শ্রীমঙ্গল, কানাইঘাট ঘুরে: অন্য অনেক জিনিসের মতোই জারা লেবুর নামও প্রথম শুনেছি এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের মুখে। শহরে বাস করে আমরা যখন লেবুটির নামই জানি না, তখন প্রকৃতিপ্রিয় এ মানুষটির বাসার ছাদেই অন্য হরেক ফল-ফলাদির মতো ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে সিলেটের বিখ্যাত এ লেবু।
একটি লেবু ঠিক মতো ধরতেই লাগে দুই হাত। যেমন মোটা তেমন বড়। রং হলদে। কাগজি, এলাচি, গোড়া, শরবতিসহ অন্তত সাত প্রজাতির লেবু নিয়ে বসে থাকা বিক্রেতা শহীদুলের কাছে কৌতূহলবশতই দাম শোনা। কত জানেন? বড় আকারের একটি লেবু হাতে তুলে বললেন এটির দাম ১ হাজার টাকা!
বাজারে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা হালি লেবু কিনতে অভ্যস্ত যে কোনো ব্যক্তির কাছে এটি আকাশ থেকে পড়ার মতো বিষয় বটে। যাইহোক, সে যাত্রা বিক্রেতা পর্যটক পেয়ে বেশি চেয়েছে কিংবা মজা করেছে ভেবে চলে আসা। পাশের অন্য একটি দোকানির কাছে পাওয়া গেলো ৮শ’ টাকার অন্য একটি জারা লেবু। তবু সেদিন রাতে কথা না বাড়িয়ে সিলেট এসে পরের দিন বাজারে গিয়ে মিললো ২ হাজার টাকা হালির লেবু।
বিক্রেতা মুক্তার বলেন, ‘অবাক হইয়েন না। এই লেবু একটি ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় ঈদের সময়। একটি লেবুর ওজন ২ কেজিও হতে পারে। চাহিদা যখন বেশি খাকে, তখন দামও বাড়ে। জৈন্তা আর হরিপুরে এ লেবু সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। ওখানকার লেবু আকারেও বড়। মূলত পাহাড়ি পরিবেশ ও মাটিতে এ লেবু ভালো হয়।
দাম বেশি হলেও চাহিদা কম নয় বলেই জানালেন তিনি। জারা লেবুর একটি বিশেষত্ব হলো এর ছিলকা থেকে ভেতরের রস সবই খাওয়া যায়। তবে এতে রস একটু কম হয়। ছিলকা পুরোটা খাওয়া যায়। স্বাদ একটু মিষ্টি। মূলত ছিলকার জন্যই জারা লেবু বেশি পরিচিত। ছিলকা খাওয়া যায় বলেই এটা অন্য লেবু থেকে আলাদা। আমরা সচরাচর লেবুর যে বিশেষত্ব দেখি তা থেকে জারা লেবু স্বতন্ত্র এখানেই।
এই লেবু দেশের মধ্যে কেবল সিলেটেই ভালো হয়। দেশের টিলা অধ্যুষিত কিছু এলাকায় হলেও আকারে হয় ছোট।
সেদিন কানাইঘাটে যে মজা ভেবে ভুল হয়েছিলো তা আর বুঝতে বাকি রইলো না। আগ্রহটা এবার বেড়ে গেলো গাছ ও চাষ সম্পর্কে জানার। তাই শ্রীমঙ্গল এসে ছুটে বেড়ানো এ বাগান থেকে ও-বাগান। অবশেষে জানা বালিশিরার বিষাবাড়ি রয়েছে ৬শ‘ একরের লেবু বাগান। সেখানে কয়েকটি গাছ আছে।
বাগান খুঁজে বের করে ম্যানেজার সুজিত পালকে অনুরোধ করা হলো ফল দেখোনোর। তিনি বলেন, আমাদের এখানে এর ফলন কম। সাধারণত বছরে একবার ফলে। এখানকার মাটিতে বড় হয় না। তাই চাষ কম।
কোরবানি ঈদ ও মনসা পূজার সময় এ লেবুর চাহিদা বেশি থাকে বলে জানান তিনি। বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠ মাসে বিয়ের মৌসুমে প্রচুর বিক্রি হয়। মূলত শ্রাবণ মাস জারা লেবুর সময়। তবে শ্রীমঙ্গলের লেবুর যে আকার হয় তাতে একটি ২৫-৩০ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না বলে জানান সুজিত।
বিক্রেতাদের কাছে জানা যায়, বিদেশেও এ লেবুর চাহিদা রয়েছে। সিলেট অঞ্চলের যে কোনো বড় অনুষ্ঠান জারা লেবু ছাড়া যেন অপূর্ণ থেকে যায়।
পর্যটকরা যারা জানেন তারা সিলেট ভ্রমণে জারা লেবু কিনতে ভোলেন না। আপনিও খুঁজে দেখতে পারেন একবার। তবে শহরের পাইকারি বাজারগুলো ঘোরাই উত্তম।
জারা লেবু যাদের কাছে অচেনা-অজানা তাদের কাছে সত্যি এক বিস্ময়। এক লেবুর দাম হাজার টাকা! ভাবা যায়!
আরও পড়ুন...
** সবুজের বুকে মোহময় শার্ফিন
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৪ (শেষ পর্ব)
** ছবিতে হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ি
** ‘কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার’
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৩
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-২
** হাওরের হাঁসে হাসি
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-১
** মায়ার বাঁধনে মায়া, সঙ্গী জেমস-মনা
** এবার আসছে গৌরাঙ্গের সাত লেয়ারের জুস
** সবুজের বুক চিরে চেনা নতুন শ্রীমঙ্গল
** নাগা মরিচের আরও ছবি
** সাদা-কালো নাগা মরিচে গিনেস রেকর্ডের ঝাল
** তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
** রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
** পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
** চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৬
এএ/টিআই