ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পর্যটনের বিকাশে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৬
পর্যটনের বিকাশে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

টি হ্যাভেন রিসোর্ট (শ্রীমঙ্গল) থেকে: সিলেট বিভাগে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ পর্যটনের বিকাশে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। তারা বলেছেন, পর্যটন সংশ্লিষ্ট সরকারি মন্ত্রণালয়-বোর্ড থেকে শুরু করে একেবারে দর্শনার্থী এমনকি স্থানীয়দেরও এক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখাতে হবে।

দরকার সর্বসাধারণের সচেতনতাও।

শুক্রবার (২২ জুলাই) চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের ‍টি হ্যাভেন রিসোর্টে বাংলানিউজের ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: সিলেটে পর্যটন’ শীর্ষক প্রথম পর্বের আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলানিউজের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেননের স্বাগত বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আলোচনা। এরপর সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে বাংলানিউজে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের প্রেজেন্টেশন করা হয় প্রোজেক্টরে। এ পর্ব পরিচালনা করেন বাংলানিউজের সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল ও অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর আসিফ আজিজ।

আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশেদুল হাসান, অধ্যাপক ড. মো. আফজাল হোসেন, সহকারী অধ্যাপক বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি)  পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম, সহযোগী অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মৌলভীবাজার পর্যটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল হাই আল হাদী, মৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান, বন্যপ্রাণি গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান, গবেষক ও আলোকচিত্রী তানিয়া খান, টি হ্যাভেন রিসোর্ট মালিক আবু সিদ্দিক মো. মুসা, শ্রীমঙ্গল উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবিতা দাস, ট্রাভেলার রিয়াসাদ সানভী প্রমুখ।

মাহমুদ মেনন বলেন, সরকার ঘোষিত পর্যটন বর্ষকে (২০১৬) সাফল্যের রূপ দিতে এবং পর্যটন সম্ভাবনাকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সম্ভাবনা ও সমস্যা রিপোর্ট আকারে তুলে ধরেছে। এর আগে বাংলানিউজের একটি টিম পুরো কক্সবাজারে আটদিন ধরে ভ্রমণ করে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে তা সুপারিশ আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।  

পর্যটন নিয়ে বাংলানিউজের উদ্যোগের প্রশংসা করে অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশেদুল হাসান বলেন, বাংলানিউজের মতো এমন টিম আরও থাকলে দেশ পিছিয়ে থাকতো না।

সিলেটকে মাল্টিপল ডেস্টিনেশন অব মাল্টিপল অ্যাক্টিভিটিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিউনিটি বেসড ট্যুরিজমকে দাঁড় করাতে না পারলে এ সেক্টর সাসটেইনেবল হবে না। ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ ও ট্যুরিজম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ট্যুরিজম বোর্ডের সমন্বয়ের অভাব আছে। এটা হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ব্যাপার, এতে সবাইকে অংশ নিতে হবে।

ড. আফজাল হোসেন বলেন, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিশ্বের এক নম্বর শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে।

ঠিকমতো নজর দিলে ট্যুরিজম সেক্টর গার্মেন্ট বা ম্যানপাওয়ার সেক্টরসহ সব সেক্টরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মত দেন ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া।

অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম পরামর্শ দেন, পর্যটন নগরীতে নির্দেশনা ফলক খুবই প্রাসঙ্গিক। ট্যুরিস্টরা শ্রীমঙ্গল বা সিলেটে নামার পর কোন পথে যাবে, কোথায় কীভাবে যাবে এসব ধারণা সম্বলিত নির্দেশক থাকা দরকার।

শাহরীয়ার সিজার রহমান বলেন, ইকোট্যুরিজম গড়ে তুলতে হলে প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পর্যটন বিকাশের জন্য সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিকল্প নেই মন্তব্য করে অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের মতো সিলেট রুটেও ননস্টপ ট্রেন দরকার।

কবিতা দাস বলেন, ছোট বেলা থেকেই যেন ছেলে-মেয়েরা পর্যটন বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে সেজন্য পাঠ্যপুস্তকে পর্যটন বিষয়টি সংযুক্ত করতে হবে। তবেই বাচ্চারা ইকো ফ্রেন্ডলি ও পর্যটনে আকৃষ্ট হবে।

তানিয়া খানের কথা, পর্যটন শিল্প বিকাশের আগে বনসম্পদ ও বন্যপ্রাণি রক্ষা করতে হবে। বন যেন ধ্বংস না হয়। বন-মুরগি, মুখপোড়া হনুমানও দেখতে পাওয়া যাবে না, যদি রেললাইন বাড়াতে গিয়ে বন ধ্বংস করি আমরা।  

এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, পর্যটন এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, পর্যটন বিকাশে তারাও কাজ করছে।  

প্রকৃতিকে ঠিকঠাক রেখে পর্যটনের বিকাশ ঘটানোর দাবি জানান তবিবুর রহমান। তিনি বলেন, সড়ক ও রেল বিভাগসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নির্মাণ কাজের আগে বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

