তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে: একটা সময় ছিল যখন প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাট-বাজার বসতো যাদুকাটা নদীর তীরে।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাটা ইউনিয়নের বিন্নাকুলি এলাকায় এ বাজার।
আট-নয় বছরে আগেই এ বাজারে দোকানের সংখ্যা ছিলো হাজার খানেক, এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০টি। বাজার কমিটির হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ১২০জন সদস্যর নাম থাকলেও দোকান আছে অর্ধেক।
তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এ বাজারে এক সময় পাহাড়ি লোকজনও কেনাকাটা করতো দাবি বাজার কমিটির সভাপতি ও বাজারে অবস্থিত ওষুধের দোকান মালিক পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলাম।
যাদুকাটা নদী থেকে তার দোকানের দূরত্ব মাত্র ১০ গজ। দুই বছর আগেও তার দোকান যেখানে ছিলো এখন সেখানে অথৈ পানি। প্রায় মাঝ নদীতে।
নজরুল ইসলামের দাবি পাহাড়ি এলাকায় বালু কাটায় প্রতিবছরই নদী ভাঙছে। নদীর এ ভাঙন এতোই তীব্র মাত্র কয়ে বছরের মধ্যে প্রায় এক বর্গ কিলোমাটার আয়তনের বাজার এখন কয়েক গজে পরিণত করেছে।
বাদাঘাটা ইউনিয়নের রাজারগাঁও, ল্যামাশ্রম, জাঙ্গালহাট, লাউড়ের গড়া বাজার এ বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফলে এক সময় এ বাজারই ছিলো তাহিরপুর উপজেলার সবচাইতে জনবহুল বাজার। সপ্তাহে বুধবার ও শনিবার বাজার বসে। এছাড়া অন্যান্য দিনও দোকান খোলা থাকে।
বর্তমানে বাজারে ছোট আকারে চারটি খাবার হোটেল রয়েছে। মাছের বাজার রয়েছে, এছাড়া ওষুধের দোকান, মুদি দোকান, পানবাজার, কাঁচাবাজার সবই রয়েছে এ বাজারে। এখানে নেই কোনো ফরমালিনের ভয়। বাজারে গিয়েই দেখা যায় গাছ থেকে কলার কাধি কেটেই নিয়ে এসেছেন বাজারে। গ্রামের এ চিত্র এখন আর দেখা যায় না।
হাওর ও নদী থেকে মাছ ধরে সরাসরি বাজারে নিয়ে আসছেন জেলে। এখানে সবই বিষমুক্ত।
বিন্নাকুলি বাজারের মুদি দোকানদার শামীম বাংলানিউজকে জানান, আমারা বাধাঘাটা বাজার থেকে মালপত্র এনে এখানে বিক্রি করি। তবে বেশির ভাগ জিনিস বিভিন্ন কোম্পানির লোক এসে দিয়ে যায়। বাজারের চালও আসে বাদাঘাটা বাজার থেকে মিল মালিকদের মাধ্যমে।
যে যাদুকাটা নদীর তীরে বাজারটি অবস্থিত তারও রয়েছে একটি করুন ইতিহাস। জানা যায়, মেঘালয় পাহাড়ের এক নারী তার ছেলেকে কোলে নিয়ে মাছ কাটছিলেন। পাশের নদীর মুগ্ধতায় মাছ কাটতে কাটতে যাদু নামের সেই ছেলেটিকে কেটে ফেলে। এরপর থেকেই নদীর নাম হয় যাদুকাটা নদী। এটা স্থানীয়দের কাছে শোনা যায়।
তাহিরপুর সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ঘেঁষে বারেকটিলা ও পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি নদী যাদুকাটা। জেলা শহর সুনামগঞ্জ থেকে ২০ কিলোমিটার এবং তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে।
যাদুকাটা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেলা বারুণি মেলা। এ সময় সনাতন ধর্মের লোকজন যাদুকাটায় স্নান করার আশায় এসে জড়ো হন নদীর তীরের অদ্বৈত মহাপ্রভু চৈতন্যের নবগ্রামে। এরপাশেই মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষে রয়েছে হযরত শাহ শারফিন (রা.) মাজার শরীফ। এখানে বাংলা চৈত্র মাসে ওরশ শরিফ ও মেলা বসে। আর মাজারকে ঘিরে প্রচুর পর্যটক এ এলাকাতে আসা যাওয়া করে।
মতান্তরে শাহ আরেফিন (রা.) স্থানীদের ভাষায় শারফিনের মাজার ভারতের মেঘালয়ে পাহাড়ে। সেখানে যায় জায়গাটিতে তিনি থাকতেন যেখানে ওযু করতেন, সেসব স্থানে এখনো তার ছাপ রয়ে গেছে। তার ভক্তকুল এখানে তাকে স্মরণ করে এ মাজারে আসেন। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে এখানে বিশেষ আসর বসে থাকে। তার মুরিদরা নিজেদের খরচে সিন্নি করে ওরসে খাওয়ান বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
এসএম/এসএইচ
আরও পড়ুন...
**বাঙালিয়ানা খাবারে অতুলনীয় শ্রীমঙ্গলের ‘নূর ফুড্স’
**চা শ্রমিকদের স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জেরিন
** জেরিনের মায়ায় বাধা ১১শ’ চা শ্রমিকের জীবন
** ‘বাংলার আমাজন’ রাতারগুল
** মেঘ-পাহাড়-ঝরনা-নদীর মুগ্ধতা পানতুমাইয়ে
** বিছানাকান্দির জলের ওপর ‘জলপরী’
** ডুবে ডুবে ঘাসও খায় তারা
** ছয় মাস কৃষক, ছয় মাস বেকার
** বর্ষায় মাঝি, শুকনায় রাজমিস্ত্রি
** পানি নয়, সাতছড়ির ছড়ায় এখন শুধুই বালু
** প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য অনন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
** ভাড়াউড়া লেকের সৌন্দর্যে কালো মেঘ যোগাযোগ ব্যবস্থা
** লাউয়াছড়ায় ১৫ হেক্টরের মধ্যেই দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ
** লাউয়াছড়ায় অর্থকরী ফসলের আত্মকথা
** নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো