কানাইঘাট ঘুরে: সাদা মূলার মতো বাঁশের কোরল সবই প্রায় বিক্রি হয়ে গেলো সন্ধে নাগাদ। প্রতি ভাগা ৪০ টাকা দরে আজ প্রায় ৩শ’ টাকা বিকিয়েছেন চাষি আমিনুল।
প্রথমে ছোটো ছোটো টুকরা করে কেটে সেদ্ধ করে নিতে হবে। তারপর পলেস্টার কাপড়ে মুড়ে চিপতে হবে। রান্না করতে হবে মাছ বা মাংস দিয়ে। গরু মাংসে রান্নাই সবচেয়ে ভালো। মাছের মধ্যে স্বাদ খোলে রিটাতে। তবে মুরগি হলেও চলে যায়।
আমিনুলের পাশে সেই বিকেলেই চটের বস্তা আর পলিথিনে কোরল সাজিয়ে বসেছিলেন আরো ক’জন দোকানি। সবগুলোই ফ্যাসা বাঁশের। এই ফ্যাসা বাঁশ হয় পাহাড়ের গায়ে। চরাঞ্চলে হওয়া বুরুয়া বাঁশেরও এমন কোরল খাওয়া যায়। এ এলাকার মানুষের কাছে এটি নিত্য দিনের তরকারির মতোই।
ইসমাইল আকন নামে আর একজন বিক্রি করছেন ডে ফল। কেজি ৩০ টাকা। এই ডে ফল টক হিসেবে ব্যবহার করা হয় তরকারিতে।
গোটা বাজার জুড়েই এমন চেনা-অচেনা শাক-সবজি ফল। শাকের মধ্যে জলবাইঙ্গল শাক আর ঝাঁপা বিশেষভাবে নজর কাড়ে। আছে শালুক আর ভ্যাট এর মতো জলজ ফল।
আরো আছে সীমান্ত পেরিয়ে আসা ভারতের পাহাড়ের বিশেষ লেবু সাতকরা, লম্বা সাইজের মূলা, হাজার টাকা দামের বিশাল জারা লেবু। সবুজ প্রজাতির স্থানীয় এক ধরনের নাশপাতিও পাওয়া গেলো কানাইঘাট উপজেলা সদরের বাজারে।
বাঁশের তৈরি হরেক আকৃতির মাছ ধরা ও রাখার উপকরণ, চাল ঝাড়া আর ধোয়ার কুলা বানিয়ে এনেছে পাশের পালপাড়ার লোকেরা। মাথালকে এরা বলছে ছাতা। আছে মাটির তৈরি নানা তৈজসপত্রও। আরো আছে শীতল পাটি, নকশী পাটি, বাঁশের হাতপাখা।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বাজার চলে মাঝরাত অবধি। রাত দু’টোতেও এখানে বাজার সারতে আসেন স্থানীয়রা। মাঝেমধ্যে লোভাছড়া আর সুরমার ঢল বাজার ডুবিয়ে দেয় বলে রাস্তাগুলো সব ঢালাই কংক্রিটের। বাজারের ঘেঁষে উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে গেছে সুরমা নদী।
ওই নদীর ঘাটে নাকি কানাই নামে এক মাঝি বাস করতো এক সময়। তার নাম থেকেই এই কানাইঘাট নাম। তবে জৈন্তাপুর রাজ দরবারের প্রভাবশালী ব্যক্তি কানাই চৌধুরীর নাম থেকেও এই কানাই ঘাট নাম হয়ে থাকতে বলে ধারণা প্রচলিত আছে।
প্রাচীণকালে কানাইঘাট ছিলো স্বাধীন সার্বভৌম জৈন্তা রাজ্যের অংশ। তাই আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে এখানকার শিক্ষা-সংস্কৃতি একটু আলাদা। পরে সুরমা নদীর তীরে এক সময় মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়।
উপমহাদেশ দখলের প্রায় ৯০ বছর পর কানাইঘাটসহ জৈন্তা রাজ্য করায়ত্ত করে ব্রিটিশরা। ১৮৩৬ সালে কানাইঘাটকে ন্যস্ত করা হয় সিলেট জেলা কালেক্টরেটের অধীনে। ১৮৪১ সালে কানাইঘাটের কাছে মুলাগুল পরগণার লক্ষ্মীপুর মৌজার ঝর্ণা টিলায় থানা স্থাপন করে ব্রিটিশ সরকার। ১৮৮০ সালে থানা ও অন্যন্য প্রশাসনিক অফিস স্থানান্তরিত হয়ে পর্যায়ক্রমে বর্তমান কানাইঘাট সদর গড়ে ওঠে।
এই কানাইঘাটের অবস্থান সিলেট জেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে। ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় শ্রেণি উত্তর দিকে বেড় দিয়ে রেখেছে কানাইঘাটকে। এছাড়া পশ্চিমে জৈন্তাপুর, দক্ষিণে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার এবং পূর্বে জকিগঞ্জ উপজেলা।
বর্তমান বাজারের দু/আ্ড়াইশ’ মিটার দক্ষিণে কানাইঘাট মাদ্রাসা। ১৯২২ সালের ২৩ মার্চ ওখানকার বার্ষিক জলসায় হামলা চালায় ব্রিটিশ পুলিশ। কানাইঘাটের লড়াই হিসেবে পরিচিত ওই ঘটনায় নিহত হন ৬ জন।
সিলেট শহর থেকে এখানে আসতে হয় সিলেট-জাফলং সড়কের দরবস্তু বাজার থেকে কানাইঘাট সড়কে নেমে। ভাঙাচুরা রাস্তায় ১৭ কিলোমিটার পেরুতেই চলে যায় ঘণ্টা দেড়েক সময়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
জেডএম/
**বৃষ্টির দেশ লালাখালে আকাশ ভাঙা বর্ষা
**রাজবাড়ি ভেঙ্গে বাজার, পুকুর ভরে বাড়ি
**লাউড়ের গড়ে বৃষ্টির বাগড়া
** বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামে
** জগমোহিনীদের বিথঙ্গল আখড়ায়
** হারিয়ে যাচ্ছেন হবিগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা
**সাত শতাব্দীর সাক্ষী শঙ্করপাশা মসজিদ
**চুন ব্যবসায়ীর ঘাট থেকে মুক্তিযুদ্ধের সদর দপ্তরে
** চুরি গেছে মুড়ারবন্দরের শিলালিপি
**চেনা-অচেনা বন্য প্রাণীদের সঙ্গে লুকোচুরি
**বেটা-বেটির পুঞ্জি ঘুরে বীজহীন বাগানে
** রাত দুপুরে গভীর বনে ভয়ের সঙ্গে পাঞ্জা
** বন্যপ্রাণির বুনো গন্ধে মাতাল লাউয়াছড়ার রাত
**তপ্ত জলে মিশে আছে নির্মাইয়ের কান্না
** চায়ের রাজধানী সবুজ শীতল শ্রীমঙ্গলে
**৪ ঘণ্টায় চায়ের দেশে
**ট্রেন চলেছে চায়ের দেশে