আবদুল হাই আল হাদীর বক্তব্য, চার হাজার বছর আগে সিলেটে সভ্য মানুষের বসবাস ছিল- এটি পুরানে পাওয়া যায়। আবার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে বললে- প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনায়ও দেখা গেছে জৈন্তায় তিন হাজার বছর পূর্বের মেঘালিথিক পাথর পাওয়া গেছে। এসব ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট গুরুত্ব দিয়ে সিলেটের পর্যটনে বিকাশ ঘটাতে হবে।

আবু সিদ্দিক মো. মুসা বলেন, শ্রীমঙ্গল খুবই সুন্দর এবং শান্তির জায়গা। এখানকার চারদিকে চা বাগান, লাউয়াছড়া উদ্যান, নানা জীববৈচিত্র্য স্রষ্টার এক অনন্য সৃষ্টি।

পর্যটন নিয়ে জনসাধারণের সচেতনতা দরকার উল্লেখ করে ট্রাভেলার রিয়াসাদ সানভী বলেন, পায়ে ২২টি জোঁক নিয়ে উল্লুকের ছবি নিয়ে ফিরেছিলাম। চিৎকার করিনি, কারণ উল্লুক চলে যাবে। কিন্তু যখন বের হলাম তখন দেখলাম হিন্দি গান বাজিয়ে মানুষ বনে প্রবেশ করছে। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা দরকার।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সপ্তডিঙা সরবরাহের পরিচালক সুলতান মোহাম্মদ ইদ্রিস লেদু, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোবাশ্বির আলী মুন্না, সিলেট ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মো. ইউসুফ আলী, মানিক চাঁদ রুদ্র পাল, সৈয়দ রিফাত জামান রিজবী, ডিভিশনাল ট্যুর গাইড অ্যাসিয়েশনের খালেদ হোসেন, কামরান, আহাদ, শেখর রিজবী, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী, ক্রেলের রিজওনাল কোঅর্ডিনেটর (নর্থ ইস্ট জোন) মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, ক্রেলের নর্থ ইস্ট জোনের কমিউনিকেশন অফিসার ইলিয়াস মাহমুদ প্রমুখ।

প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টারও বেশি সময়ের এ আলোচনা শেষ হয় বিকেল ৪টায়। আলোচনার সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলানিউজের হেড অব নিউজ।

এ আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২৪ জুলাই রোববার। ওই আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজের এ অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় রয়েছে শ্রীমঙ্গল ইন, টি হ্যাভেন রিসোর্ট, ইস্পাহানি এবং সিলেটের নির্ভানা ইন ও সিলেট-শ্রীমঙ্গলের শুভানুধ্যায়ীরা।


বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৬
এমআই/এমজেএফ/এসএম/এমএ/এসএনএস/এসএ/টিআই/আইএ/এসএইচ/এইচএ/

**বাংলাদেশের পর্যটন হবে বিশ্বের এক নম্বর শিল্প
**হিন্দি গান বাজিয়ে মানুষ বনে প্রবেশ করেন!
**শ্রীমঙ্গল খুবই সুন্দর এবং শান্তির জায়গা: মুসা
**‘পর্যটন উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ’
**ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সিলেটের পর্যটনে গুরুত্ব চাই
**বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় জরুরি অন্য বিভাগের
**আগে বন্যপ্রাণি রক্ষা করতে হবে
**পাঠ্যপুস্তকে পর্যটন বিষয় যুক্ত করতে হবে
**ট্যুরিজমকে ইকো ফ্রেন্ডলি করতে হবে
**লাউয়াছড়া উদ্যানে পর্যটক সাড়ে ৩ লাখ ছাড়িয়েছে
**ঘটনা ঘটার আগেই সমাধানের চেষ্টা করি
**ঢাকা টু সিলেট ননস্টপ ট্রেন দরকার
**প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে
**ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটনের কিছুই জানে না
**
সিলেটের জলবায়ু ও পরিবেশ পর্যটন উপযোগী
**ট্যুরিজম সেক্টরের সম্ভাবনা অপার
**গণসচেতনতা তৈরিতে সংবাদকর্মীদের আরও এগিয়ে আসা উচিত

**পর্যটন নিয়ে বাংলানিউজের উদ্যোগ সময়োপযোগী
**টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন ভাবনা জানালেন রাশেদুল হাসান
**ট্যুরিজম বোর্ডের সমন্বয়ের অভাব
**সিলেট মাল্টিপল ডেস্টিনেশন অব মাল্টিপল অ্যাক্টিভিটিস
**বাংলানিউজের মতো টিম আরও থাকলে দেশ পিছিয়ে থাকতো না
**পর্যটন বর্ষকে সফল করতে সিলেটের পর্যটন তুলে ধরছে বাংলানিউজ
**সিলেটের পর্যটন নিয়ে প্রোজেক্টরে চলছে প্রেজেন্টেশন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