লাউয়াছড়া বন ঘুরে: গতি নির্ধারক পোস্টে বড় করে লেখা ‘সর্বোচ্চ গতি ২০ কিলোমিটার। অথচ লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া সড়কটিতে কোনো যানবাহনই চলে না ৫০-৬০ কিলোমিটার গতির নিচে।
এতে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে এ বনের বিপন্ন সব প্রাণী। বিশেষ করে সরীসৃপ। এ নিয়ে বন বিভাগ কিছু পদক্ষেপ নিলেও কোনো মাথা ব্যথা নেই সড়ক বিভাগের।
শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ উপজেলায় ঢোকা সড়কটির ৫-৬ কিলোমিটার পড়েছে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন উল্লুক, চশমাপরা বানর, লজ্জাবতী বানর, সাপ, গন্ধগোকুলসহ বিভিন্ন প্রাণীঘেরা এ বনে। বন বিভাগ সচেতনতা সৃষ্টিতে নানা পদক্ষেপ নিলেও কাজে আসছে না লোকোবলের অভাব ও নানা আইন-কাননের ফ্যাকড়ায়। আর সড়ক বিভাগ উদাসীন একেবারেই। তারা গতির বিষয়টি দূরে থাক সড়কে স্পিডব্রেকারও দিতে নারাজ।
জানকিছড়া বিটের একটি মোড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেলো বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রো সবই চলছে সাঁই সাঁই গতিতে। আর কোনো প্রাণী সামনে এসে পড়লে তাকে কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব নয়। রাস্তা পারাপারারের সময় এদের গতিও থাকে কম। কারণ চারপাশের শব্দে ভয় পায় প্রাণীরা।
জানকিছড়া বিট থেকে লাউয়াছড়ার দিকে যেতে একটু এগিয়ে দেখা গেলো একদল বানর সড়কের পাশে বসে আছে রাস্তা পারাপারের জন্য। কিন্তু একের পর এক যানবাহন চলায় পার হতে পারছে না তারা। পরে বাধ্য হয়ে গাছের উঁচু গাছপালার ডাল বেয়ে পার হলো কেউ কেউ। সঙ্গে থাকা রেঞ্জ অফিসার রেজাউলি করিম বললেন, এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখেন এরা রাস্তা পার হতে পারবে না। এটা এদের স্বাভাবিক জীবন না। বনের ভিতর দিয়ে না গিয়ে রাস্তাটি অন্যদিক দিয়ে তো ঘুরিয়ে নেওয়া যায়। এতে বাঁচতো প্রাণীরা।
এর আগেও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। সেদিন বানরগুলো রাস্তায় আমাদের দেখে রীতিমতো ভেংচি কেটে তেড়ে এসে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। হর্ন বাজানো নিষেধ থাকলেও মানা হয় না সেটিও।
এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গতি নির্দেশক পোস্টগুলো বন বিভাগই বসিয়েছে। সড়ক বিভাগ তো গতি নিয়ন্ত্রক বসাতেও নারাজ। আমরা মাঝে মধ্যে চেষ্টা করি সচেতনতা সৃষ্টির। রাতে প্রাণীরা বেশি রাস্তা পার হয়। মাঝে মধ্যে রাতে আমরা গাড়ি থামিয়ে মানুষকে বোঝাই। এই লোকবল নিয়ে আমরা আর কি করতে পারি?
সড়ক বিভাগের প্রতি বিমুখ হয়ে সচেতনতা বাড়াতে ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বন বিভাগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কয়েকটি পদক্ষেপ প্রাণী মৃত্যুর হার কমাতে পারে। রাত ১০টার পর যদি এ রুটে যান চলাচল কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলেও প্রাণীর মৃত্যুহার কিছুটা কমবে। এছাড়া ২-৩ কিলোমিটার ঘুরে নূরজাহান রোড ধরে কমলগঞ্জে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে লাউয়াছড়া রুট ব্যবহার না করলেও চলে।
গত সাত-আট মাসে প্রায় ৫০টি বিরল লজ্জাবতী বানর, সাপ, মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যাওয়ার রেকর্ড আছে বন বিভাগের কাছে। এছাড়া সবগুলোর খবর পান না বলেও জানালেন তবিবুর রহমান।
সরেজমিন লাউয়াছড়ার সড়কে একটি বিষধর সবুজবোড়া সাপকে দেখা যায় রাস্তার পাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে। কোনোভাবেই সে রাস্তা পার হতে সাহস পাচ্ছিলো না। আবার কাছে গেলেও সরছিলো না বনের ভিতর। পরে সঙ্গে থাকা বিট অফিসার লাঠি দিয়ে সাপটিকে রাস্তা পার করে দেন। এমন ঘটনা সবসময়ই ঘটে বলে জানান তিনি। এদের মধ্যেই কেউ না কেউ প্রাণ হারায় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে।
অনেক বিপন্ন প্রাণীর আবাসস্থল লাউয়াছড়া বনে এ সড়কটি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলে এভাবে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে হারিয়ে যাবে অনেক প্রজাতি।
**এক লেবুর দাম হাজার টাকা!
** সবুজের বুকে মোহময় শার্ফিন
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৪ (শেষ পর্ব)
** ছবিতে হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ি
** ‘কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার’
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৩
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-২
** হাওরের হাঁসে হাসি
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-১
** মায়ার বাঁধনে মায়া, সঙ্গী জেমস-মনা
** এবার আসছে গৌরাঙ্গের সাত লেয়ারের জুস
** সবুজের বুক চিরে চেনা নতুন শ্রীমঙ্গল
** নাগা মরিচের আরও ছবি
** সাদা-কালো নাগা মরিচে গিনেস রেকর্ডের ঝাল
** তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
** রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
** পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
** চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৬
এএ