ঢাকা নয়, সিলেট থেকে রেল ছিলো ভারতের সঙ্গেও যুক্ত। ব্রিটিশ আমলে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে কুলাউড়া-শাহবাজপুর হয়ে ভারতের শিলচর পর্যন্ত যাতায়াত করা যেতো। এখন এটা শুধুই অতীত।
সড়ক পথ রেলের চাপ কমিয়ে দিয়ে যাত্রী কেড়ে নিয়ে মুমুর্ষ করেছে রেলপথটাকে। সেই ব্রিটিশ আমলের মিটার গ্রেজ লাইনে চলছে ট্রেন। যে কারণে দেশের সবচেয়ে ধীর গতির ট্রেনও চলে সিলেট রুটে।
রেলওয়েভিত্তিক ফেসবুকে সবচেয়ে বড় গ্রুপ ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েস্ট জোন’র অ্যাডমিন বিশ্বজিৎ ঘোষ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-সিলেট রেলপথে রানিং টাইম অনেক বাড়তি লাগে। প্রচুর সময় নষ্ট হয়। এসি নেই পারাবত ও কালনী ট্রেনে। জয়ন্তিকায় এসি ঠিকমতো কাজ করে না। সময়ে ধরা খায় কালনী। আজমপুর থেকে লুজ টাইমের জন্য মহানগর গোধূলীর পেছনে পড়ে থাকতে হয় পারাবত এক্সপ্রেসকে।
সিলেট থেকে ঢাকায় আগে নিয়মিত যাতায়াত করতেন ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান। মাঝখানে বেশ কিছুকাল তিনি প্রবাসে ছিলেন।
এখনকার রেলের অবস্থা দেখে তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট রুটে সুরমা মেইলে এক সময় ফার্স্ট ক্লাস, এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেবা) ও খাবার গাড়ি দেখা গেছে। এখন এর কিছুই নেই। পারাবত ও উপবন থেকে বাদ পড়েছে স্নিগ্ধা নামের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেবা।
তবে, সিলেটের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং প্রবাসীরা চান ঢাকা থেকে সিলেটে রেলপথের দূরত্ব চার ঘণ্টায় নিয়ে আসতে। আর এটা সম্ভব করতে তৎপর সিলেটের চার জেলার সংসদ সদস্যরা।
এ বিষয়ে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই আগ্রহী ব্রডগেজ লাইনে। এখন আর কোনো মিটার গেজ লাইন হবে না, সব লাইন হবে ব্রডগেজ। আর নতুন যেসব কোচ আসবে সেখানেও অগ্রাধিকার পাবে সিলেট।
অর্থমন্ত্রী আবুল আব্দুল মুহিত নিজে এ নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে আলাপে আব্দুল মুহিত নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু কোচ সিলেট রুটে যুক্ত করতে বলেছেন।
বিষয়টি জানিয়ে ড. আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেটের রেলপথটা এখন আর সিলেটের যাত্রীরা ব্যবহার করছেন না। ওখানে কোনো এসি কোচের সুব্যবস্থা নেই। যাত্রীদের ভোগান্তি খুব চরমে।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি হাসিন আহমেদ সিআইপি বলেন, সিলেট রুটে চাইলে পুরো একটি এসি ট্রেন চালানো সম্ভব। তবে দ্রুত গতি চায় যাত্রীরা। সরকার চাইলে এটা প্রাইভেট খাতে দিলে চার ঘণ্টায় ঢাকা সিলেট রেল চালানো সম্ভব।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্য মতে, ঢাকা-সিলেট রুটে আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে চারটি। জয়ন্তিকা, পারাবত, উপবন ও কালনী। এছাড়া এ রুটে সুরমা নামে একটি মেইল ট্রেনও রয়েছে। এ ৫ ট্রেনে সব মিলিয়ে ৬৮টি বগি থাকার কথা থাকলে ট্রেনগুলো চলছে ৪০টিরও কম বগি দিয়ে।
এর মধ্যে জয়ন্তিকায় ১৩টি বগির মধ্যে এখন চলছে ১০টি, পারাবত এক সময় ২০টি বগি নিয়ে যাত্রা করলেও এখন এর বগির সংখ্যা ১২টি, উপবনের ১৩ বগির মধ্যে চলছে ১২টি, আর ১৩টি থেকে কালনীর বগি দাঁড়িয়েছে ৯টিতে। সুরমা মেইলে ৯টি বগির মধ্য থেকে বাদ পড়েছে চারটিই।
চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে দু’টি। এগুলো হলো পাহাড়িকা ও উদয়ন। জালালাবাদ নামে একটি মেইল ট্রেনও রয়েছে এ রুটে। তিন ট্রেন মিলিয়ে এ রুটে ৩২টি বগি চলাচলের কথা, চলছে ৩০টি।
শাখা ট্রেনের মধ্যে সিলেট-আখাউড়া রুটে একটি করে ট্রেন ও ডেমু ট্রেন রয়েছে। কুশিয়ারা নামের ট্রেনটিতে ৬টি বগির ৬টিই চলছে। আর ডেমু ট্রেন চলছে দুটি ট্রেনের একটি সেট নিয়ে। সিলেট ছাতক রুটে একটি ট্রেন চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এসএ/এইচএ/
** যেভাবে তৈরি হয় শীতল পাটি
** উপমহাদেশের প্রথম চা বাগানে
** ঢাকা-সিলেট: চারলেনের অপেক্ষায় সিলেটবাসী ও পর্যটক
** দুই কারণে সাতছড়িতে ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী
** ট্রেইলে নয় ওয়াচ টাওয়ারে সাতছড়ি দর্শন
** বাসে বিমানের ছোঁয়া!
** এসি বাস নেই সিলেট রুটে!