শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: বাংলাদেশের মণিপুরী সম্প্রদায়ের ৯৫ শতাংশ নারী তাঁতশিল্পে জড়িত। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পে আগ্রহ হারাচ্ছে মণিপুরী তরুণীরা।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার রামনগর, মাধবপুর, মঙ্গলপুর, রানীরবাজার, কালারায়বিল, ভানুগাছ, বালিগাঁও, ইসলামপুর, তিলকপুর, ঘোড়ামারা, কোনাগাঁও, ছনগাঁও, তেতইগাঁও, হকতিয়ার খোলা, জালালপুর, কেওয়ালীঘাট, ভানুবিল, বন্দেরগাঁও, কান্দিগাঁও, ছয়চিরী, ভাণ্ডারীগাঁও, গঙ্গানগর, মকাবিল, গুলেরহাওর, টিলাগাঁও, মাঝেরগাঁও, নয়াপত্তন, হীরামতি গ্রামসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের অধিকাংশ নারী তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। মণিপুরী নারীদের তৈরি বাহারি পোশাকের ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা ও আকর্ষণও ব্যাপক। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নতুর প্রজন্মের নারীদের তাঁতশিল্পের প্রতি অনীহা ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকেই বিপন্ন করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন আগের প্রজন্ম।
কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁওয়ের তাঁতশিল্পী সৌদামিনি শর্মা (৪৩) জানান, আস্তে আস্তে তাঁতশিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে মণিপুরী তরুণীরা। যারা শিক্ষার্থী তারা পড়াশোনা শেষে চাকরি বা অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হতে চায়। তাঁতশিল্পে ব্যবহৃত সুতার মূল্য বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত মুনাফা না পাওয়াকেও তাঁতশিল্পে অনীহার কারণ বলেও জানান তিনি।
শুধু সৌদামিনি নয় একই রকম তথ্য পাওয়া যায় আরও অনেক মণিপুরী নারীর কাছ থেকেও। তেতইগাঁওয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী লইদাম শর্মার সঙ্গে আলাপে স্পষ্ট হয়ে ওঠে একই চিত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারের অন্যদের সঙ্গে তাঁতের পোশাক তৈরিতে সহায়তা করেন লইদাম। শিক্ষাজীবন শেষে তাঁতশিল্পে যুক্ত হবেন কি না জানতে চাইলে জোর দিয়েই নেতিবাচক উত্তর দেন তিনি।
পড়ালেখা শেষে স্বাবলম্বী হতে চান বলেও জানান লইদাম। তবে বংশপরম্পরায় চলে আসা পেশাটিকে বাতিল করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান অন্য কোনো পেশায়। সরকারি চাকরিই তার প্রথম পছন্দ। সরকারি চাকরি না হলে বেসরকারি চাকরি করবেন বলেও জানান তিনি।
এভাবে যদি নতুন প্রজন্মে নারীরা সবাই তাঁতশিল্পের অনাগ্রহী হয়ে ওঠে তবে শিল্পটি টিকবে কীভাবে জানতে চাইলে লইদাম বলেন, যেসব মণিপুরী ছাত্রীরা শিক্ষাজীবন শেষ করবে না অথবা দ্রুতই পরিবার বিয়ে দিয়ে দেবে তারা নিজেদের পরিবারকে সহায়তার জন্য তাঁতশিল্পে জড়িত থাকবে।
সন্তানরা তাঁতশিল্পে জড়িত থাকুক চান কি না? এ প্রসঙ্গেও কথা হয় লইদাম শর্মার কাকি সৌদামিনি শর্মার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পেশায় জড়িত থাকুক- এই চাই। অন্যের জন্য পোশাক তৈরি না করুক, তৈরি পোশাক বাজারে বিক্রি না করুক, অন্তত নিজেদের গায়ের পোশাক তারা নিজেরা তৈরি করে পড়ুক।
মণিপুরী জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে সচেতন মধ্যবয়সী এই নারী তাঁতশিল্পের আরও নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই শিল্পের অনেক কদর দেশে ও বিদেশে রয়েছে। মণিপুরী তাঁতের পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে কিন্তু শিল্পকে এগিয়ে নিতে নেই যথাযথ উদ্যোগ। প্রয়োজনীয় সুতা না পাওয়া ও দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁতের কাপড় বুননে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
অন্যদিকে আশানুরূপ সুতা না পাওয়ায় মানসম্মত কাপড় তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মণিপুরী তাঁত ব্যবসায়ীরা। মণিপুরী তাঁতশিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রসার ও তাঁতীদের রক্ষার জন্য সুদের হার কমিয়ে প্রকৃত তাঁতীদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার দাবিও জানান তারা।
** সিলেটের সাতকড়া সিলেটের নয়
** রাজবাড়ী নয় যেন আস্তাকুঁড়ে
*** সবুজ পাতা হয়ে যায় কালো কালো চা
** লোভাছড়ায় বাড়তি পাওনা ঝুলন্ত ব্রিজ
** রাতের ক্বিন ব্রিজে ‘ঝাল কম, ঝাল বেশি’
**উত্তাল হাকালুকির ঢেউয়ে ঢেউয়ে
**ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্মৃতির ধূলো
**টিলার ওপর দৃষ্টিনন্দন ফ্রুটস ভ্যালি
**পোস্টার-ব্যানারে ঢাকা এম এ রব চত্বরের নামফলক
** শীতল বনের খোঁজে বোকা বনে যাওয়া
**দিনের যাত্রী আসনই রাতের বিছানা
বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৬
এমজেএফ/