টি হ্যাভেন রিসোর্ট (শ্রীমঙ্গল) থেকে: প্রকৃতিকে ঠিকঠাক রেখে পর্যটনের বিকাশ ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন বন বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান। একইসঙ্গে তিনি সড়ক ও রেল বিভাগসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নির্মাণ কাজের আগে বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করার দাবি জানান।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ উদ্যানের টিকিট বিক্রি করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। গত বছর এই উদ্যানে তিন লাখের বেশি পর্যটক এসেছেন বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।
এসব তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যপ্রাণীর জন্য এখনও সুন্দর পরিবেশ রয়েছে লাউয়াছড়ায়। লাউয়াছড়ায় কাজের ক্ষেত্রে সড়কসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগ বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করেন না।
আমরা ট্যুরিস্টদের বিরুদ্ধে নই, তবে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে হোক এটা চাই। ইকো ট্যুরিজমের অর্থ হলো প্রকৃতিতে ঠিক করে ট্যুরিজম ডেভেলপ এবং স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে এটা করতে হবে, যোগ করেন তিনি।
শুক্রবার (২২ জুলাই) শ্রীমঙ্গলের টি-হ্যাভেন রিসোর্টে বাংলানিউজ আয়োজিত ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: সিলেটে পর্যটন’ শীর্ষক বিশেষজ্ঞ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সিলেটের সহকারী বনসংরক্ষক।
তবিবুর রহমান আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পর্যটন খাতে বিকশিত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে পর্যটনের বিকাশ যেনো পরিবেশবান্ধব হয় সেই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় না করেই লাউয়াছড়ার জানকিতে ব্রিজ ও উদ্যানের মাঝের সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। লাউয়াছড়ার জানকিছড়ায় বন্যপ্রাণি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ব্রিজ ও রাস্তার এই সংস্কার কাজে অনেকগুলো গাছ কাটা পড়বে। বন্যপ্রাণি হুমকির মুখেও পড়বে বলে জানান তিনি।
তবিবুর রহমান আরও বলেন, আমি উন্নয়ন বিরোধী নই, লাউয়াছড়ায় পর্যটক আসুক চাই, কিন্তু প্রকৃতির ক্ষতি করে নয়।
শুক্রবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলানিউজের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেননের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পর্যটন সংক্রান্ত এ আলোচনা সভা শুরু হয়। বাংলানিউজের সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর আসিফ আজিজ ‘বছরজুড়ে দেশঘুরে: সিলেটে পর্যটন’ বিষয়ক পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন । প্রেজেন্টেশনে তারা সিলেটে পর্যটন সংক্রান্ত বাংলানিউজে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট তুলে ধরেন।
আলোচনায় সিলেট বিভাগের পর্যটন সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট একদল বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও রয়েছেন পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারাও।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রাশেদুল হাসান, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল হাই আল হাদী, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম, সহযোগী অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আফজাল হোসেন, বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী তানিয়া খান, পর্যটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার একেএম মোশাররফ হোসেন, সরীসৃপ গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান ও ট্রাভেলার রিয়াসাদ সানভী, সপ্তডিঙা সরবরাহের পরিচালক সুলতান মো. ইদ্রিস লেদু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোবাশ্বির আলী মুন্না, সিলেট ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মো. ইউসুফ আলী, মানিক চাঁদ রুদ্র পাল, সৈয়দ রিফাত জামান রিজবী, ডিভিশনাল ট্যুর গাইড অ্যাসিয়েশনের খালেদ হোসেন, কামরান, আহাদ, শেখর রিজবী, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী, ক্রেলের রিজওনাল কোঅর্ডিনেটর (নর্থ ইস্ট জোন) মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, ক্রেলের নর্থ ইস্ট জোনের কমিউনিকেশন অফিসার ইলিয়াস মাহমুদ, শ্রীমঙ্গল উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবিতা দাস প্রমুখ।
দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজের এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় রয়েছে হোটেল শ্রীমঙ্গল ইন, টি হ্যাভেন রিসোর্ট, ইস্পাহানি, হোটেল নির্ভানা ইনসহ সিলেট-শ্রীমঙ্গলের শুভানুধ্যায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৬
এমআই/এমজেএফ/এসএনএস/এমএম/এমএ/এসএ/এটি